বৈধ অনুমতিপত্র আছে বাস মালিকদের। তা সত্ত্বেও মহকুমার একাধিক রুটে বাস ও মিনিবাস চালাচ্ছেন না তাঁরা। ফলে, অসুবিধায় পড়ছেন আসানসোল মহকুমার প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা।
বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে পরিবহণ কর্মী সংগঠনগুলি। সম্প্রতি এ ব্যাপারে মহকুমাশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছে তৃণমূল প্রভাবিত ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’। সমস্যার কথা স্বীকার করেছে আইএনটিইউসি এবং সিটুও। এ বিষয়ে সবিস্তার খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মহকুমার অন্তত ১০টি রুটে বাস ও মিনিবাস চলছে না। সব ক’টিই প্রত্যন্ত এলাকা। অথচ, নিয়ম মেনেই এই সব এলাকার জন্য বাসের রুট তৈরি করেছে পরিবহণ দফতর। সংশ্লিষ্ট দফতরের এক আধিকারিক জানান, এ সব এলাকার রাস্তা, জনবসতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রয়োজনের গুরুত্ব বিবেচনা করেই রুট তৈরি করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির প্রেক্ষিতে আগ্রহী বাস মালিকেরা আবেদনপত্র জমা করেছেন। বাছাই করে বাস মালিকদের চূড়ান্ত অনুমতিপত্র দেওয়া হয়েছে। কিছু দিন ওই সব রুটে বাসও চলেছে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেখানে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, আসানসোল থেকে রানিগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল হয়ে মেজিয়া ঘাট পর্যন্ত রুটে বাস চলে না। বাসটি মেজিয়া ঘাট পর্যন্ত না গিয়ে রানিগঞ্জে থেমে যায়। বরাকর থেকে আসানসোল হয়ে চুরুলিয়া পর্যন্ত একটি রুটে মিনিবাস চলার কথা। কিন্তু বাসটি আসানসোলেই থেমে যায়। আসানসোল থেকে বরাকর, ডিসেরগড় হয়ে বাঁকুড়ার মুরাড্ডি, রামচন্দ্রপুর চোখের হাসপাতাল পর্যন্ত একটি রুটে মিনিবাস চালানোর ব্যবস্থা করা হয়। এক্ষেত্রে বাসটি চলে ডিসেরগড় পর্যন্ত। সালানপুরে অজয়ের তীরবর্তী আমুলিয়া ঘাট থেকে বরাকর পর্যন্ত রুটে এক জন বাসমালিককে বাস চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। তিনি প্রথম কিছুদিন চালিয়ে বাস বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। আসানসোল থেকে তালতোড় গ্রাম হয়ে জামুড়িয়া পর্যন্ত একটি রুটে বাস চালানো হয়েছিল। কিন্তু সেটি বর্তমানে তালতোড় না গিয়ে সরাসরি জামুড়িয়া যায়। আসানসোল থেকে বহুলা গ্রাম হয়ে রানিগঞ্জ পর্যন্ত একটি রুট চালু করা হয়েছিল। সেই বাসও বহুলা গ্রামে যায় না, সরাসরি রানিগঞ্জ যায়।
আসানসোল স্টেশন থেকে এসবি গড়াই রোড, কোর্ট হয়ে বার্নপুরের কালাঝরিয়া পর্যন্ত একটি রুট তৈরি করা হয়। কয়েক জন মালিক সেখানে বাস চালানোর জন্য অনুমতি নেন। অভিযোগ প্রথম কিছুদিন এই রুটে বাস চালালেও এখন তাঁরা এসবি গড়াই রোড, কোর্ট হয়ে যায় না, সরাসরি বার্নপুর হয়ে কালাঝরিয়া চলে যায়। পাঁচগাছিয়ার বেলিয়াবাথান থেকে আসানসোল ও জেকে নগর পর্যন্ত একটি রুট চালু করা হয়। এই রুটের বাসটিও বর্তমানে বেলিয়াবাথান না গিয়ে আসানসোল থেকে জেকে নগর হয়ে পাঁচগাছিয়া যায়। এ রকমই আরও কিছু রুটে বাসগুলি নির্দিষ্ট গন্তব্যে বা নির্ধারিত পথে না গিয়ে খেয়ালখুশি মতো চলছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবহণ কর্মী সংগঠনগুলির। ফলে, আসানসোল শহর-সহ নানা এলাকায় যাতায়াতে বিপাকে পড়েছেন মহকুমার দূরবর্তী এলাকার মানুষজন। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন পড়ুয়ারা।
মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়ার অভিযোগ, “পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের একাংশ বাস মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে এমন কাণ্ড ঘটাচ্ছেন।” তাঁর দাবি, ওই সব রুটে যাত্রী সংখ্যা কম। বাস চালিয়ে লাভ হয় না। তাই মালিকরা বাস চালাচ্ছেন না। আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, “আমরা সম্প্রতি সভা ডেকে বাস মালিকদের নির্দিষ্ট রুটে বাস চালানোর পরামর্শ দিয়েছি।” তিনি আরও জানান, প্রশাসনকে চিঠি লিখে তাঁরা জানিয়েছেন, যে সব রুটে বাস চালানো হচ্ছে না সেগুলির মালিকদের ডেকে বাস চালানোর নির্দেশ দেওয়া হোক। যদি ওই মালিকেরা বাস চালাতে রাজি না হন তাহলে তা অন্য ইচ্ছুক বাস মালিকদের দেওয়া হোক। মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানিয়েছেন, বেশ কিছু রুটে বাস চলাচল করছে না, কর্মী সংগঠনের স্মারকলিপি থেকে তা জেনেছেন। পরিবহণ দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছেন। যত দ্রুত সম্ভব এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস তাঁর। |