টাকা ফেলুন, হাসপাতালে তবেই মিলবে রোগীর ট্রলি
কোথাও ৫০ টাকা। আবার কোথাও ১০০। শুধু টাকা খরচ করলেই হবে না। পরম ধৈর্য নিয়ে ওয়ার্ড-বয়দের মুখঝামটাও সহ্য করতে হবে। সরকারি হাসপাতালে ট্রলি পাওয়ার এটাই দস্তুর। সরকারি কোষাগার থেকে হাজার হাজার টাকা খরচ করে বিভিন্ন হাসপাতালে যতই ট্রলি কেনা হোক, রোগীরা সচরাচর তার দেখা পান না। ট্রলি পেতে গেলে আলাদা টাকা দিতে হয়। কোথাও কোথাও আবার শুধু ট্রলির টাকা নয়, ট্রলি ঠেলার জন্যও আলাদা ‘রেট’ রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের। রোগীর বাড়ির লোকেরা তা মানলে ভাল, নচেৎ নিজেদের রোগীর ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়!
স্বাস্থ্যকর্তাদের একটা বড় অংশই স্বীকার করেছেন, বহু চেষ্টাতেও এই ‘ট্রলি চক্র’ তাঁরা ভাঙতে পারছেন না। শনিবার সকালে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে কর্তৃপক্ষের সেই ব্যর্থতারই মাসুল দিতে হয়েছে ট্যাংরার শতাব্দী ঘোষকে। অভিযোগ, ওয়ার্ড থেকে লেবার রুম পর্যন্ত হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথেই প্রসব হয় তাঁর এবং মেঝেয় পড়ে মাথায় চোট পেয়ে মৃত্যু হয় সদ্যোজাতের।
ঘটনার পরেই মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বিচ্ছিন্ন ভাবে ওই ঘটনার তদন্তের পাশাপাশি সামগ্রিক ভাবে বিষয়টির তদন্ত করতে বলেছেন মমতা। কেন মুমূর্ষু রোগীর জন্য ট্রলি পেতেও পরিজনদের কালঘাম ছুটে যায়, তার কারণ খুঁজে ট্রলি চক্র ভাঙার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এনআরএসের ঘটনাকে সরকার যে ছোট করে দেখছে না, তা বোঝাতেই হাসপাতালের প্রশাসনিক স্তরে কিছু রদবদলের কথাও ভাবা হয়েছে। মঙ্গলবারই সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সমস্ত হাসপাতালের প্রধানদেরও সতর্ক করা হবে।
স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সমস্ত হাসপাতালেই পর্যাপ্ত সংখ্যায় ট্রলি রয়েছে। যদি কোনও কারণে আরও ট্রলি প্রয়োজন হয়, তা হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেরা উদ্যোগী হয়েই সে সব কিনতে পারেন। কিন্তু শুধু ট্রলি থাকলেই তো হবে না। প্রয়োজনে সেটা পেতে হবে। কেন তা পাওয়া যায় না, এর মধ্যে কাদের যোগসাজশ রয়েছে, সেটা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জানার কথা।”
এসএসকেএম, আরজিকর, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, ন্যাশনাল, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ, মেদিনীপুর সর্বত্র এই এক ছবি। প্রত্যেক হাসপাতালেই ট্রলি না পাওয়া নিয়ে একাধিক লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে প্রায় প্রতিদিনই। কিন্তু তার পরেও সমস্যার এক চুলও সমাধান হয় না। দিন কয়েক আগেই এসএসকেএমের ইমার্জেন্সি থেকে এক মুমূর্ষু অশীতিপর বৃদ্ধকে পাঁজাকোলা করে ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েন তাঁর প্রৌঢ় পুত্র। কোনও রকমে সেই রক্তারক্তি কাণ্ড সামলেছিলেন চিকিৎসকেরা। তবুও ছবিটা বদলায়নি।
মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হওয়া এক কিশোরকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগ থেকে হেমাটোলজি বিভাগে স্থানান্তরিত করতে বরাতজোরে একটা ট্রলির ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন তাঁর পরিবারের লোকেরা। কিন্তু সেই ট্রলির সব চাকা এমনই ভাঙা ছিল যে, তাতে শুয়ে তার অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত বাড়ির লোকেরা তাকে ট্রলিতে বসিয়ে দু’পাশ থেকে দুজন ধরে কোনও মতে ওয়ার্ডে পৌঁছন। এই সব নজিরের কোনওটিই সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। কিন্তু জেনেও তাঁরা নির্বিকার থাকেন। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা জানিয়েছেন, ঠিক এই জায়গাতেই ধাক্কা মারতে চান তাঁরা। কারণ, সব কিছু স্বাস্থ্য ভবন থেকে করা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, “স্থানীয় প্রশাসন যদি কড়া না হয়, তা হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে। কোথাও ট্রলির জন্য টাকা চাওয়া হয়, কোথাও ওয়ার্ড থেকে রক্তের নমুনা সংশ্লিষ্ট বিভাগে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যেতেও টাকা দিতে হয় রোগীর বাড়ির লোককে। প্রতিনিয়ত এমন অভিযোগ আসছে। এ বার তাই আমরাও স্থানীয় প্রশাসনকে কড়া বার্তা দিতে চাই। নিজেদের হাসপাতাল নিজেদেরই সামলাতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.