|
|
|
|
খড়্গপুর আইআইটি |
গ্রামোফোন থেকে বিমান ঢেলে সাজছে সংগ্রহশালা
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
খড়্গপুর আইআইটিতে একটি সংগ্রহশালা ছিল। তবে কেবল নামেই। সে অর্থে দেখার মতো কিছুই ছিল না। ছিল বলতে, পুরনো আমলের গুটিকয় কম্পিউটার, প্রখ্যাত প্রযুক্তিবিদদের হাতে তৈরি কিছু যন্ত্র, বিভিন্ন ধরনের উড়ানের কিছু মডেল, আইআইটিতে আসা বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি প্রভৃতি যা দেখতে মানুষের তেমন কোনও উৎসাহ ছিল না। এ বার সেই সংগ্রহশালাকেই নবরূপ দিতে উদ্যোগী হয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আগামী ছ’মাসের মধ্যেই সংগ্রহশালাটি ঢেলে সাজা হবে। সংগ্রহশালার দায়িত্বে থাকা আইআইটি-র শিক্ষক ধ্রুবজ্যোতি সেন বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থানুকূল্যেই সংগ্রহশালাটি ঢেলে সাজার ব্যবস্থা করছি। যাতে স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের কাছেও সংগ্রহশালাটি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।”
পুরনো দিনের কম্পিউটার, গ্রামোফোন, যন্ত্রপাতির পাশাপাশি এ বার সংগ্রহশালায় ঢুকে যাবে বেশ কয়েকটি নতুন জিনিস। থাকবে ট্রেন, জাহাজ ও বিমানের নানা মডেল। সংগ্রহশালার টেকনিক্যাল অফিসার অর্ণব হাজরার কথায়, “ডিঙি নৌকো থেকে শুরু করে বজরা, পরবর্তীকালে বড় বড় অত্যাধুনিক জাহাজসব কিছুরই মডেল রাখা হবে। নৌকোর ইতিহাস বৃহৎ, আবার বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন ধরনের নৌকো রয়েছে, আমরা যতটা সম্ভব সব দিকটাই তুলে ধরার চেষ্টা করব।” |
|
সেজে উঠছে আইআইটির সংগ্রহশালা। —নিজস্ব চিত্র। |
একই ভাবে রেল, বিমানের ক্ষেত্রেও পুরনো দিনের মডেল থেকে অত্যাধুনিক মডেল রাখা হবে। থাকবে অঙ্ক, পদার্থবিদ্যা, ইলেকট্রনিক্সের বিভিন্ন বিষয়। যেমন ধরা যাক মোমেন্টাম। পাঁচটি বলকে ঝুলিয়ে রাখা হল। একদিক থেকে একটি বল টেনে ছেড়ে দিলে তার ধাক্কায় উল্টোদিকের একটি বলই সরে যাবে, আবার দু’টি বল টেনে ছাড়লে উল্টোদিকে দু’টি বলই সরে যাবে। যা বইয়ে পড়ছে খুদে ছাত্রছাত্রীরা, কিন্তু হাতে-কলমে দেখার সুূযোগ স্কুলে নেই। কিংবা শব্দ, আলোর বিচ্ছুরণ, মোটরের কাজ, জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনসবই হাতে কলমে দেখার সুযোগ মিলবে ছাত্রছাত্রীদের।
এর বাইরেও আদিম যুগ থেকে শুরু করে আধুনিক যুগসুদীর্ঘ সময় ধরে কী ভাবে ধাপে ধাপে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি ঘটেছে, ২২টি স্তরে মডেলের মাধ্যমে তার দেখানো হবে। যেখানে আদিম যুগের গুহাচিত্র, আশ্রমে ঋ
ষির কাছে বিদ্যাশিক্ষা থেকে শুরু করে মানুষের মঙ্গল গ্রহে পাড়ি স্থান পেয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ১৯৫১ সালে খড়্গপুর আইআইটি-র জন্ম হয়েছিল। তারপর থেকেই সংগ্রহশালা ছিল ঠিকই, কিন্তু তা সকলের কাছে আকর্ষণীয় করার মতো পরিকল্পনা কোনও সময়েই নেওয়া হয়নি। এ বার কেন্দ্রীয় সরকার প্রায় আড়াই কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ওই অর্থেই চলছে সংগ্রহশালার আধুনিকীকরণ। আইআইটি-র রেজিস্ট্রার তপন ঘোষাল বলেন, “এ বার সংগ্রহশালাটি খুবই সুন্দর করে গড়ে তোলা হচ্ছে।”
খড়্গপুর আইআইটি কেবল প্রযুক্তির জগতেই এক বিখ্যাত নাম তা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাসও। যেখানে প্রথম আইআইটি তৈরি হয়েছিল সেটি ছিল জেলখানা। পরাধীন ভারতবর্ষে অজয় মুখোপাধ্যায়, অতুল্য ঘোষ, মাতঙ্গিনী হাজরার মতো বিখ্যাত বিপ্লবীদের এখানেই আটকে রাখা হয়েছিল। বর্তমানে সেই স্থানগুলিকেও সুন্দর করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। জেলার বিখ্যাত বিপ্লবীদের নাম ও সংক্ষিপ্ত জীবনী লেখা রয়েছে বিভিন্ন সেলে। আবার কোথাও পরাধীন ভারতবর্ষ কী ভাবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে স্বাধীন হল তা-ও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মডেলে। একদিকে যেমন এগুলি স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসকে মনে করিয়ে দেবে, তেমনই পাশেই সংগ্রহশালায় থাকবে প্রাচীন ও আধুনিকের মেলবন্ধন।
কিন্তু প্রশ্ন হল, এ সব দেখার জন্য আইআইটিতে কী সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার থাকবে? ধ্রুবজ্যোতিবাবুর কথায়, “স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা দেখতে চাইলে অনুমতি মেলে না এমন নয়। নিরাপত্তার কারণে আগে চিঠি দিয়ে অনুমতি চেয়ে নিতে হয়। তাহলেই সমস্যা থাকে না। ভবিষ্যতে এ ভাবেই সকলকে দেখার সুযোগ করে দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|