কাজই শেষ হয়নি, জলপ্রকল্পের উদ্বোধন ঘিরে প্রশ্ন রামপুরহাটে
কলের জন্য জল। পুরসভা এলাকায় পরিস্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে, মঙ্গলবার রামপুরহাটে জল প্রকল্পের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর জন্য তাঁকে অবশ্য রামপুরহাটে আসতে হয়নি। ইলামবাজারে জনসভা থেকেই তিনি ওই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন।
তবে এখনই যে জল মিলবে তা নয়। কেন না, রামপুরহাট পুরসভার সব ওয়ার্ডে পাইপ লাইন বসানোর কাজ এখনও শেষ হয়নি। কাজ বাকি রয়েছে মেনে নিলেও তৃণমূল পরিচালিত রামপুরহাটের পুরপ্রধান অশ্বিনী তিওয়ারি দাবি করেছেন, একশো শতাংশ কাজ হয়ে গিয়েছে। তা হলেও কাজ সম্পূর্ণ হল কী করে? তা নিয়ে ইতিমধ্যে রাজনৈতিক মহলে উঠছে নানান প্রশ্ন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পুরসভা এলাকায় বাড়ি বাড়ি জল পৌঁছে দিতে ২০০৬ সালে এই প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। এর জন্য কেন্দ্র দেবে ৮০ শতাংশ, রাজ্য ১৫ শতাংশ এবং পুরসভা ৫ শতাংশ টাকা দেবে। ২০০৭ সালে প্রকল্প বাবদ ৭ কোটি ৫১ লক্ষ ৪৬ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়। ওই বছর ২৬ এপ্রিল তৎকালীন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য রামপুরহাটে এসে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০৯ সালের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। কিন্তু জল প্রকল্পের কাজ চলাকালীন প্রথমে সিপিএম, পরে কংগ্রেস এবং তারও পরে তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতায় আসে। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে কাজ হয়েও এখনও বাড়িতে বাড়িতে জল পৌঁছয়নি। চাহিদা কবে পুরণ হবে? প্রকল্পের দু-দু’বার উদ্বোধন হওয়ার পরে পুরবাসী থেকে কাউন্সিলর সকলেই প্রশ্ন তুলছেন।
পাইপ লাইনের কাজ বাকি। তবে প্রস্তুত জলট্যাঙ্ক। —নিজস্ব চিত্র।
পুরসভার বিরোধী দলের নেতা তথা ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর সঞ্জীব মল্লিকের দাবি, “২০০৭ সালে পুরসভায় আমরা ক্ষমতায় থাকার সময় কাজটি শুরু করেছিলাম। ২০০৯ সালে প্রায় ৯০ শতাংশ কাজ করার পরে আমাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করে বিরোধীরা ক্ষমতায় আসে। বিশেষ করে তৃণমূল পুরসভার ক্ষমতায় আসার পরে, প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ টাকা নিয়ম বর্হিভূত ভাবে অন্য খাতে খরচ করে। পুরসভার ৫৮ জন অস্থায়ী কর্মীর বেতন বাড়িয়ে এবং অন্য খাতে প্রায় ২ কোটি টাকা খরচ করে জল প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সময় নিয়েছে।” সঞ্জীববাবুর অভিযোগ, “পুরসভার অডিট রিপোর্টে বেনিয়মের উল্লেখ রয়েছে।” ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সিপিএম কাউন্সিলর অসীম মজুমদারের প্রশ্ন, “আমার ওয়ার্ডের দিঘিরপাড় এলাকা, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের আদিবাসী পাড়া-সহ ৫, ৭, ৮, ৯, ১৫ ওয়ার্ডগুলির বিস্তির্ণ এলাকায় এখনও পাইপ লাইনের কাজ শেষ হয়নি। অথচ পুরসভা কী করে সকলের জন্য জল দেওয়া হল দাবি করছে।”
শুধু সিপিএম নয়, এই উদ্বোধন প্রক্রিয়াকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি কাউন্সিলররাও। ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সুর্পণা চৌধুরীর কটাক্ষ, “বাস্তব অবস্থা না দেখে আমলাদের কথা শুনে, রামপুরহাট ছাড়িয়ে সুদূর ইলামবাজার থেকে তড়িঘড়ি উদ্বোধন হলে পুরবাসীর সমস্যা দূর করা যায় না।” আর এক বিজেপি কাউন্সিলর মাধব সর্দারের প্রশ্ন, “জাতীয় সড়কের ধারে এখনও জল প্রকল্পের পাইপ পৌঁছায়নি। তা হলে তড়িঘড়ি উদ্বোধন করে কী লাভ হল?” জাতীয় সড়কের ধারে ৯ নম্বর ওয়ার্ড। ওই ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর পুস্পিতা মণ্ডল অবশ্য বলছেন, “প্রকল্প চালু হওয়ার পরে আমার ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জল পেতে অসুবিধা হবে না।” পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মি বলেন, “জল প্রকল্পের উদ্বোধন বিষয়ে বিশদে না জেনে আমি মন্তব্য করতে চাই না।”
এ দিকে, যাবতীয় অভিযোগের বিষয়ে পুরপ্রধান বলেন, “কিছু এলাকায় পাইপ লাইনের সংযোগ বাকি আছে। আবার নতুন নতুন করে এলাকা বাড়ছে একথাও ঠিক।” তাঁর দাবি, “তবে জল প্রকল্পের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল তার ১০০ শতাংশ কাজ আমরা শেষ করেছি।” সংশ্লিষ্ট দফতরের বর্ধমান ও বীরভূম জেলার নির্বাহী বাস্তুকার দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “জেএনইউআরএম প্রকল্পের অধীন ইউআইডিএসএসএমটির প্রকল্পের যা পরিকল্পনা ছিল, সেই মতো কাজ হয়েছে। নতুন প্রকল্প অনুযায়ী নতুন এলাকায় পরবর্তীতে কাজ হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.