কেটেছে দু’মাস
গ্রাম উন্নয়ন সমিতি তৈরি হবে কবে, ধোঁয়াশা পঞ্চায়েতে
তুন পঞ্চায়েত গঠন তো হল। গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়া হবে কি?
একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিটি সংসদে একটি করে গ্রামোন্নয়ন সমিতি তৈরি হয়। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর নতুন করে গ্রাম উন্নয়ন সমিতিও তৈরি হয়। তার জন্য উদ্যোগ নেওয়ার কথা প্রধানদেরই। নভেম্বর-ডিসেম্বরেই গ্রাম উন্নয়ন সমিতি তৈরি হওয়ার কথা। কিন্তু সদ্য নির্বাচিত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির কাছে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়ার ব্যাপারে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি। একটি গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব বলেন, “অন্যান্য বার এই সময়ে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি তৈরির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। এ বার কী হবে, বুঝতে পারছি না।”
এই বিলম্ব দেখে প্রাক্তন পঞ্চায়েতমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রের অনুমান, গ্রাম উন্নয়ন সমিতি শেষ পর্যন্ত গড়া হবে না। তিনি বলেন, “উন্নয়নের কাজকে তৃণমূল স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়েছিলাম। বর্তমান সরকারের এ ব্যাপারে কোনও সদিচ্ছা নেই। জেলায় জেলায় আমাদের দলের পঞ্চায়েত সম্মেলনগুলিতে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়ার দাবি জানানো হচ্ছে। ”
রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছেন, “পুরোন গ্রাম উন্নয়ন সমিতিগুলি ভেঙে নতুন করে তা গড়ে তোলা হবে।” কিন্তু কেন এখনও সে বিষয়ে নির্দেশ যায়নি, আগের নিয়মেই এ বারও সমিতি গঠন হবে কি না, সে বিষয়ে তিনি কোনও আলোকপাত করেননি। ফলে ধোঁয়াশা রয়েই গিয়েছে।
কী কাজ গ্রাম উন্নয়ন সমিতির? গ্রামবাসীদের নিয়ে তৈরি এই প্রতিনিধিত্বমূলক কমিটি গ্রাম সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি কার্যকর করার চেষ্টা করে। এর সদস্যরা গ্রামবাসীর হয়ে পঞ্চায়েতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। আবার পঞ্চায়েতের কাজকর্মগুলির বিষয়েও গ্রামবাসীর মধ্যে প্রচার করেন। কুড়ি হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করার ক্ষমতাও আছে এই সমিতির। এ ছাড়া উন্নয়নের পরিকল্পনা তৈরি এবং গ্রামের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে তা রূপায়ণ করার দায়িত্বও দেওয় হয়েছে সমিতিকে।
রাজ্যে পঞ্চায়েত আইন সংশোধন করে ২০০৪ সাল থেকে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গঠন করা হয়। গোড়ায় গ্রাম সংসদের সভায় নির্বাচনের মাধ্যমে সমিতি গড়া হত। কিন্তু কয়েক বছর এ ভাবে চলার পরে দেখা যায়, গ্রাম সংসদে যে রাজনৈতিক দলের প্রাধান্য তারাই জোর করে গ্রামোন্নয়ন সমিতি গড়ে নিচ্ছে, নির্বাচন কেন্দ্র করে গণ্ডগোল ঘটছে। তা এড়াতে ২০০৭ সাল থেকে নিয়ম করা হয়, মনোনয়নের মাধ্যমে গ্রামোন্নয়ন সমিতি গঠন করতে হবে। সংসদ থেকে যিনি পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছেন সমিতিতে তাঁর পাশাপাশি জায়গা দিতে হবে তাঁকেও, যিনি নিকটতম ভোটে হেরেছেন। এ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিত্ব সমিতিতে রাখা হয়। সদস্য সংখ্যা ১৬ জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ।
গ্রাম উন্নয়ন সমিতিকে নিয়ে প্রথম থেকে বিতর্ক ছিল। বহু গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধানরা গ্রাম উন্নয়ন সমিতিকে কাজ করতে দেননি। রাজ্য পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তা জানান, প্রধানদের আশঙ্কা ছিল গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গ্রাম পঞ্চায়েতের সমান্তরাল ক্ষমতা ভোগ করছে। পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে তাঁর সংসদের গ্রাম উন্নয়ন সচিবের রেষারেষি তৈরি হয়েছে। সরকারি কর্মীদের একাংশও আপত্তি তোলেন, সমিতির কাজকর্মের তদারকি বা টাকা খরচের হিসাব পরীক্ষা করা কঠিন। তার ফলে গোড়ায় সমিতির নিজস্ব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা থাকলেও, পরে সেই অনুমোদন বাতিল হয়ে যায়। তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতার আসার পরে কয়েকজন জেলাশাসক পঞ্চায়েত দফতরের সঙ্গে বৈঠক চলাকালীন গ্রাম উন্নয়ন সমিতি তুলে দেওয়ার পর্যন্ত পরামর্শ দেন।
আবার যেখানে গ্রাম উন্নয়ন সক্রিয় হয়ে উঠেছে, সেখানে অপ্রত্যাশিত ভাল কাজ করেছে, এমন দৃষ্টান্তও কম নয়। তার আন্দাজ দিতে পঞ্চায়েত দফতরের এক উচ্চপদস্থ কর্তা বলেন, “সাধারণত ১০০ টাকায় যেখানে উন্নয়নের কাজ হয় ৫০-৬০ টাকার, গ্রাম উন্নয়ন সমিতি সক্রিয় হলে সেখানে ১২০ টাকার কাজ হয়।” বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমিতির সদস্যরা গ্রামের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে, কখনও চাঁদা তুলে, কখনও স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে, এলাকার নানা কাজ করেছেন। অনেক সময়েই দেখা গিয়েছে, সমিতির সদস্যদের নজরদারি দুর্নীতি রুখে দিয়েছে। এ সব কারণেও পঞ্চায়েত সদস্য ও রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গ্রাম উন্নয়ন সমিতি অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে, মনে করেন প্রশাসনের একাংশ।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই সমিতির ভবিষ্যৎ নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দিয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচন কেটে যাওয়ার পরে প্রায় দু’মাস কেটে গেলেও, গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়ার ব্যাপারে পঞ্চায়েত দফতর থেকে এখনও কোনও নির্দেশ না-আসায় এ ব্যাপারে ধন্দ দেখা গিয়েছে। সূর্যকান্তবাবু বলেন, “যেখানে পঞ্চায়েত নির্বাচনকেই বিরোধীশূন্য করার চেষ্টা হয়েছে, সেখানে বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে এই সরকার গ্রামোন্নয়ন সমিতি গড়বে, তা তো সোনার পাথরবাটির মতো।” সুব্রতবাবু পাল্টা বলেন, “পঞ্চায়েতের কাজকে আরও জনমুখী করতে আমাদের সরকার বদ্ধ পরিকর। গ্রাম উন্নয়ন সমিতি গড়া ছাড়াও সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.