কাজ হারিয়ে পথ অবরোধ করলেন সিভিক পুলিশের কর্মীরা। রবিবার সকালে প্রায় এক ঘণ্টা পাড়া থানার ঝাপড়া মোড়ে পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন সিভিক পুলিশের প্রায় দেড়শো কর্মী। তাঁরা সকলেই পাড়া থানার অধীনে কাজ করতেন। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার পরে অবরোধ ওঠে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এন সুধীর কুমার বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই সিভিক পুলিশের কর্মীদের কাজ করানো হয়েছে। নির্দেশ এলেই ফের তাঁদের কাজে নেওয়া হবে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন জেলায় পাঁচ হাজার সিভিক পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছিল। শনিবার পর্যন্ত তাঁরা জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় কাজ করেছেন। ওই দিন রঘুনাথপুরে সিপিএমের যুব সংগঠনের সমাবেশের সামনে রাস্তায় যান নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গিয়েছিল সিভিক পুলিশ কর্মীদের। কিন্তু এ দিন সকালে জেলার বিভিন্ন থানায় গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন আপাতত তাঁদের কাজ করতে হবে না। পরবর্তী নির্দেশ এলে ফের তাঁদের ডাকা হতে পারে বলে জানানো হয়।
ওই খবর শুনেই পাড়া থানার বিক্ষুব্ধ সিভিক পুলিশের ১৫০ কর্মী ঝাপড়া মোড়ে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের মধ্যে গোবিন্দ দেওঘরিয়া,অপূর্ব দেওঘরিয়া, সৌমেন দে, অচিন্ত্য বাউরিরা বলেন, “এক মাসের বেশি সময় ধরে যান নিয়ন্ত্রণ থেকে পুজো মণ্ডপে, মেলায় ভিড় সামলেছি। রাতে রাস্তা থেকে বিভিন্ন এলাকায় পাহারা দিয়েছি। এখনও প্রাপ্য ভাতাও পাইনি। তাই মধ্যেই এ দিন থেকে আমাদের বসিয়ে দেওয়া হল!” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সিভিক পুলিশ কর্মীদের মাথাপিছু দৈনিক প্রায় ১৪২ টাকা (১৪১ টাকা ৮২ পয়সা) ভাতা পাওয়ার কথা। ব্যাঙ্কের মাধ্যমে ভাতা দেওয়ার কথা। বিক্ষোভকারী সিভিক পুলিশ কর্মীদের বক্তব্য, “ভাতার টাকা সামান্য হলেও তাতে সংসার খরচের কিছু সুরাহা হত।” তবে পুলিশ সুপারের আশ্বাস, “সিভিক পুলিশের কর্মীরা তাঁদের প্রাপ্য ভাতা পেয়ে যাবেন।”
প্রায় ছয়-সাত মাস আগে সিভিক পুলিশ নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বিজ্ঞাপন দেখে বেকার যুবকরা থানায় থানায় আবেদন করেছিলেন। পরে পুরুলিয়া সদরে বেলগুমা পুলিশ লাইনে তাঁদের পরীক্ষা নিয়ে কাজ দেওয়া হয়। তবে তাঁদের এ জন্য কোনও নিয়োগপত্র দেওয়া হয়নি, চুক্তিও করা হয়নি। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, সিভিক পুলিশদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশ ছিল, ১৪ দিন কাজ করিয়ে এক দিন বিরতি দিয়ে ফের ১৪ দিন কাজ দেওয়া যাবে। কিন্তু সেই নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরে তাঁদের ফের কাজ করানো হবে কি না, সেই সম্পর্কিত নতুন কোনও নির্দেশ আসেনি। তাই এ দিন থেকে তাঁদের কাজে আসতে বারণ করে দেওয়া হয়।
শনিবারই রঘুনাথপুরে যুব সমাবেশে এই বিষয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধেছিলেন ডিওয়াইএফের রাজ্য সভাপতি আভাস রায়চৌধুরী। তাঁর অভিযোগ ছিল, “সুনির্দিষ্ট কোনও নীতি ছাড়াই রাজ্য সিভিক পুলিশ নিয়োগ করেছে। ফলে সামান্য সময় তাঁদের কাজ করিয়েই বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার।” তাঁর দাবি ছিল, কোনও ভাবেই সিভিক পুলিশদের কর্মহীন করা যাবে না। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “সরকারি সিদ্ধান্তই ছিল স্থায়ী হিসেবে নয়, প্রয়োজন ভিত্তিতে তাঁদের কাজে নেওয়া হবে। তাঁরা আর কাজ পাবেন না, এটা ভাবার কারণ নেই। প্রয়োজন পড়লে তাঁদের কাজে নেওয়া হবে।” |