ইডেন গার্ডেন্স থেকে ক্রিকেটার সচিন তেন্ডুলকরের বিদায়পর্বের বেশিরভাগ জৌলুস অপহরণ করে নিল ওরই তিন সতীর্থ। তার জন্য অবশ্য কোনও অভিযোগের কারণ নেই। পরের মাসে কঠিন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে এ রকম একটা উদ্দীপক টেস্ট জয়ের দরকার ছিল ভারতের।
যে দিক দিয়েই দেখা যাক, ইডেনে ধোনিদের জয়টা দুর্দান্ত। খুব বেশি লোক ভাবেনি যে, ভারত বিপক্ষের কুড়িটা উইকেট তুলতে পারবে বলে। তা-ও এমন এক প্রতিপক্ষের, যে দলে ক্রিস গেইল, শিবনারায়ণ চন্দ্রপলের মানের ব্যাটসম্যান আছে। আর সেটাও এক জন টেস্টে অভিষেক ঘটানো পেসার করে দেখাবে সুদূর কল্পনাতেও কারও আসেনি! কিন্তু সেটাই আজ বাস্তব। কলকাতায় তিন দিনের মধ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। দু’ইনিংস মিলিয়ে সাকুল্যে একটা হাফসেঞ্চুরি আর মাত্র ১৩০ ওভার টিকে থাকতে পারার মধ্যে এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটিংয়ের করুণ ছবিটাই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। |
মহম্মদ সামি প্রত্যেককে অবাক করে দিয়েছে! অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ান ডে সিরিজে ওকে নতুন করে আবিস্কৃত এক জন বোলার দেখিয়েছিল। তার পর ইডেন টেস্টে সামি নিজেকেও ছাপিয়ে গিয়েছে। ওর বোলিংয়ের সামনে ব্যাটসম্যানদের ক্রিজে প্রতিবন্ধীর মতো দেখিয়েছে। না রিভার্স সুইং, না লেংথ, সামির কোনও কিছুই সামলাতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা। সঙ্গে ওর বলের গতি আর সঠিক লাইন ব্যাটসম্যানদের আতঙ্কের বহর আরও বাড়িয়েছে। উইকেটের এ দিক-ও দিকে ব্যাটসম্যানের ধরা পড়ার বদলে সামির ন’টা শিকারের বেশিরভাগের ক্ষেত্রে স্টাম্পের মাটিতে উপড়ে পড়ার মধুর আওয়াজ পাওয়া গিয়েছে। আমার সবচেয়ে নজর টেনেছে, গুড লেংথ থেকেও সামির রিভার্স সুইং করাতে পারার ক্ষমতা। রিভার্স করানোর জন্য ওর ফুল লেংথ বল করার দরকার লাগেনি! ম্যাচ শেষে ধোনি শুধু-শুধু সামিকে প্রশংসার বন্যায় ভাসিয়ে দেয়নি।
শুধু সামি-ই নয়। ভারত অধিনায়ক ওর আরও দুই সতীর্থের প্রচণ্ড প্রশংসা করেছে। যাদের মধ্যেও এক জনের ইডেনেই ছিল আবির্ভাব টেস্ট। রোহিত শর্মা। সামি আর শর্মা দুই অভিষেককারী এবং রবি অশ্বিন, তিনে মিলে ক্যারিবিয়ান অতিথিদের একেবারে মুছে দিয়েছে। শেন শিলিংফোর্ড বাদে প্রথম টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একেবারে দুর্বল লেগেছে। ভারতকে ২-০ সিরিজ জেতা থেকে আটকাতে মুম্বইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সম্পূর্ণ অন্য ফর্ম দেখাতে হবে। কিন্তু ওখানে সামনের আট দিন সর্বত্র চলা সচিন-ম্যানিয়া প্রতিপক্ষ দলের মানসিক স্থিতি নড়িয়ে দিতে পারে।
ওয়াংখেড়ের উইকেটে টার্ন আর বাউন্স আশা করার যথেষ্ট কারণ আছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সবচেয়ে বেশি দরকার একটা ভাল শুরুর। যার দায়িত্ব গেইলের উপর। গেইলকে শক্ত ভিত গড়তে হবে। যে ভিতের উপর চন্দ্রপলকে রানের ইমারত বানাতে হবে। প্রথম ইনিংসে বড় রান না তুললে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কপালে একটা জিনিসই নাচবে ফের হার! |