বাঙালি কন্যা মহাভারতের গয়না
কাশীরাম দাস।
কালীপ্রসন্ন সিংহ। রাজশেখর বসু।
বেঁচে থাকলে মহাভারতের এই তিন বাংলা অনুবাদক খুশি না হয়ে পারতেন না।
কারণ নতুন ‘মহাভারত’ মেগা সিরিয়ালের প্রায় শ’খানেক চরিত্রকে গয়না দিয়ে সাজাচ্ছেন এই বাংলার সোনার কারিগরেরাই। আর সেই কুড়ি জন কারিগরের নেপথ্যে নিজের কল্পনা আর উদ্ভাবনী শক্তি মিশিয়ে একের পর এক গয়নার নকশা তৈরি করে চলেছেন এই কলকাতারই বিখ্যাত স্বর্ণ ও রত্নশিল্পীঅনন্যা চৌধুরী।
গয়নার নকশার মূল পরিকল্পনায় পরামর্শ দিচ্ছেন সেরা শিল্পসৃষ্টির জন্য দু’বার জাতীয় পুরস্কার ও একবার অস্কার পুরস্কারপ্রাপ্ত ভানু আথাইয়া। তিনি রিচার্ড অ্যাটেনবরোর ‘গাঁধী’ ছবির কস্টিউম ডিজাইনার ছিলেন। যদিও সরাসরি মুম্বই থেকে রোজকার কস্টিউম নকশা সংক্রান্ত কাজগুলো তত্ত্বাবধান করছেন নিধি যশ। তিনিই গয়নার খসড়া স্কেচ করে, কে কোন গয়না পরবেন জানিয়ে অনন্যাকে মেলে নোটস পাঠাচ্ছেন। হাতের কাছে এই সব নথিপত্র, ডিজাইনের আদল থাকা সত্ত্বেও গত দেড় বছর ধরে টানা চিন্তাভাবনা-মনন কাজে লাগিয়ে অনন্যাকে গয়নার নকশা করে যেতে হচ্ছে।
সালঙ্কারা কুন্তী।
বললেন, “আমাকে প্রাচীন ভারতের অলঙ্কারের ইতিহাস নিয়ে অনেক বই নাড়াচাড়া করতে হয়েছে।” কী কারণে মহাভারত প্রোডাকশন কোম্পানি অনন্যা ও তাঁর প্রতিষ্ঠানকে বেছে নিল অলঙ্কার নির্মাতা হিসেবে? উত্তরে বলিউড কস্টিউম ডিজাইনার নিধি যশ বললেন,“বিশাল যজ্ঞের এই কাজ অনন্যা একা হাতে তুলে দিতে পারবেন।
ওঁর কারিগরেরা প্রচণ্ড দক্ষ। ট্র্যাডিশন সম্পর্কে অনন্যা ওয়াকিবহাল। তা ছাড়া বিভিন্ন ছবিতে এর আগে ডিজাইনার ছিলেন তিনি। পর্দায় কোন গয়না ভাল লাগবে সেটা বোঝেন।” অনন্যা ক্যাটালগ খুলে দেখাতে লাগলেন গয়নার ডিজাইন।
এই মুহূর্তে মেগা সিরিয়ালে দেখানো হচ্ছে কুরু-পাণ্ডবের শৈশবকাল। তাঁদের গায়ের গয়নাও দেখার মতো। বালক ভীম যেহেতু ওজনে ভারী এবং শক্তিশালী তাই তাঁর গয়নায় রয়েছে হাতির নকশা। শকুনি ক্ষীরের মধ্যে বিষ মিশিয়ে তাঁকে হত্যা করে জলে ভাসিয়ে দেন।
দুর্যোধনের গলায় শক্তপোক্ত শেকল।
ভীমের যে মৃত্যু হয়েছে তার প্রমাণস্বরূপ শকুনি রাজদরবারে নিয়ে আসেন হাতির নকশা করা বাজুবন্ধ, হার, কোমরবন্ধ। কিন্তু নাগরাজ ভীমকে বাঁচিয়ে তুলে ফিরিয়ে দেন রাজপুরীতে। অনন্যা বললেন, “প্রিমিটিভ প্যাটার্নের গয়নাই আমরা বেশি তৈরি করেছি।” যেমন ধৃতরাষ্ট্রের গলার সীতাহারে রয়েছে পাটি আর খামি দেওয়া সাবেক নকশা। অন্য দিকে যুধিষ্ঠির যেহেতু সৎ মানুষ, তাই ওঁকে পরানো হয়েছে মন্দিরের মোটিফের গয়না, যার মধ্যে এক ধরনের দৈব পবিত্রতা আছে। সেকালের রাজারাজড়ারা বিষের কৌটো দিয়ে তৈরি আংটি আঙুলে পরতেন। এমন আংটিও বানিয়েছি আমরা।”
চরিত্রের ইমেজ অনুসারে গয়না বানাতে গিয়ে রুক্ষ, রূঢ় স্বভাব দুর্যোধনের জন্য তৈরি হয়েছে শক্ত জালের গয়না। সেই সঙ্গে থাকছে তার স্বভাবের হিংস্রতা বোঝাতে সিংহ মোটিফের হার।
অনন্যা চৌধুরী
(অলঙ্কার শিল্পী)
রুক্ষ, রূঢ় স্বভাব দুর্যোধনের জন্য তৈরি হয়েছে শক্ত জালের
গয়না। দুঃশাসনের হিংস্রতার প্রতীক সিংহ মোটিফের হার।
ও বাজুবন্ধে থাকছে সাপের মোটিফ। গলায় যে চেনের মতো হারটি থাকছে, সেটিও সাপের মতো হিলহিল করে নড়বে। এমন ভাবে তৈরি। এ সব গয়নাই তৈরি হয়েছে রুপো আর তামার ওপর চব্বিশ ক্যারাট সোনার জলের প্রলেপ দিয়ে।
আর দ্রৌপদী? তাঁর গয়না কেমন হবে? অনন্যা হেসে বললেন, “অঙ্গবস্ত্রের মতো দু’লহরী হার নেমে আসবে দ্রৌপদীর গলা থেকে বুক অবধি।” কখনও খাজুরাহোর মন্দির গাত্রের মূর্তির অলঙ্করণ, কখনও বা অজন্তা ইলোরার পাথরের মূর্তি বা চিত্রের অনুকরণে পশুপাখি, ফুলের নকশা, কখনও বা মন্দিরের কারুকাজই মেগা মহাভারতের গয়নার সারাংশ হয়ে উঠেছে। “আমরা কিন্তু পাতার নকশা একেবারেই ব্যবহার করিনি। কারণ পাতার ডিজাইন ব্যবহার হয় ইতালিয়ান গয়নায়,” বললেন অনন্যা।
এই সব গয়নার জন্য প্রযোজক সংস্থার কাছ থেকে কোনও পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না অনন্যা। বললেন, “ভারতে এত গয়না নির্মাতা থাকতে আমাকে যখন ওঁরা বেছেছেন সেটাই একটা বড় সম্মান। টাকাপয়সা দিয়ে কী হবে? মহাভারত নিয়ে কাজ করা মানে তো শেকড়ে ফেরা।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.