দিন-রাত এক করে তৈরি হয়েছে নাটক। কিন্তু নাটক হবে কোথায়? গ্রামীণ হাওড়ার বেশির ভাগ এলাকায় নেই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের হল।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য জেলায় প্রেক্ষাগৃহ রয়েছে তিনটি। হাওড়া শহরের শরৎ সদন, বালির রবীন্দ্র ভবন ও উলুবেড়িয়ার রবীন্দ্র ভবন। এ ছাড়া, কয়েকটি ব্লকে পঞ্চায়েত সমিতি কিংবা ব্লক অফিসে অনুষ্ঠানের জন্য হল থাকলেও সেগুলিতে পরিকাঠামোর অভাব স্পষ্ট। মাজুতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য একটি হল থাকলেও তার পরিকাঠামোও তথৈবচ। ডোমজুড় ব্লকের মৌড়ি বাজারে ‘গুরুদাস হল’ নামে একটি ছোট প্রেক্ষাগৃহ থাকলেও সেটির পরিকাঠামোও বেহাল। ফলে জেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংস্থা, ক্লাব, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি অনুষ্ঠান করতে গেলে ভরসা সিনেমা হল অথবা বিয়েবাড়ি। যেগুলি বেশিরভাগ সময়ই ফাঁকা মেলে না। পেলেও গুণতে হয় মোটা ভাড়া। ‘যুগ থিয়েটার’ গোষ্ঠীর কর্ণধার সমীর দাসের কথায়, “আগে নাটকের যে ধারা ছিল তাতে মুক্তমঞ্চে অভিনয় করা যেত। কিন্তু এখন প্রেক্ষাগৃহ ছাড়া নাটক জমে না। কিন্তু গ্রামে অনুষ্ঠানের জন্য কোনও হলই নেই।”
সিনেমা হলগুলির সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা দিনের জন্য হল ভাড়া গড়ে ২৫-৩৫ হাজার টাকা। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভাড়া নিলে (শো-এর সময় অপরিবর্তিত রেখে) ভাড়া দাঁড়ায় ১০-১২ হাজার টাকা। অনুষ্ঠান বাড়ির ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল বাড়ি ফাঁকা পাওয়া। বিয়ে বা অন্য কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানের সময় হলে এই হলগুলি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া দেয় না। তা ছাড়া রয়েছে শব্দ প্রক্ষেপণ (সাউন্ড সিস্টেম) ও স্টেজের সমস্যা। সাঁকরাইলের সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘অর্বাক’য়ের কর্তা সম্বরণ চক্রবর্তী বলেন, “অনুষ্ঠান বাড়িগুলির একদিনের ভাড়া ৫-৬ হাজার টাকা। তবে বিয়ে বা অন্য অনুষ্ঠানের সময় দ্বিগুণ ভাড়া দিয়েও হল পাওয়া যায় না।” |
জেলার জগৎবল্লভপুর ব্লকের সৃজনী নাট্য গোষ্ঠীর কর্ণধার নিমাই মল্লিক বলেন, “নিজেদের এলাকায় কোনও কমিউনিটি সেন্টার না থাকার কারণে অনুষ্ঠান বাড়ি ভাড়া নিতে হয়।”
কী বলছে প্রশাসন?
সমস্যা স্বীকার করে জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক জয়শ্রী মণ্ডল পাল বলেন, “পুরসভা বা পঞ্চায়েত সমিতিরই হল তৈরির ব্যাপারে উদ্যোগী হওয়ার কথা।” উদয়নারায়ণপুরের বিডিও সুরজিৎ দাস জানান, ব্লকে হল তৈরির প্রধান সমস্যা অর্থ। কারণ, রাজ্য সরকার থেকে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় তার বেশির ভাগই খরচ হয় পরিকাঠামোর উন্নয়নে। শ্যামপুর-১ এর বিডিও মৃণালকান্তি বাগচির কথায়, “জমি সমস্যায় কমিউনিটি হল তৈরির কাজ এগোয়নি।” জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ কল্যাণ ঘোষ বলেন, “ব্লকে ব্লকে কমিউনিটি সেন্টার তৈরি নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে।”
ব্লকে কমিউনিটি হল তৈরিতে ইতিমধ্যেই উদ্যোগী হয়েছে সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতি। সমিতির সহ সভাপতি জয়ন্ত ঘোষ বলেন, “জঙ্গলপুরের কাছে জমি খোঁজা শুরু হয়েছে। জমি পেলেই কাজ শুরু হবে।” জগৎবল্লভপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ মহম্মদ ইব্রাহিম (গোরা) বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির উদ্যোগে একটি দোতলা বাড়ি তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর একতলায় থাকবে দোকান। দোতলায় অনুষ্ঠানের জন্য হল তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে।”
এই সব পরিকল্পনা আদৌও রূপায়ণ হয় কি না তারই অপেক্ষায় জেলার সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলি। |