জগদ্ধাত্রী বন্দনায় রঙিন মেদিনীপুর
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
বিবিগঞ্জ থেকে অলিগঞ্জ, সিপাইবাজার থেকে বক্সীবাজার-সর্বত্রই নানা রঙের আলোর ঝলকানি। জগদ্ধাত্রী পুজোয় আলোয় সেজেছে মেদিনীপুর। কালীপুজোর জৌলুসে বরাবর মেদিনীপুরের থেকে এগিয়ে থাকে খড়্গপুর। তবে জগদ্ধাত্রী পুজোয় ঠিক উল্টো। রেলশহরের থেকে এগিয়ে সদর শহরই। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
আগের থেকে সদর শহরে এখন সর্বজনীন জগদ্ধাত্রী পুজোর সংখ্যা বেড়েছে। এ বছরও নতুন করে কয়েকটি পুজো শুরু হয়েছে। শহরবাসীর নজর কাড়তে পুজোর আয়োজনে খামতি রাখছে না কেউই। তাই কোথাও এলইডি আবার কোথাও বা চন্দননগরের আলো দিয়ে পুরো এলাকা সাজানো হয়েছে। পুজো মণ্ডপের আশপাশে রয়েছে বাহারি গাছ। সবমিলিয়ে পুরো পরিবেশটা যেন পাল্টে গেছে। রবিবার সন্ধ্যায় অধিকাংশ সর্বজনীন পুজোর উদ্বোধন হয়েছে।
শহরের বাড়মানিকপুরে এ বারই প্রথম জগদ্ধাত্রী পুজোর আয়োজন করা হয়েছে। পুজো ঘিরে পুরো এলাকা জুড়ে এখন এক অন্য আবহ। |
|
মেদিনীপুর শহরে জেলাপরিষদের সামনে ‘আবির্ভাব’ ক্লাবের পুজো (বাঁ দিকে)। আলোর সাজ
মেদিনীপুরের কুইকোটা এলাকায় (ডান দিকে)। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল ও কিংশুক আইচ। |
রবিবার সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। আজ, সোমবার দুপুরে অন্নভোগ বিতরণ হবে। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সুজয় রথ বলেন, “সোমবারও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। পরের দিন সিঁদুর খেলার আয়োজন রয়েছে।” গোলকুয়াচকেও এ বার প্রথম পুজো হচ্ছে। মহাতাবপুর দক্ষিণপাড়ার নিউ দিশা সংঘ ক্লাবের পুজোর এ বার দ্বিতীয় বর্ষ। পুজোর অন্যতম উদ্যোক্তা সঞ্জয় সিংহ বলেন, “পুজো উপলক্ষে এ বারও কিছু কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।”
পুজো উপলক্ষে মেলা বসেছে সিপাইবাজার গির্জাপাড়ায়। ‘খ্রিস্টান-হিন্দু-মহামেডান অ্যাসোসিয়েশনে’র উদ্যোগে এই পুজোর এ বার ১৬ তম বর্ষ। রবিবার সন্ধ্যায় পুজো ও শিশুমেলার উদ্বোধন হয়। শহরের এই পুজোর সঙ্গে জুড়ে রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা। প্রথম দিনই মেলায় উৎসাহী মানুষ ভিড় করেন। মেদিনীপুরের কুইকোঠা সর্বজনীন পুজো এবার ২৫ বছরে পড়ল। গত শনিবার এই পুজোর উদ্বোধন করেন জলসম্পদ মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। রজতজয়ন্তী বর্ষ উপলক্ষে এবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। চার দিন ধরে চলবে বাউল গান, সঙ্গীত, ম্যাজিক-সহ নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আসর। জগদ্ধাত্রী পুজো ঘিরে কোতয়ালি বাজার এলাকাতেও সাজো সাজো রব। |
|
আলোর মিনার খয়রুল্লাচকে। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
শুধু সর্বজনীন নয়, পারিবারিক পুজো ঘিরেও উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে। শহরের মিরবাজারের ঘোষ বাড়ির পুজো প্রায় আড়াইশো বছরের পুরনো। দ্বারিকানাথ ঘোষের হাত ধরে এই পুজো শুরু হয়। তিনি হুগলির গোবিন্দপুর থেকে মেদিনীপুরে আসেন। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর পুজো হয় একদিনই। পরের দিন দশমীর পুজো। পুজোয় প্রায় ৪০টি পাঁঠা বলি হয়। সঙ্গে চাল কুমড়ো, আঁখ বলিও হয়। প্রথা মেনে কাঁধে করে বেহারারা প্রতিমা নিয়ে বিসর্জনে যান। সময়ের সঙ্গে বদলেছে অনেক কিছুই। তবে ঘোষ বাড়ির পুজোর ঐতিহ্য আগের মতোই রয়েছে। আগে জগদ্ধাত্রী পুজো ঘিরে শহরে এত জাঁক ছিল না। সর্বজনীন পুজোর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আড়ম্বরও বেড়েছে। তাই রকমারি মণ্ডপ ও আলোর রোশনাইয়ে মেদিনীপুরের জগদ্ধাত্রী আরাধনা জমজমাট। |
|