হাসপাতালের মর্গে রাখা মৃতদেহের নাক-কান ও মুখের এক পাশের অংশ খুবলে নিয়েছে ইঁদুর, এমনই অভিযোগ উঠল মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে ঠাকুরপুকুর ইএসআই হাসপাতালে। মৃত ওই ব্যক্তির নাম মহম্মদ শাহরুখ (৩৪)।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৭ নভেম্বর সকালে খিদিরপুরের হাইড রোডের বাসিন্দা মহম্মদ শাহরুখকে ঠাকুরপুকুর ইএসআই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই ব্যক্তির পরিজনেরা জানিয়েছেন, বন্দর এলাকার এক সংস্থার কর্মী শাহরুখ ওই দিনই বিষ খেয়েছিলেন।
শাহরুখের পরিবারের অভিযোগ, তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল। তবুও আইসিইউ-তে ভর্তি না করিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাধারণ শয্যায় পাঠিয়ে দেন তাঁকে। ভর্তি করার পরে দশ মিনিটের মাথায় রোগীর অবস্থার আরও অবনতি হলে শেষে অনেক অনুরোধ-উপরোধের পরে সাধারণ শয্যা থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউ-তে। কিন্তু দু’দিন চিকিৎসা করার পরে শনিবার সকালে মহম্মদ শাহরুখের মৃত্যু হয়। বিষের জেরে মৃত্যু হয়েছে বলে মৃতদেহটি রাখা হয় ময়না-তদন্তের জন্য।
মৃতের পরিবারের বক্তব্য, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, শনিবারই শাহরুখের দেহ তাঁদের হাতে তুলে দেবেন। কিন্তু সেই সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি না হওয়ায় সে দিন তাঁরা দেহ পাননি। রবিবার সকালে তাঁদের ফের যেতে বলা হয়।
মৃত যুবকের দিদি আমনা বেগম রবিবার বলেন, “আজ সকালে হাসপাতালে গিয়ে যখন ভাইয়ের মৃতদেহ নিয়ে আসতে যাই, দেখি ওর ডান চোখের নীচ থেকে মাংস নেই। ইঁদুর খুবলে নিলে যেমন হয়, তেমন দেখতে লাগছে। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাই।” তাঁর অভিযোগ, শনিবার যখন তাঁর ভাই মারা গিয়েছিল, তাঁর পরে হাসপাতালে এসে তাঁরা মৃতদেহে এ রকম কোনও ক্ষতচিহ্ন দেখতে পাননি। তাই রবিবার মৃতদেহের ওই অবস্থা দেখে পরিজনেরা হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকদের পুরো বিষয়টি জানান। আমনা বেগমের দাবি, প্রথমে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁদের অভিযোগ মানতে চাননি।
পুলিশ জানিয়েছে, এর পরেই মহম্মদ শাহরুখের বাড়ির লোকেরা বিকৃত মৃতদেহ নেবে না বলে দাবি জানিয়ে হাসপাতালে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে। যথারীতি হাসপাতাল চত্বরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ। মৃতের পরিবারের লোকজন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানান।
ওই হাসপাতালের চিকিৎসক লোকেশ গুপ্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে রবিবার বলেন, “মৃতদেহের ডান গালে অনেকটা গর্ত দেখেছি। আমাদেরও মনে হয়েছে, ইঁদুরের মতো কোনও প্রাণী খুবলালেই এ রকম দাগ হতে পারে। হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা বিষয়টি সবিস্তার জানিয়েছি।” এ দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “আমি ঘটনাটি জানি। কিন্তু ওটি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ হাসপাতাল। তাই ওই হাসপাতালের প্রশাসনিক এবং পরিকাঠামো পুরোটাই দিল্লি দেখে। আমি দিল্লিতে পুরো ঘটনাটি জানাব।” |