ঝলমল করছে গোটা চন্দননগর।
আলো ছড়াচ্ছে পিসার হেলানো মিনার, কুতুব মিনার, মিকি মাউসরা।
চন্দননগর যেমন ‘জগদ্ধাত্রীর শহর’ হিসেবে খ্যাত, তেমনই এখানকার আলোর সুনামও ছড়িয়েছে নানা প্রান্তে। পুজোর দিনগুলিতে আলোয় ভাসে এ শহর। এ বারও আলোর খেলা মানুষের মন কেড়েছে।
যে ভিড়টা সপ্তমীর রাতে দেখা গিয়েছিল, অষ্টমীর দুপুরেই সেই ভিড়কে দেখা গেল রাজপথে, অলিগলিতে। সন্ধ্যা নামতেই শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই শুধু মানুষ।
রবিবার, ছুটির দিন। তাই জগদ্ধাত্রীর শহরে ভিড়ও বেশি। ভিড়ের একটা অংশ ট্রেনে চন্দননগর স্টেশনে নেমে পুজো দেখতে দেখতে ফিরছেন ভদ্রেশ্বর দিয়ে। অন্য অংশ করছে ঠিক উল্টোটা। তবে, আলোর বাহার কোথাও কম নয়। চন্দননগর স্টেশন রোড এবং গোটা জি টি রোড ধরে মাথা তুলেছে আলোর তোরণ। সেই সব তোরণের কোথাও ময়ূর নাচছে, কোথাও পাখি উড়ছে, কোথাও বা পিসার হেলানো মিনার। দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হচ্ছেন। |
এই আলো তৈরির প্রস্তুতি চলে বছরভর। আগে ছিল টুনির আলো। বেশ কয়েক বছর ধরে বাজার মাতাচ্ছে এলইডি। স্থানীয় শিল্পীরাই বড় বড় ফনমাইকা বোর্ডে নানা নকশা কেটে ফুটিয়ে তোলেন আলোর খেলা। কিন্তু তাঁরা এত মানুষের মন জয় করার পরেও যথাযোগ্য মর্যাদা পাচ্ছেন না বলে আক্ষেপ করেছেন আলোকশিল্পীরা।
পঞ্চাননতলার আলোকশিল্পী বাবু পাল এ বার তিনটি পুজোর আলোকসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন। আলোয় তিনি ফুটিয়েছেন আইফেল টাওয়ার, মিকি মাউস, জীবজন্তুর নাচ এবং তাদের ভাবভঙ্গি। চন্দননগর এবং আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ১৫০ জন কারিগরকে নিয়ে বছরভর চলে তাঁর কর্মকাণ্ড। তাঁর কথায়, “পুজোর কয়েক মাস আগে থেকে আলোক-শিল্পীরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে আলোর রূপ দেন। এলইডি চলে আসায় বিভিন্ন মডেল তৈরি করতে এখন খরচ অনেকটাই কমেছে। কিন্তু মন্দার কারণে এ বার কম দামে আলো দিতে হয়েছে। শিল্পীরাও ঠিকমতো মর্যাদা পাচ্ছেন না।” |
কুমোরপাড়ার আলোকশিল্পী অসীম দাস এ বার আলোয় ফুটিয়েছেন মুনি-ঋষি, ছোটদের সহজপাঠ, যান্ত্রিক কেরামতিতে তুলে ধরেছেন কঙ্কালের নাচ, ড্রাগনের মুখে আগুন। বড় বড় আলোর তোরণও বানিয়েছেন। চারটি পুজোয় দেখা যাবে তাঁর আলো। তাঁরও দাবি, এ বার দাম কম পেয়েছেন। এর পিছনে আর্থিক মন্দা কারণ হতে পারে বলে তাঁর ধারণা। নাড়ুয়ার আর এক আলোকশিল্পী অবশ্য সরাসরিই বলেন, “দেশে যে আর্থিক সঙ্কট চলছিল, তার জেরে আমাদের ব্যবসায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। এ বার বারোয়ারিগুলো আলো কম নিয়েছে। আমাদের লাভ কমেছে।” একই ব্যক্তব্য শোনা গেল আরও কয়েক জন আলোক-শিল্পীর মুখেও।
তবে, আক্ষেপ ভুলে পুজোর আনন্দেই এখন গা ভাসিয়েছেন সকলে। |