দক্ষিণ দিনাজপুরের বংশীহারীর বিরল রোগে অসুস্থ সিদ্দিকা পারভিনের পাশে দাঁড়াল কংগ্রেস। দিল্লির এইমস হাসপাতালে ভর্তি করে সিদ্দিকার চিকিৎসা করানো হবে বলে রবিবার প্রদেশ কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক ওমপ্রকাশ মিশ্র জানিয়েছেন। ৮ ফুট লম্বা সিদ্দিকা সোজা হয়ে দাঁড়াতে কষ্ট পান। আজ, সোমবার বাংশীহারির শ্রীরামপুর গ্রামের বাড়ি থেকে সিদ্দিকাকে নিয়ে তাঁর অভিভাবকেরা ফরাক্কা এক্সপ্রেসে দিল্লি রওনা হবেন। এ দিন জেলা কংগ্রেসের তরফে ৪টি সংরক্ষিত ট্রেনের টিকিট তাদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়। ওমপ্রকাশবাবু বলেন, “ওঁর পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। সিদ্দিকাকে নিয়ে তাঁর অভিভাবকেরা সোমবার ট্রেনে দিল্লি রওনা হবেন। দিল্লির স্টেশন থেকে তাদের নিয়ে এইমসে ভর্তি করানো হবে। একবছরে সিদ্দিকার ভরণপোষণ বাবদ কয়েক দফায় তাঁর পরিবারের হাতে জেলা কংগ্রেসের তরফে ৩০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।”
পিটুইটারি গ্রন্থিতে টিউমার থাকায় সিদ্দিকার দৈর্ঘ্য ৮ ফুট ছাড়িয়েছে। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের এই তরুণীর চিকিৎসার সমস্ত ভার রাজ্য সরকার নেবে বলে গত বছর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন। পরে বালুরঘাট হাসপাতাল থেকে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের উদ্যোগে সিদ্দিকাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তারপরেই সমস্যার সম্মুখীন হতে থাকেন সিদ্দিকা ও তাঁর পরিবার। এসএসকেএম-এ সাধারণ রোগীদের শয্যায় রাখা হয় ৮ ফুট লম্বা সিদ্দিকাকে। পা ভাঁজ করে কষ্টের মধ্যে তাঁকে থাকতে হচ্ছিল। লম্বা খাট দেওয়ার আশ্বাস দিয়েও এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ তা রাখেননি বলে অভিযোগ। |
হাসপাতাল চত্বরের গাছতলায় দিনের পর দিন কাটাতে হয় আত্মীয়দের। হাসপাতাল থেকে চাহিদা মতো খাবারও সিদ্দিকাকে দেওয়া হত না। শেষমেশ একরকম জোর করেই অসুস্থ সিদ্দিকাকে কলকাতা থেকে বংশীহারীতে নিয়ে চলে যান তাঁর বাবা আফাজুদ্দিন। এর পর গত প্রায় এক বছর ধরে ঘরেই ছিলেন সিদ্দিকা। গত বছরের শেষে ওমপ্রকাশ মিশ্র এবং দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি নীলাঞ্জন রায়ের নেতৃত্বে কংগ্রেসের একটি দল সিদ্দিকার বাড়িতে গিয়ে তার উন্নত চিকিৎসা এবং ভরণপোষণের দায়িত্ব গ্রহণের আশ্বাস দিলে নতুন করে আশার আলো দেখতে শুরু করেন সিদ্দিকা ও তাঁর বাবা-মা। এ দিন তারা বলেন, “মেয়েকে চোখের সামনে তিল তিল করে মরতে দেখা ছাড়া উপায় ছিল না। ওমপ্রকাশবাবুরা আন্তরিকতা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোয় আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।” সিদ্দিকার চিকিৎসার বিষয়ে প্রথমে উদ্যোগী হয়েও পরে সরে আসার অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূল জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রর বক্তব্য, “এসএসকেএমে সিদ্দিকার চিকিৎসা হচ্ছিল। অপারেশনের দিন ঠিক হলেও কিন্তু ওঁরা কিছুতেই অপারেশনে রাজি না হয়ে সিদ্দিকাকে ফিরিয়ে আনেন, ফলে আমাদের তরফে আর কিছুই করার ছিল না।’’ আজ সিদ্দিকার সঙ্গে তার বাবা, কাকা ও এক খুড়তুতো ভাই দিল্লি যাচ্ছেন। এ দিন সিদ্দিকার কাকা মোক্তারোল ইসলাম বলেন, “সিদ্দিকা আগে দু’কেজি চালের ভাত খেত। এখন খাওয়া কমেছে। ঠিক মতো হাঁটতে পারে না। এইমসে চিকিৎসার বিষয়ে ভরসা পাচ্ছি।” ওমপ্রকাশবাবু বলেন, “দিল্লির এইমস হাসপাতালে সিদ্দিকার চিকিৎসা করানোর সব রকম ব্যবস্থা করা হয়ে গিয়েছে। এতে রাজনীতির কোনও ব্যাপারই নেই। মানবিকতার খাতিরে আমরা সিদ্দিকার বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছি।”
|