ছেলের বৌ এখন বেস্ট গার্লফ্রেন্ড

সামনে ছেলের বিয়ে। শ্বশুরমশাই হয়ে যেতে বাকি আর ক’টা দিন। সিনিয়র হয়ে যেতে মন খারাপ হচ্ছে না? আপনি তো চিরযৌবনবাবু...

আমি ছেলের বৌকে আমার বান্ধবী করে নিয়েছি। আমি ওর বেস্ট বয়ফ্রেন্ড। আর ও আমার বেস্ট গার্লফ্রেন্ড।

বাংলা ছবিতে প্রায় সব নায়িকারই বাবা, দাদু সেজেছেন— বাস্তবে ওঁরা কি আপনার মেয়ের মতো? না নাতনির মতো?
কোনওটাই নয়। পুরোপুরি বান্ধবী...

এই সব নায়িকা-বান্ধবীদের মধ্যে কে কে আছেন?
প্রায় সবাই। ঋতুপর্ণা থেকে কোয়েল, শুভশ্রী, শ্রাবন্তী পায়েল—সব্বাই।
আসলে একটাই কথা, ‘ফুলের বলে যার কাছে যাই তারেই লাগে ভাল....’

এত বান্ধবীর ঘনঘটা। স্ত্রী রেগে যান না?
না। অনেক দিন হয়ে গিয়েছে। এখন রাগে না। জানে লাটাই তারই হাতে।

দাম্পত্য একঘেয়ে লাগে না?
যখন একঘেয়ে লাগে, বৌকে ‘শেষের কবিতা’ পড়ে শোনাই। বাঙালির প্রেমের আইকন এখনও অমিত রায়-ই।

বৌ কি আপনাকে অমিত রায় ভাবেন?
না, বিশ্বজিৎই ভাবে মনে হয়। বিশ্বজিৎ হিসেবেও আমি বেশ প্রেমিকপুরুষ। আমার মনে হয় বাজার থেকে বৌয়ের জন্য অগ্নিমূল্য পেঁয়াজ কিংবা দুষ্প্রাপ্য আলু কিনে এনেও প্রেম নিবেদন করা যায়। তবে কী, বৌদের একটাই দোষ। তাঁরা পরকীয়া-টরকীয়া নিয়ে একেবারেই ভাবতে চায় না।

আপনার পরকীয়া আছে নাকি?
আরে বাবা...পরকীয়াটাই তো আসল। বৌ বাদে যে কোনও বান্ধবীর সঙ্গে আড্ডা, গল্প, ফাজলামি ...সবটাই পরকীয়ার আন্ডারে পড়ে....

ইন্ডাস্ট্রির কেউ কেউ কিন্তু আপনাকে রীতিমতো ওম্যানাইজারও বলেন।
মোটেই ওম্যানাইজার নই। আমাকে যে সব অভিনেত্রী পছন্দ করেন, তাঁরা সকলেই আমার বৌয়ের বন্ধু। এখন তনিমা (সেন)য়ের সঙ্গে নিয়মিত শ্রুতিনাটক-আবৃত্তি করছি, তাই বলে কি তনিমাকে ওম্যানাইজ করেছি— কী যে বলেন!

বোঝা গেল। তা এই যে এত রংচঙে জামাকাপড় পরেন— সবই নিজের পছন্দ?
অল্প বয়সে হালকা রং-ই তো পরতাম। বয়স যত বাড়ছে ততই রঙিন পোশাক পরতে ইচ্ছে করছে। প্রথম প্রথম বৌ একটু চমকেছিল। এখন দেখছি নিজেই রঙিন জামা কিনে আনে। হা হা হা হা।

