তেলের পরিমাপে কারচুপি করার অভিযোগে তেতে উঠল পেট্রোল পাম্প চত্বর। জনতার বিক্ষোভ সামলাতে গিয়ে লাঠি চালাল পুলিশ। আটক করা হল পাম্পের মালিককে। বাঁকুড়া শহরের মাচানতলা তেমাথা মোড়ের একটি পেট্রোল পাম্পের ঘটনা। আপাতত পাম্পটি বন্ধ রেখে ঘটনার তদন্তে নেমেছে জেলা পুলিশ-প্রশাসন।
এই পেট্রোল পাম্পটি শহরের অন্যতম জনপ্রিয় পাম্প। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এখানে পেট্রোল-ডিজেল নিতে আসেন। রবিবার রাতে বাঁকুড়া সদর থানার শালবনি এলাকার বাসিন্দা স্বদেশ মণ্ডল ওই পাম্পে এসে তাঁর মোটরবাইকে ২০০ টাকার পেট্রোল ভরতে বলেন। তাঁর অভিযোগ, “তেল দেওয়ার সময় লক্ষ করলাম মিটারে তেলের পরিমাপের অঙ্ক বেড়েই যাচ্ছে, কিন্তু পাইপ দিয়ে তেল পড়ছে না। ২০০ টাকার তেল ভরার পরেও গাড়িতে তেলের কাঁটা খুব একটা উঠল না।” এর পরই তিনি পেট্রোল পাম্পের কর্মীদের কাছে সঠিক পরিমাণ তেল দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চান।
স্বদেশবাবু এই অভিযোগ তোলার পর পরই আরও কয়েক জন গ্রাহক তাঁদেরও তেল কম দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করতে থাকেন। পাম্পের কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা শুরু হয়। বেগতিক দেখে পাম্পের এক পদস্থ কর্মী স্বদেশবাবুর টাকা ফেরত দিতে চেয়ে তাঁকে ঘটনাস্থল ছেড়ে চলে যেতে বলেন। স্বদেশবাবু অবশ্য তা মানেননি। |
উল্টে পাঁচ লিটারের বোতলে তেল ভরে তেলের পরিমাপ সঠিক কি না, তা প্রমাণ করতে বলেন। স্বদেশবাবুর কথায়, “বিক্ষোভের মুখে পড়ে পাঁচ লিটার বোতলে তেল ভরতে রাজি হয় পাম্প কর্তৃপক্ষ। দেখা যায় প্রায় আধা লিটার তেল কম বের হয়েছে নজল থেকে।”
এ দিকে, বিক্ষোভের খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ বাহিনী নিয়ে পাম্প চত্বরে হাজির হন ডিএসপি (আইনশৃঙ্খলা) কৃশানু রায়। পাম্পের মালিকের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে তাঁকে গ্রেফতারের দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা. পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। উপস্থিত পুলিশ অফিসারদের হাতে পাম্পের মালিকের বিরুদ্ধে একটি গণস্বাক্ষর সংবলিত অভিযোগপত্রও তুলে দেওয়া হয়। রাতেই সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ওই পাম্পের মালিক রমেশ ড্রোলিয়া ও রাজেশ ড্রোলিয়াকে পুলিশ আটক করে। পাম্প চত্বরে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়।
ডিএসপির বক্তব্য, “সাধারণ মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে পাম্পের মালিকদের আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।” লাঠি চালানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “পুলিশ লাঠি চালায়নি। বিক্ষোভকারীদের সামলাতে কয়েক জনকে ঘটনাস্থল থেকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল মাত্র।” পাম্পে কারচুপির অভিযোগ তদন্ত করতে ইন্ডিয়ান ওয়েল কর্পোরেশনের এক তদন্তকারী দল সোমবার পাম্প পরিদর্শনে আসে। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মৌমিতা বসু বলেন, “আপাতত পাম্পটি বন্ধ রাখা হবে। আইওসি-এর তদন্তকারী দল ও বৈধ পরিমাপ দফতরের আধিকারিকেরা পাম্পটি খতিয়ে দেখে আমাকে রিপোর্ট দেবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়, পরমার্থ মণ্ডলদের দাবি, “মাচানতলার এই পেট্রোল পাম্পটিই শুধু নয়, প্রশাসন এ বার জেলার অন্য পাম্পগুলিতেও কারচুপি রুখতে নিয়মিত অভিযান চালাক। না হলে এই ধরনের ঘটনা রোখা যাবে না।”
|