|
|
|
|
পরিত্যক্ত খাদানে মাছ চাষের ভাবনা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
জলভর্তি পরিত্যক্ত খাদানগুলিতে মাছ চাষের পরিকল্পনা করেছে রাজ্য সরকার। সম্প্রতি মৎস্য দফতরের সচিবদের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক। মৎস্যচাষ বিশেষজ্ঞদের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শও চাওয়া হয়েছে। খাদানের জল মাছ চাষের উপযোগী কি না তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে এ বিষয়ে একটি চূড়ান্ত খসড়া প্রকল্প তৈরি হবে বলে জেলা মৎস্য দফতর সূত্রে খবর।
আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকায় ইসিএলের একাধিক জলভর্তি পরিত্যক্ত খোলামুখ খাদান আছে। বিস্তীর্ণ অঞ্চলে মাটি খুঁড়ে কয়লা তুলে নিয়েছে ইসিএল। কিন্তু সেই ফাঁকা অংশ ভরাট করা হয়নি। মাটির তলার জল ও বৃষ্টির জলে খাদানগুলি ভরাট হয়ে বড় বড় পুকুরের আকার নিয়েছে। খাদানগুলি এখন আর ইসিএলের কোনও কাজে লাগে না। সেগুলিতে মাছ চাষ কী ভাবে করা যায়, সেটাই এখন পরিকল্পনা করছে রাজ্য সরকার বলে মন্তব্য করেছেন রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটক। মলয়বাবু বলেন, “মাছ চাষের বিষয়টিও আংশিক ভাবে কৃষি দফতর দেখছে। আমি এ বিষয়ে মৎস্য সচিবের সঙ্গে আলোচনাও করে নিয়েছি। খাদানগুলি পাওয়ার বিষয়ে ইসিএলের মৌখিক সম্মতি মিলেছে।”
মলয়বাবুর দাবি, এই পরিকল্পনাটি যদি বাস্তবায়িত হয় তবে এলাকার অর্থনৈতিক চেহারার আমূল পরিবর্তন হবে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে। মলয়বাবু জানান, যে সব ব্লক ও পুরসভা এলাকায় এই প্রকল্পগুলি হবে সেখানকার বেকার যুবকদের সমবায় গড়ে মাছচাষের ভার দেওয়া হবে। ওই গোষ্ঠীগুলিকে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কারিগরি সহায়তাও দেওয়া হবে। মলয়বাবু জানান, জেলা মৎস্য দফতর গবেষণা করে দেখেছে, এই জেলা-সহ আশপাশের অঞ্চলে মাছের জোগানে আর ঘাটতি থাকবে না। প্রাথমিক ভাবে বারাবনির দু’টি এবং সালানপুরের সাতটি খাদানকে এ জন্য প্রাথমিক ভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সালানপুর ও বারাবনিতে এ রকম দু’টি জলভর্তি খাদানে দুটি পৃথক প্রকল্প তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। সালানপুরের আলকুষায় খাদান থেকে জল তুলে পরিস্রুত করে ১৪টি মৌজায় তা সরবরাহ করা হয়। বারাবনির ইটাপাড়ার প্রকল্প থেকে ৭টি মৌজায় জল সরবরাহ করা হয়। ফলে এলাকায় জলসঙ্কট লাঘব করা গিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে মাছ চাষের প্রকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানান মলয়বাবু। মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তার মন্তব্য, “খনি অঞ্চলের বেকার যুবকদের একাংশ বেআইনি কয়লা কারবারে জড়িত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, অবৈধ কয়লা কারবার বন্ধ করতেই হবে। সে জন্য এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোর উন্নয়ন প্রয়োজন। পরিত্যক্ত খাদানে মাছচাষের পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে অবৈধ কয়লা কারবারেও রাশ টানা সম্ভব।”
জেলা মৎস্য দফতরের যুগ্ম অধিকর্তা দেবাশিস পালুই জানান, এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে তাঁরা প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তবে কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। যেমন, খাদানগুলি বেশ গভীর। সেখান থেকে মাছ তুলে আনা কতটা সম্ভব, সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মৎস্য চাষ বিশেষজ্ঞদের অবশ্য পরামর্শ, পরিমাণ মতো তারজালির চৌবাচ্চা বানিয়ে সেগুলি খাদানে নামিয়ে মাছ চাষ করা হোক। খাদানের জল মাছ চাষের উপযোগী কি না, সে নিয়েও ধন্দে মৎস্য দফতরের কর্তারা। দেবাশিসবাবু বলেন, “মাছের বৃদ্ধির জন্য জলে মিশে থাকা নানা খনিজ লবণের ভূমিকা থাকে। খাদানের জল এ জন্য কতটা উপযোগী, তা পরীক্ষা করা হচ্ছে।” দেবাশিসবাবু জানান, সরকারের এই ইতিবাচক পদক্ষেপ তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন।
ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, শিল্পাঞ্চলে প্রায় ৭৮টি এমন জলভর্তি খাদান আছে। সংস্থার এক আধিকারিকের জানান, তাঁরাও চান এই খাদানগুলি ভাল কাজে ব্যবহার হোক। রাজ্য সরকারের তরফে তাঁদের সংস্থার নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে আবেদন করা হলে তাঁরা সেগুলি দেবেন। |
|
|
|
|
|