মোটরবাইকে চড়ে রাস্তায় ছিনতাই হামেশাই হচ্ছে। এ বার ভোরবেলা মোটরসাইকেলে চড়ে এসে রীতিমতো কলিং বেল বাজিয়ে এক গৃহবধূর হার ছিনিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেল এক দুষ্কৃতী।
রবিবার ভোরে অভিনব কায়দায় ছিনতাইয়ের এই ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়ার ঝাঁপুকুর এলাকায় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর এক জওয়ানের বাড়িতে। বাড়ির দোতলায় থাকেন নীলু দুবে নামে ওই গৃহবধূর দেওর, কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআইএসএফের ইনস্পেক্টর কমলেশ দুবে। বৌদির চিৎকার-চেঁচামেচি শুনে তিনি তড়িঘড়ি নেমে আসেন। কিন্তু তার আগেই বাইক নিয়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতী।
কমলেশবাবু কলকাতা বিমানবন্দরে কর্মরত। তিনি জানান, তাঁর দাদা শশিকান্ত ব্যবসা করেন। এ দিন ভোর ৫টা নাগাদ দাদা বেরিয়ে যান। আর ৬টাতেই বেজে ওঠে কলিং বেল। কমলেশবাবুর বৌদি নীলুদেবী দরজা খুলে দেখেন, লোহার গেটের বাইরে মোটরবাইক রেখে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। তার পরনে কালো রঙের জ্যাকেট আর জিন্সের প্যান্ট।
পুলিশকে দেওয়া কমলেশবাবুদের বয়ান অনুযায়ী, গেটের বাইরে থেকে যুবকটি জানায়, তার নাম সাজন। শশীবাবুর খোঁজ করে সে। তিনি ব্যবসার কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন শুনে যুবকটি তাঁর মোবাইল নম্বর চায়। নীলুদেবী তাঁর স্বামীর মোবাইল নম্বর দিতে চাননি। যুবকটি বলে, ‘আমার দু’টি নম্বর লিখে নিন। দাদা এলে ফোন করতে বলবেন।’ নীলুদেবীর কোনও রকম সন্দেহ হয়নি। লোহার গেটে তখনও তালা। যুবক দাঁড়িয়ে গেটের বাইরে। নীলুদেবী ঘরের ভিতরে গিয়ে খাতা-কলম নিয়ে এসে গেটের ফাঁক দিয়ে যুবকের হাতে তুলে দেন। যুবক দু’টি মোবাইল নম্বর লিখে খাতা আর কলমটি পাশের পাঁচিলের উপরে রেখে দেয়। পাশেই রাখা ছিল তার মোটরবাইক। ফিরে যাওয়ার ভঙ্গিতে সে সেই দিকে এগিয়ে যায়।
খাতা-পেন পাঁচিলের এমন জায়গায় রাখা হয়েছিল যে, সেগুলো ফেরত নেওয়ার জন্য নীলুদেবী গেট খুলতে বাধ্য হন। আর দুষ্কৃতী সেই মুহূর্তেই ঘুরে দাঁড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর উপরে। তাঁর গলা থেকে হার ছিনিয়ে নেয়। নীলুদেবীর চিৎকার শুনে কমলেশবাবু দৌড়ে নীচে নেমে আসেন। যুবকটি তার আগেই মোটরবাইকে চেপে পালায়। পরে চুঁচুড়া থানায় লিখিত ভাবে ঘটনাটির কথা জানান নীলুদেবী। কাজ ফেলে বাড়ি ফিরে আসেন শশীবাবুও।
পুলিশের মতে, মোটরসাইকেলে চড়ে ছিনতাই নতুন নয়। কিন্তু এ ভাবে বাড়ির কলিং বেল বাজিয়ে ভোরবেলা ছিনতাইয়ের ঘটনা অভিনব। সম্প্রতি নতুন নতুন কায়দায় বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের অনুমান, এক জন দুষ্কৃতীই এই ধরনের দুষ্কর্ম করে বেড়াচ্ছে। সে আগেভাগে গৃহস্থের বাড়ির খোঁজখবর নেয়। তার পরে সেই বাড়ির উপরে নজর রাখে। কে কখন বেরোচ্ছেন, কে কে বাড়িতে থাকছেন, সবই জেনে নেয়। তার পরে সুযোগ বুঝে সেই বাড়িতে গিয়ে বিশেষ করে মহিলাদের কাছে যা পায়, ছিনিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। নীলুদেবীর বাড়ির ব্যাপারেও সে আগে থেকে খোঁজখবর নিয়েছিল বলেই পুলিশের ধারণা। গৃহকর্তা যে ভোরে বেরোবেন, সেটা সে জানত। শশীবাবু বেরোনোর পরেই সে হানা দেয়। এবং অনেকটা কেপমারদের কায়দায় ছিনতাই করে পালিয়ে যায়। |