গরু চোরাচালানকারীদের উপদ্রবে অতিষ্ঠ উত্তর দিনাজপুরের হফতিয়াগছ সীমান্তের গ্রামবাসী। তাঁদের অভিযোগ, সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ‘প্রশ্রয়ে’ চোরাচালানকারীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছে। যে কারণে মহানন্দা নদীর উপর দিয়ে লুকিয়ে গরু পাচার যেমন হচ্ছে, তেমন কখনও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর চৌকির অদূর দিয়েও পাচার হচ্ছে। চোপড়ার তৃণমূল বিধায়ক হামিদুল রহমান বলেন, “চোরাচালান, বিশেষ করে গরু পাচার সীমান্ত এলাকার একটা বড় সমস্যা। তাতে বিএসএফ সরাসরি ভাবে যুক্ত রয়েছে।
তা না হলে কোনওদিনই অবাধে প্রতিদিন শ’য়ে শ’য়ে গরু ওপারে চলে যেতে পারে না। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো দু-পাঁচটা গরু ধরা হয়। বেশিরভাগই চলে যেতে দেওয়া হয়।” এলাকাবাসীদের অভিযোগ, প্রতিবাদ করতে গেলে বিশেষ লাভ হয় না।
অভিযোগ পরোক্ষে স্বীকার করে নিয়েছেন বিএসএফের নর্থ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের আইজি সঞ্জীবকৃষ্ণ সুদ। তিনি বলেন, “অভিযোগ বিষয়ে আমরা সচেতন। তাই কোনও জওয়ানকে দু’বছর বা তিন বছরের বেশি এক জায়গায় রাখা হয় না। যাঁদের বহাল রাখা হয়, তাঁদেরও একটানা ডিউটি দেওয়া হয় না।” বিধায়ক হামিদুল বলেন, “এই সমস্যা নিয়ে আমি দলীয় ভাবে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। গরু পাচার প্রতিরোধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে সংলগ্ন চুতিয়াখোর এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য সিপিএমের জাকির হুসেন অবশ্য গরুপাচার আগের চেয়ে অনেক কমেছে বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, “আগে দাসপাড়া, লক্ষ্মীপুর এলাকা দিয়ে ব্যপক চোরাচালান হত। এখন তা কিছুটা কমেছে বলেই জানি আমি।”
উত্তর দিনাজপুর জেলার হফতিয়াগছ এলাকা দিয়েই মহানন্দা নদী প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। নদীর উপর সীমান্তে কাঁটাতার নেই। ফলে সেখান দিয়ে অবাধে পাচার হচ্ছে গরু। সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড়। সেখান দিয়েই দেশের ভিতর চালান হচ্ছে গরুগুলি। তবে সেখান থেকে এক কিলোমিটারেরও কম দূরত্বে বিএসএফ ক্যাম্প। গ্রামবাসীদের দাবি তাঁদের নজর এড়ায় না কিছুই।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিটি গরু সীমান্তের এপারে ৮-১০ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। সীমান্ত পার করতে পারলেই গরু পিছু ২৫ হাজার মেলে। ফলে গরু পাচার বাড়ছে।
হফতিয়াগছ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সাক্ষরতার হার ৬১ শতাংশ। বেশিরভাগ মানুষই পেশায় দিনমজুর। স্থানীয় বাসিন্দা মোক্তার মহম্মদ বলেন, “শিক্ষার অভাব ও দারিদ্রের কারণেই অল্প বয়সের ছেলেরা কাঁচা টাকার লোভে এই কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাই চোরাপাচর রুখতে প্রথমে দরকার এলাকার উন্নয়ন।” মহকুমাশাসক নারায়ণচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের বিভিন্ন এলাকা উন্নয়ন প্রকল্পগুলি নিয়মিত ভাবে রূপায়ণ করা হয়। তবে আমরা দেখছি, কোথাও কোনও গলদ থেকে গিয়েছে কি না। ওই এলাকার উপরেও আমরা নজর বাড়াব।” |