একটি টেলিভিশন চ্যানেলের ‘গেম শো’-এ যোগদানের পরীক্ষা উপলক্ষে দমদম এলাকার এক স্টুডিয়োয় বুধবার সন্ধ্যায় যে তাণ্ডব দেখা গেল, তাহার পরিণতি আরও ভয়ানক হইতে পারিত। এই ঘটনায় যে কোনও প্রাণহানি ঘটে নাই, তাহা সৌভাগ্য বলিয়া মানিতে হইবে। এমন উপলক্ষে এই ধরনের গণ্ডগোল প্রথম ঘটিল না। মাঝে মাঝেই এই সব অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করিয়া প্রতিবাদ, বিক্ষোভ জমিয়া ওঠে। অনেক সময় তাহা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে, কখনও কখনও ফাটিয়া পড়ে, ‘সংবাদ’ হয়। যেমন এই দিন হইয়াছে।
টেলিভিশন চ্যানেলে রিয়ালিটি শো বা অনুরূপ নানা অনুষ্ঠানের প্রচলন বাড়িতেছে, তাহাতে যোগদানে বহু মানুষ আগ্রহীও হইতেছেন। আপনাকে সমাজের নিকট পরিচিত করিবার তীব্র বাসনা ছাড়াও নানা ধরনের প্রতিযোগিতায় সাফল্য অর্জনের তাগিদ বহু মানুষকেই নিয়ত তাড়না করিয়া থাকে। এই ধরনের অনুষ্ঠান সেই সুযোগ আনিয়া দেয়। স্বভাবতই তাহাতে যোগ দিতে মফস্সল ও প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জ হইতে মানুষ আসিয়া পৌঁছান। রাত থাকিতেই স্টুডিয়ো কিংবা স্টেডিয়ামের আশপাশে ভিড় জমিতে থাকে। শিশু-কোলে মায়েরা শীত-গ্রীষ্ম উপেক্ষা করিয়া ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠায় দাঁড়াইয়া অপেক্ষা করিতে থাকেন। বুধবার দমদমের স্টুডিয়োয় যে অনুষ্ঠানের অডিশন হওয়ার কথা ছিল, তাহাতে গৃহবধূরাই ছিলেন প্রতিযোগী। দীর্ঘ সময় ধরিয়া লাইনে অপেক্ষা করার পর ক্ষুধা-তৃষ্ণায় কাতর ওই প্রতিযোগীরা যখন শোনেন যে, তাঁহাদের আর অংশগ্রহণের সুযোগ নাই, তখন তাঁহাদের মারমুখী প্রতিক্রিয়া অস্বাভাবিক নয়। হয়তো অডিশন বন্ধ হওয়ার খবরটি সত্য ছিল না। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও তাহা যে গুজব, সেটা প্রতিযোগীদের বুঝাইবার উদ্যোগ জরুরি ছিল। তাহার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল সতর্ক এবং তৎপর প্রস্তুতি।
এই ঘটনা হইতে অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা এবং প্রশাসন, দুই পক্ষেরই প্রয়োজনীয় শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি। এই ধরনের রিয়ালিটি শো-র অডিশনে যে প্রচুর ভিড় হইবে, হাজার-হাজার উৎসাহী প্রতিযোগী ও তাঁহাদের আত্মীয়বান্ধবরা সমবেত হইবেন, ইহা একপ্রকার প্রত্যাশিতই। তদনুযায়ী পুলিশকে আগাম সতর্ক করা প্রয়োজন ছিল, যাহাতে ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকে এবং গণ্ডগোলকারীদের উপর নজর রাখা যায়, দরকারে শায়েস্তা করাও। উদ্যোক্তারা কিন্তু তাহা করেন নাই। পুলিশের তরফেও জানানো হইয়াছে, অনুষ্ঠান সম্পর্কে তাঁহাদের যে সকল তথ্য সরবরাহ করা হয়, তাহার সহিত বাস্তব অবস্থার অসঙ্গতি ছিল। এমন অসঙ্গতিই কিন্তু বিপত্তি ডাকিয়া আনে। যেখানে এত বিপুলসংখ্যক মহিলা গ্রাম-গ্রামান্তর হইতে সমবেত হইতেছেন, সেখানে অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সামাল দিতে কেন পর্যাপ্তসংখ্যক মহিলা পুলিশ মোতায়েন ছিল না, সেই প্রশ্নও গুরুতর। ভাঙচুর চলার সময় বেশ কিছু যুবকও (যাঁহাদের অডিশনের সহিত বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নাই) মহিলাদের সঙ্গে তাণ্ডবে হাত লাগান। কিছু কাল আগে এই দমদমেরই একটি বালিকা বিদ্যালয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের নামে অভিভাবকদের ছদ্মবেশে ভাঙচুরে যোগ দেওয়া বহিরাগত যুবকদের প্রসঙ্গটি স্মরণীয়। কিছু লোক যে সর্বদাই গোলমাল পাকাইবার সুযোগ খোঁজে এবং সুযোগ পাইলেই ভাঙচুর, লুঠপাট, অগ্নিসংযোগে লিপ্ত হয়, তাহা অজানা নহে। এই কারণেই সমস্ত পক্ষের অনেক বেশি দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। |