সম্পাদক সমীপেষু...
মানা এবং না মানা: স্বাধীনতা থাক
তসলিমা নাসরিনের প্রবন্ধটি (‘পুংপুজো’, রবিবাসরীয়, ২৭-১০) নারীবাদকে যথোচিত মর্যাদা দিয়ে পড়েও মনে হল, শুধুমাত্র বিদ্বেষ এবং বিরোধিতার জন্যই কি আমরা এক পক্ষ অপর পক্ষের সম্বন্ধে বিষোদ্গার করব? নারীকে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তো নিতে হবে। পুরুষের জীবনে যেমন নারীর ভূমিকা অপরিহার্য, ঠিক তেমন ভাবেই নারীও কিন্তু সম্পূর্ণ হয় পুরুষের সাহচর্যে, বন্ধুত্বে। আমরা নারীরা কি একটু বেশি মাত্রায় (অকারণেও বটে) পুরুষ-বিদ্বেষী হয়ে পড়ছি না? পুরুষকে তাদের শারীরিক, মানসিক গঠন ইত্যাদির জন্য দায়ী করা চলে কি? পুরুষ সমাজ তো নিজে নিজে নিজেদের ইচ্ছায় উদ্ভূত হয়নি!
দ্বিতীয়ত, লেখিকা যে সব বিশেষ বিশেষ আচার-অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন, মনে হয় সে সব বিষয়ে তাঁর ব্যক্তিগত ধারণা কিছু অংশে ভ্রান্ত বা অসম্পূর্ণ। ঠিকই, আমাদের সমাজে মহিলাদের নানা আচার-অনুষ্ঠান, ব্রত পার্বণ পালনের কিছু রীতি আছে। তবে এই সব আচার-অনুষ্ঠান, ব্রত পালন আজ আর পঞ্চাশ দশকের কঠিন দুর্ভেদ্য নিয়ম-শৃঙ্খলায় আবদ্ধ নেই। আজ নারীরা নিজের মতো করে স্বেচ্ছায়, আনন্দে, আন্তরিকতায় এই সকল ব্রত পালন করেন। সমাজের চোখরাঙানি তাঁদের বাধ্য করে না বা তাড়িয়ে বেড়ায় না। আমি আমার নিজের জীবন, আশপাশের বন্ধু, সমাজ থেকে তা উপলব্ধি করেছি।
আজ আমি মধ্য ষাটের এক জন মহিলা। কর্মজীবনে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছি। সত্তরের দশকে বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করা ইস্তক খুব সংক্ষিপ্ত কিছু সময়ের পরে শাঁখা, সিঁদুর, লোহা ইত্যাদি ব্যবহারের অথবা কোনও ধরনের কোনও ব্রত, আচার-অনুষ্ঠান, পুজো-পার্বণ (যা কিনা লেখিকার মতে শুধুমাত্র স্বামী বা সঙ্গীর মঙ্গল কামনায় করা হয়ে থাকে) পালনের কোনও চাপ আমার শ্বশুরবাড়ি বা সমাজব্যবস্থা থেকে অনুভব করিনি। সে জন্য বিগত চল্লিশ বছরে কখনও সমালোচিত, ধিক্কৃত বা নিন্দিত হয়েছি বলেও মনে পড়ে না।
তৃতীয়ত, পারস্পরিক মঙ্গল কামনা তো মানব জীবনের ধর্ম। তাই যাঁর মঙ্গল কামনা করছি (এই সকল এত, আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে) তিনি যদি আমার স্বামী, ভাই বা পিতা হন, তাতে আপত্তি কোথায়? অবশ্যই তা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত নয়। কিন্তু যাঁরা সংস্কার এবং বিশ্বাসের ভিত্তিতে স্বেচ্ছায় তা পালন করতে চান, তাঁদের জন্য তা বর্জনীয়ই বা হবে কেন? খোঁজ নিলে দেখা যাবে, যে নারী এ সব আচার-অনুষ্ঠান উপোস-ব্রত ইত্যাদি করেন, তা তাঁরা ভালবেসেই করেন। অন্তত এখন। আর যাঁরা এ সবে বিশ্বাসী নন, তাঁরাও কোনও ভাবে নিন্দিত, ধিক্কৃত বা সমালোচিত হন না বলেই বিশ্বাস।