বৌয়ের সঙ্গে আলাপ কী ভাবে?
ও আমার প্রায় সমবয়সি। ওর বাবা আর আমার বাবা বন্ধু ছিলেন। খড়গপুরে থাকত ওরা। বিয়ের পর আমরা লোকাল ট্রেনে চেপে চন্দনের ফোঁটা পরে বর-বৌ সেজে ভাঁড়ে চা আর ঝালমুড়ি চিবোতে চিবোতে কলকাতায় এসেছিলাম। এখন ভাবলে প্রচণ্ড হাসি পায়।
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল
মানে জীবনের হাসির নাটক তখন থেকেই জমে উঠেছিল? ভেতরে ভেতরে এই রসিক মনটাকে এত প্রবল ভাবে জাগিয়ে রাখেন কী ভাবে?
খুব কঠিন বলে মনে হয় না। ওই পুরনো উদাহরণটাই দিই— গেলাসটাকে কী ভাবে দেখব? অর্ধেক শূন্য, না অর্ধেক পূর্ণ?

একটু অন্য কথায় আসি। ইন্ডাস্ট্রিতে নাকি আপনি অজাতশত্রু....
কেবল একটা ব্যাপার মানি। পজিটিভ চিন্তাভাবনা করলে মানুষকে ভালবাসতে সুবিধে হয়। ভালবাসা পাওয়া যায়। আমি অন্যের কথা মন দিয়ে শুনি। এটা খুব দরকার বোধ হয়। অন্যকে গুরুত্ব দিলে নিজেরও একটা জায়গা করে নেওয়া যায়। ভালবাসাও পাওয়া যায়। ইন্ডাস্ট্রিতে কিছু সিনিয়র বলে থাকেন এখনকার ছেলেমেয়েরা অভিনয় শিখছে না। বড় তাড়াতাড়ি অর্থ-যশ পেয়ে যাচ্ছে। আমার মনে হয় ওদেরও মনন আছে, যেটা এই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেছে। ইয়াং জেনারেশনকে গ্রহণ করতে পারলে সহজে শত্রু হবে না কেউ।

অনেক দেরিতে অভিনয়ে এসেও আপনি তো প্রায় একশো বাহাত্তরটা ছবি, দেড়শোটার মতো টেলিফিল্ম আর প্রচুর সিরিয়াল আর নাটকে অভিনয় করেছেন। আবৃত্তি ও শ্রুতিনাটকও আছে। কী করে করেন এত কাজ একসঙ্গে?
একদিন শু্যটিংয়ের ফাঁকে সৌমিত্রদা আমাকে ডেকে বললেন, “কাল তোকে দেখলাম।” আমি বললাম কোথায়? সিরিয়ালে? সৌমিত্রদা বললেন, “না ওই অ্যানিম্যাল প্ল্যানেটের কুমিরটা তুই ছিলিস না?” মানে এত কাজ করছি যে আমাকে কুমিরের রোলেও ভাবাই যায়। এই ভাবেই হাসি-মজা করে বহু কাজ একসঙ্গে করে যাই। এই তো সে দিন লন্ডন যাচ্ছি, আনন্দবাজারের এক প্রখ্যাত সাংবাদিকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, চাঁদে যদি জল পাওয়া যায়, কী হবে? এক জন বলে উঠলেন— তা হলে তো কোনও অসুবিধেই নেই। শুধু হুইস্কিটা নিয়ে গেলেই হবে। অভিনয়টা প্রেম। আর রসিক মনটা জাগিয়ে রাখি বলেই এত কাজ এক সঙ্গে করতে পারি।

চার্টাড অ্যাকাউন্টেসির একটা ফার্ম ছিল আপনার। সেটা এখনও চালু?
অবশ্যই। ফার্মের পাঁচটা ছেলের জীবিকা আমার ওপর নির্ভর করে। রাতে দু’ঘণ্টা হিসেবনিকেশ নিয়ে বসি। ইন্ডাস্ট্রির কিছু শিল্পীর খাতাও আমাকে দেখতে হয়।

তা হলে তো কার কত টাকা আছে জানেন...
তা একটু আধটু জানি বইকী!

