অভ্যাসের সাধারণ কিছু পরিবর্তনই বদলে দিতে পারে গোটা জীবন। কিন্তু সাধারণ মানুষ তো বটেই, চিকিৎসকদের অনেকেরও সে সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা নেই। এর সমাধানে এমবিবিএস পাঠ্যক্রমেই সঠিক ‘লাইফস্টাইল’-এর গুরুত্বের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা দরকার বলে মনে করেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। শনিবার সন্ধ্যায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রাক্তনী আয়োজিত এক আলোচনাচক্রে চিকিৎসকেরা প্রায় সকলেই জীবনযাত্রার পরিবতর্নের পক্ষেই সওয়াল করলেন।
আলোচনার বিষয় ‘রোগ নিরাময়ে জীবনযাত্রা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা।’ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির খেলা টিভিতে দেখতে গিয়ে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন কিছু ফুটবলপ্রেমী। আচমকা এই হৃদ্রোগের কারণ ছিল মূলত মানসিক উত্তেজনা। আরও অজস্র উদাহরণ ও অভিজ্ঞতা থেকে আলোচনায় উপস্থিত ডাক্তারেরা একমত হন যে, ডায়াবিটিস, হরমোনের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, সন্তানহীনতা, স্মৃতিভ্রংশ, হৃদ্রোগের মতো অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে ওষুধের পাশাপাশি জীবনযাত্রার পরিবর্তন খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সভার সঞ্চালক, চিকিৎসক কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় প্রশ্ন রেখেছিলেনধরা যাক চিকিৎসক রোগীকে সিগারেট ছাড়তে বলছেন বা সকালে ব্যায়াম করার পরামর্শ দিচ্ছেন। রোগী শুনছেন, কিন্তু করে উঠতে পারছেন না। সেই সচেতনতা অনেক ক্ষেত্রে নেই ডাক্তারদেরও।
আলোচনা থেকেই উঠে এল কিছু সমাধান। ডাক্তাররা একমত হলেন, নিজেদের সচেতন করতে ডাক্তারি পাঠ্যক্রমেই সঠিক জীবনযাত্রার গুরুত্ব ব্যাখ্যা প্রয়োজন। রোগী দেখার সময়ে ‘সঠিক জীবনযাত্রা’ ব্যাপারটি রোগীদের কী ভাবে বোঝাবেন, সে ব্যাপারেও এমবিবিএস পাঠ্যক্রমে অন্তত একটা পরিচ্ছদ রাখার প্রস্তাব দিলেন অনেকেই।
অন্যতম বক্তা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ গৌতম খাস্তগীর জানালেন, বিদেশে বহু জায়গায় স্থূলকায় দম্পতি বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার জন্য এলে ডাক্তার স্পষ্ট বলে দেন, রোগা না হলে তিনি চিকিৎসা করবেন না। গৌতমবাবুর কথায়, “অল্পবয়সে মোটা হওয়া থেকে মেয়েদের নানা সমস্যা ও সন্তান হতে সমস্যা হয়। বন্ধ্যত্বে ভোগেন মোটা পুরুষেরাও।” এন্ডোক্রিনোলজিস্ট সুজয় মজুমদারও বলেন, “অত্যধিক ওজন সব রোগের মূল। এর থেকে বাঁচতে রোগা হতেই হবে।” চিকিৎসক অঞ্জন শিওটিয়ার কথায়, “একটু ব্যায়াম, নুন-চর্বি কম খাওয়া, সিগারেট ছেড়ে দেওয়ায় ম্যাজিকের মতো কাজ হতে পারে।” মনোবিদ মলয় ঘোষাল বলেন, “অনেকেই চাকরি ও বাড়ির জীবনের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে পারছেন না। বাড়ছে মদ্যপান। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে মানুষের মস্তিষ্কে।” |