এ তথ্য লেখিকা কোথায় পেলেন যে, পুরুষ সমাজ বা একক পুরুষ নারীর বা নারী সমাজের মঙ্গল কামনা করেন না? এক জন বাবা অহরহ তাঁর কন্যা সন্তানের মঙ্গল কামনা করেন, ভাই তাঁর বোনের মঙ্গল কামনা করেন। স্বামীও তাঁর স্ত্রীর মঙ্গল কামনা করেন। হয়তো তাঁদের প্রকাশভঙ্গি কিছুটা আলাদা। যা প্রকাশ্যে হয়তো কখনওই আসে না।
লেখিকার মতে, যাঁরা ধর্ষণ, অত্যাচার, অনাচারের বিরুদ্ধে সরব হচ্ছেন, তাঁরাই আবার এ সব ব্রত পার্বণের মাধ্যমে পুরুষ সমাজের মঙ্গল কামনা করছেন। বুঝে উঠতে পারলাম না, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস দেখালে বা অন্যায়কে মেনে না নিলে, আমার ব্রত-উৎসব পালনের অধিকার থাকবে না কেন? কেনই বা যাঁরা এ সব বিষয়ে বিশ্বাসী, তাঁদের হীন চোখে দেখা হবে? আর, এক জন ধর্ষকের অপরাধের বিরুদ্ধে সরব হতে গিয়ে গোটা পুরুষ সমাজকে হেয় করতে হবে, নিজের বাড়ির পুরুষ সদস্যদের মঙ্গল কামনা করা যাবে না, এ কেমন বিধান?
জোর করে বিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে কেন?
শাশ্বতী ঘোষের আলোচনার (‘বিবাহ বিচ্ছেদ...’, ৩০-১০) সূত্র ধরে বলি, বিবাহবিচ্ছেদ বিষয়ক আইন রচিত হওয়া উচিত আর্থিক প্রেক্ষিতের উপর ভিত্তি করে। ধরুন, যাঁর হাতে যথেষ্ট টাকা রয়েছে আর যাঁর হাতে টাকা নেই, এমন দু’ বিবাহিত নারীর জন্য সুরক্ষা আইন কি এক হওয়া উচিত? ক্ষতিপূরণ ছাড়া অন্যান্য আইনি সুবিধার কি শ্রেণিবিভাগ থাকা উচিত নয়?
বিবাহবিচ্ছেদ সংক্রান্ত এক একটি মামলা দশ বারো বছর ধরে চলছে। ব্যাপারটা অনেকটা থানার সামনে পড়ে থাকা অ্যাকসিডেন্ট করা গাড়ির মতো। আইনি ঝামেলায় পড়ে থেকে থেকে তার উপর বটগাছ শিকড় ছড়িয়ে দেয়। এ ধরনের আইন অবিলম্বে সংশোধন করা উচিত।
বহু যুবকযুবতী আইনের ভয়ে বিয়ে করতে চান না। অনেক শিক্ষিত পুরুষ ও মহিলা ‘লিভ ইন’ করেন, আইনের ভয়ে বিয়ে করতে চান না। অনেকে ডিভোর্সের পর পুনর্বিবাহ করতে চান না আইনের ভয়ে।
বর্তমান বিবাহ আইন সামাজিক বিকার সৃষ্টি করছে মাত্র। বিচ্ছেদ প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। সম্পর্ক যেখানে মৃত, সেখানে সময় নষ্ট না করে দ্রুত জীবনে ফিরে আসার সুযোগ দেওয়া উচিত। আইন দ্বারা কাউকে জোর করে দীর্ঘকাল বন্দি করে রাখা দাসপ্রথারই নামান্তর।
মুখের কথায় নয়
সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, আমলাদের সব নির্দেশই দিতে হবে লিখিত ভাবে। এ নীতি সব সরকারি কর্মীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হওয়া উচিত। আমলারাও অনেক সময় মন্ত্রীর মুখের কথায় বা অন্য কারণে অধস্তন কর্মীদের দিয়ে নানা অন্যায় কাজ করিয়ে নেন। নিয়ম হোক, আধিকারিকরা কোনও ফাইলে ‘প্লিজ স্পিক’ লিখতে পারবেন না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.