আর নিজের জীবনের হিসেবনিকেশে কতটা পাকা আপনি?
জীবনের কোনও হিসেবনিকেশ হয় না। ওটা আপন খেয়ালে চলে। হিসেবের বাইরে।

আর এই যে আপনার গোলগাল চেহারা, একটা নেয়াপাতি ভুঁড়ি— এগুলো কমাতে ইচ্ছে করে না?
পর্ণশ্রীতে আমাদের বাড়ির সামনে অতি মনোরম লেকে নিয়মিত হাঁটি। তাতে কিছুটা ব্যায়াম হয়।

লোকজন ঘিরে ধরে না?
ওই নেগোসিয়েশনটা নিজের সঙ্গে। আমি যদি চাই আমি মবড্ হব, তা হলে আমার বডি ল্যাঙ্গোয়েজ, চাউনি, আলাদা হবে। আর আমি যদি চাই আমি মানুষের সঙ্গে মিশে হাঁটব তা হলে কিন্তু কেউ এগিয়ে এসে ঘিরে ধরবে না। আমি খুব ক্যাজুয়্যালি হাঁটি। পাড়ার মোড়ে কুটুর চায়ের দোকানে ভাঙা বেঞ্চে বসে বিভিন্ন বয়সের লোকজনের সঙ্গে আড্ডা দিই। বাজারটাও নিজে হাতে করি। এমনকী পাড়ার ক্লাবের পুজোর হুজুগেও আছি।

একটা সময় উৎপল দত্ত, রবি ঘোষ, অনিল চট্টোপাধ্যায়, তরুণকুমার— এঁরা সবাই বাংলা ছবিতে দাপিয়ে রাজত্ব করেছেন। নিজেকে কখনও তাঁদের উত্তরসূরি মনে হয়?
ওঁদের সঙ্গে আমার কোনও তুলনা হয় না। ওঁদের লেগ্যাসি আমি টানছি, এমন কথা ভাবতেও আমার ভয় লাগে। বিশেষ করে এখনও যেখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দীপঙ্কর দে, দুলাল লাহিড়ি, পরান বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বাঘা বাঘা চরিত্রাভিনেতা আছেন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘কিং লিয়ার’ নাটকে গ্লস্টার করে কেমন অনুভূতি হয়েছিল?
একটা মানুষ পারফেকশনের জন্য কত দূর যেতে পারে সেটা শিখেছি ওঁর কাছে। আমরা বাকিরা ক্লান্ত হয়ে যেতাম। কিন্তু সৌমিত্রদা চাইতেন রোজ রিহার্সাল। একদিন সৌমিত্রদার শরীরটা ভাল ছিল না। অভিনয় করার সময় মাথাটা টলে গেল। সঙ্গে সঙ্গে আমি ওঁর হাত ধরে ফেলে সংলাপ বলতে লাগলাম। কিন্তু যেই উনি একটু সুস্থ বোধ করলেন, আমার হাতটা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে আগের মতো দাপিয়ে অভিনয় করতে লাগলেন।

আপনার প্রিয় চরিত্র মগনলাল মেঘরাজ। ‘যত কাণ্ড কাঠমান্ডুতে’-ও মগনলাল মেঘরাজ আছেন। এই গল্প যদি ছবি হয় আর আপনাকে যদি মগনলালের রোলটা দেওয়া হয়, আপনি কি উৎপল দত্তের মতো করেই অভিনয় করবেন?
‘টিনেটোরেটোর যিশু’-তে হীরালাল সোমানি করার পর মনে হয় না সন্দীপ আমাকে এ চরিত্র করতে দেবে। আর যদি দেয়, উৎপল দত্তের হাবভাবটাই বজায় রাখার চেষ্টা করব। ওঁর মগনলালকে ছাপিয়ে যাওয়ার দুঃসাহস, স্পর্ধা আমার নেই।

এত দেরিতে বাংলা বিনোদনের জগতে এলেন। এত জনপ্রিয়তা হল। মনে হয় না— আগে এলে আরও বেশি হত?
এটাও মনে হয় হিরো হয়ে কাজ করার পর চরিত্রাভিনেতা হওয়ার সময় হয়তো কষ্ট পেতাম। তার থেকে এই ভাল। চরিত্রাভিনেতা হয়ে এসেছি। এ ভাবেই থেকে যাব। বেশ আছি আমি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.