বাগডোগরা বিমানবন্দরের প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ সংক্রান্ত নির্দেশ অবমাননার অভিযোগে শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামনকে কাল, মঙ্গলবার সশরীরে আদালতে হাজিরার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। গত শুক্রবার হাইকোর্টের নির্দেশ শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে এসে পৌঁছেছে। শুধু হাজিরা নয়, কেন পুলিশ কমিশনারকে গ্রেফতার করা হবে না বা অন্য কোনও সাজা দেওয়া হবে না তা-ও ওই দিন সকাল সাড়ে দশটায় আদালতে হাজির হয়ে পুলিশ কমিশনারকে জানাতে বলা হয়েছে। বর্তমানে বিমানবন্দরের প্রিপেড বুথটি শিলিগুড়ি পুলিশ চালাচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যে ব্যক্তি ওই বুথ চালানোর লাইসেন্স পান, তিনি বুথের দখল না পেয়ে হাইকোর্টে অভিযোগ জানান। পুলিশ কমিশনারের বক্তব্য, “জনস্বার্থে আমরা ওই ট্যাক্সি বুথটি চালাচ্ছিলাম। আর এই ধরনের বুথ চালানোর জন্য আমাদের কাছে রাজ্য সরকারের নির্দেশও রয়েছে। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (এএআই) মৌখিক ভাবে আমাদের তা চালাতেও বলেছিলেন। কিন্তু এতদিন লিখিত দেওয়া হয়নি। গত সপ্তাহেই আমাদের জানানো হয়েছে, ওই বুথের লাইসেন্স নতুন করে অভিযোগকারীদের দেওয়া হয়েছে। তাই যাই হোক, আমি হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কলকাতায় গিয়ে হাজিরা দেব।” হাইকোর্ট যা নির্দেশ দেবে, তা মেনেই পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, গত ২০০০ সাল থেকে বাগডোগরা বিমানবন্দরে প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ চলছে। পর্যটক-সহ বিমানযাত্রীদের সুষ্ঠু পরিষেবার কথা মাথায় রেখেই ওই ব্যবস্থা চালু করা হয়। বুথের কাউন্টার থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যের জন্য সরকারি নির্ধারিত ‘ভাড়ায়’ ট্যাক্সি পান যাত্রীরা। দু’টি কাউন্টার রয়েছে, একটি শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ির জন্য এবং অন্যটি সাধারণ গাড়ির জন্য। সারা দেশেই টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই এএআই কর্তৃপক্ষ প্রিপেড ট্যাক্সি চালানোর লাইসেন্স দিয়ে থাকে। প্রথম থেকেই টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লাইসেন্স পান বাগডোগরার বাসিন্দা পঙ্কজ ঘোষ। প্রথমে ৫ বছর অন্তর লাইসেন্স নবীকরণ করার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে তা দু’বছর অন্তর করতে হয়। গত ৩১ মার্চের পরেও পঙ্কজবাবুই ওই বুথ চালানোর লাইসেন্স পান।
সরকারি সূত্রের খবর, গত ২২ ফেব্রুয়ারি রাজ্য সরকার সমস্যাবিহীন যাত্রী পরিষেবার কথা বলে একটি নির্দেশিকা জারি করে। তাতে বাগডোগরা বিমানবন্দর এবং এনজেপি রেলস্টেশনের নতুন ট্যাক্সি বুথ শিলিগুড়ি পুলিশই চালাবে বলে জানানো হয়। সেই সময় এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন পঙ্কজবাবু। তার জেরে হাইকোর্ট থেকে এয়ারপোর্ট অথারিটিকে নতুন টেন্ডার করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এবং যতদিন তা না হচ্ছে, ততদিন পরিষেবার কথা মাথায় রেখে পুরানো সংস্থাকেই বুথটি চালানোর নির্দেশ দেয়। পঙ্কজবাবু বলেন, “এসবের মধ্যেই গত ৩০ অগস্ট কমিশনারেটের পুলিশ জোর করে বুথ থেকে আমাদের কর্মীদের বাইরে বার করে দেয়। তার পরে ঘরের দখল নিয়ে পুলিশ বুথ চালাতে থাকে। নতুন টেন্ডারেও আমরা বুথটি চালানোর দায়িত্ব পেয়েছি। তারপরেও পুলিশ ঘর খালি করেনি। সমস্ত কিছুই হাইকোর্টে জানানো হয়েছিল।”
পুলিশ কমিশনার জানান, ওই বুথকে ঘিরে নানা ধরনের আইন শৃঙ্খলার সমস্যা হচ্ছিল। কিছু দিন আগে একটি চিকিৎসককে মারধর করার মামলাও হয়। পাশাপাশি, যাত্রীদের থেকে জোর করে টাকা আদায়ের মতো ঘটনাও ঘটছিল। তাই রাজ্য সরকারের নির্দেশ পেয়ে পুলিশ এগিয়ে যায়। এএআই-র কর্তৃপক্ষ তাতে সম্মতি দিয়েছিল। তাঁর কথায়, “কিন্তু নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়েছে বা কাউকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তা মাত্র ২-৩ দিন আগে আমাদের জানানো হয়েছে। এতে সমস্যা বেড়েছে। হাইকোর্ট সব জানাব।”
এই প্রসঙ্গে বাগডোগরা বিমানবন্দের অধিকর্তা কল্যাণকিশোর ভৌমিক বলেছেন, “গোটা বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন হওয়ায় কোনও মন্তব্য করব না।” বর্তমানে প্রিপেড বুথটির অধীনে প্রায় ৩০০ গাড়ি রয়েছে। সিকিম, দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তে যাওয়ার জন্য বিমান থেকে নেমে প্রিপেড ট্যাক্সি বুথটি ব্যবহার করেন বিমান যাত্রীরা। |