এক সপ্তাহের মধ্যে ফের আদ্রায় ভরাবাজারের মধ্যে চলল গুলি। খুন হলেন এক বৃহন্নলা।
রবিবার সকালে আদ্রায় রামমন্দির লাগোয়া হাটে এক তরুণের ছোড়া গুলিতে খুন হন এক বৃহন্নলা। মৃতের নাম সুভাষ টুডু (৪৫) ওরফে বাবু রাম ওরফে চাঁদনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো যায়নি। এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এই খুনের কারণ নিয়ে পুলিশের ধন্দ কাটেনি। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এন সুধীর কুমার বলেন, “আদ্রায় ওই খুনের ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তবে পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, এলাকার দখল নিয়ে বৃহন্নলাদের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের জেরে এই খুনের ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে নটায় হাটের সব্জী বাজারে দুই সঙ্গীকে নিয়ে বিক্রেতাদের কাছ থেকে সব্জী সংগ্রহ করছিল সুভাষ টুডু। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাল জামা পরিহিত এক তরুণ তাঁর সামনে এসে আচমকাই পাইপগান বের করে গুলি চালায়। হাটের লোকজনের হতচকিত হওয়ার সুযোগে দৌড়ে রেল ইয়ার্ডের দিকে পালায় আততায়ী। পাইপগান উঁচিয়ে থাকায় পিছু নেওয়ার সাহস দেখাননি তাঁরা। সুভাষের সঙ্গী দুই বৃহন্নলা ও বাজারের কিছু লোকজন গুলিবিদ্ধ সুভাষকে প্রথমে আদ্রা রেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাঁকে পুরুলিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়ার সময়ে মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ জানিয়েছে, পাইপগান থেকে একটি গুলি করা হয়েছিল। গুলিটি সুভাষের পেটে ফুঁড়ে বেরিয়ে যায়। |
দিন দশেক আগেই আদ্রা রেল স্টেশনের কাছে সব্জী বাজার এলাকায় ভর সন্ধ্যায় দুষ্কৃতীরা এক যুবককে খুন করে যায়। সেই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে দু’জনকে পুলিশ ধরেছে। কিন্তু এ বার দিনের শুরুতেই রবিবারের ভরা হাটে এই খুনের ঘটনায় বাসিন্দারা তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ পুলিশ আধিকারিকরা। বাজারে থাকা লোকজনদের তাঁরা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বারবার ভরা বাজারে খুনের ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই পুলিশের কপালেও চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সেই সঙ্গে এ দিনের ঘটনার বিষয়ে বিশদ তথ্য না পেয়ে তদন্ত কোন পথে এগবে তা নিয়েও যথেষ্ঠ চিন্তায় পুলিশের কর্তারা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুভাষ টুডু ওরফে চাঁদনির আদি বাড়ি আদ্রার ডিভিসি কলোনিতে। স্থানীয় স্কুলে পড়াশোনা করেন তিনি। খেলাধুলোতেও এলাকায় তাঁর সুনাম ছিল। পরে অনেক দিন তিনি আদ্রায় ছিলেন না। কয়েক বছর আগে বৃহন্নলার পরিচয় নিয়ে তিনি আদ্রায় ফেরেন। পুলিশের একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, সুভাষ আসার আগে বৃহন্নলাদের বহিরাগত একটি গোষ্ঠী আদ্রায় সক্রিয় ছিল। সুভাষ এসে নতুন গোষ্ঠী গড়ে তোলেন। এলাকার দখল নিয়ে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। পুরনো গোষ্ঠী আদ্রা থেকে সরে গেলেও তারা ফেরার চেষ্টা পদস্থ কর্তা বলেন, “কয়েকমাস আগে বাঁকুড়ায় সুভাষের উপরে হামলা চালিয়েছিল বৃহন্নলাদের অন্য গোষ্ঠী। এমনই কিছু তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।” |