|
|
|
|
এখানে বরযাত্রী ভাড়া পাওয়া যায় |
স্মার্ট দেওর। রাশভারী জ্যাঠাশ্বশুর। স্টাইলিশ বৌদি। সম্ভ্রান্ত চেহারার মাসিমা-কাকিমা। হাজির সবাই।
বিয়েবাড়িতে
ঠিক যেমনটা চাই, তেমনটাই। কিন্তু সবটাই সাজানো। লিখছেন অরিজিৎ চক্রবর্তী |
পাত্রটি মোটেও গঙ্গারাম নয়।
দুবাইতে থাকে। ভাল রোজগার।
মেয়েপক্ষও ফেলনা নয় একেবারে। মেয়ে সুন্দরী। মেয়ের বাবা সরকারি চাকরি করেন।
সমস্যা খালি একটাই। মেয়ের বাড়ি মফস্সলে। আত্মীয়স্বজনকে সে অর্থে ঠিক স্মার্ট বলা যাবে না। আটপৌরে কাপড় জড়ানো পিসি আর চপ্পল পরা মামাকে কন্যাযাত্রী নিয়ে গেলে তো ছেলের বাড়ির কাছে প্রেস্টিজ পাংচার!
সমস্যা কী? নিতাইদা তো আছেন। শহরে, মফসস্লে, দিনে, রাতে যখনই এমন সমস্যায় পড়বেন নিতাইদাকে স্মরণ করবেন। তিনিই সরবরাহ করবেন স্মার্ট, ইংরেজি বলা, ডিজের তালে নাচতে পারা কন্যাযাত্রী। সময় বিশেষে বরযাত্রী। এমন সমস্যার গুগুলদাদা।
কী ‘শুধ্ দেশি রোম্যান্স’য়ের ঋষি কপূরের কথা মনে পড়ছে? হ্যাঁ, ঠিকই। ঋষি কপূরের মতোই নিতাই চক্রবর্তী, শম্ভুনাথ দাস সাপ্লাই করেন বারাতি। ‘বারাতি’ই বটে, বরযাত্রী বললে ঠিক ব্যাখ্যা করা যাবে না।
অনেক দিন ধরেই বরযাত্রী আউটসোর্স করছেন নিতাই চক্রবর্তী। বিভিন্ন লোক বিভিন্ন কারণে শরণাপন্ন হন তাঁর। কারও সমস্যা শহুরে আত্মীয় না-থাকা। তাই অন্য পক্ষের কাছে লজ্জায় যাতে না-পড়তে হয়, দ্বারস্থ হন। কারও আবার তিন-কুলে কেউ নেই। তাঁর বিয়েতেও নিকটাত্মীয় সাজিয়ে নিয়ে যেতে হয় কয়েকজনকে। আপনার চাপ খালি পাত্র-পাত্রী ঠিক করা। “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখি গ্রাম বা মফসস্লের মেয়ে বা ছেলের বিয়ে ঠিক হয়েছে শহরে। কিন্তু আত্মীয়রা তো আর ‘শহুরে’ নয়। শ্বশুরবাড়িতে নাক কাটা যাবে। ফলে কিছু লোককে ভাড়া করতে হয় আত্মীয় সাজিয়ে,” বলছিলেন নিতাই। |
|
সিনেমায় যেমন হয়: ‘শুধ্ দেশি রোম্যান্স’য়ে ঋষি কপূর। সঙ্গে ভাড়াটে বারাতি সুশান্ত সিংহ রাজপুত ও পরিনীতি চোপড়া |
বরযাত্রী বা কন্যাযাত্রী সাজানোর জন্য প্রথম পছন্দ শহরে হোস্টেলে থাকা ছেলে-মেয়ে। মফসস্লের অনেক ছেলেই কলকাতায় হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন। কিছু টাকা আর বিনাপয়সায় খাওয়া তাঁরাও এমন সুযোগ ছাড়েন না। আবার মফসস্লের ছেলে-মেয়ে হওয়ায় গ্রাম থেকে যাওয়া বরযাত্রী-কন্যাযাত্রীর সঙ্গে সহজেই মিশে যেতে পারেন।
দীনেশ, রাতুল, গৌরব কলেজে পড়ার সময় বেশ কয়েক বার গিয়েছিলেন এমন ভাড়ার কন্যাযাত্রী সেজে। ‘থ্রি ইডিয়টস’য়ের র্যাঞ্চো বলেছিল না, বিয়ে বাড়িতে খাওয়ার জন্য ‘স্রেফ ইউনিফর্ম লাগতে হ্যায়, ইউনিফর্ম’। এঁদের তো আবার ইউনিফর্মের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি বলা, শহুরে আদবকায়দাও রপ্ত হয়ে গিয়েছে হোস্টেলে থেকে। “হোস্টেলের খাওয়ার কথা তো সবাই জানে। ফ্রি খাওয়া পেলে তাই আর ছাড়ব কেন? শুধু তো খাওয়া না, দু’-পাঁচশ’ টাকাও দিব্যি ঢুকে যায় পকেটে। আর বিয়েবাড়িতে ঝারি মারা তো বাড়তি পাওনা,” হাসতে হাসতে জানালেন দীনেশ রায়।
কিন্তু ঝারি মারতে গিয়ে যদি পাত্রের বোন প্রেমে পড়ে যায়? তার থেকেও বড় বিপদ যদি মেয়েটির বাবা পছন্দ করে ফেলেন। রাতুল সেন জানালেন, “না, অতটা ঝামেলা হয়নি কখনও। তবে একবার এমনই এক বিয়ে বাড়িতে গিয়ে একটা মেয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায়। তা থেকে প্রেম। তবে কিছু দিনের মধ্যেই ওকে জানিয়ে দিয়েছিলাম আমার আসল পরিচয়।”
‘বিবাহ অভিযান’? তা বটে। কখনও কি ‘বিবাহ অভিযান’য়ের ধাঁচে নকল গোঁফ খুলে যাওয়ার মতো বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে? “অতটা ঝামেলায় পড়তে হয়নি কখনও। বেশির ভাগ সময়ই যে বাড়ির হয়ে যাই, তাঁদের সম্বন্ধে একটা ছোটখাটো ক্র্যাশ কোর্স নিতে হয়। এই তো কিছু দিন আগে বেহালায় এক বিয়েবাড়িতে গিয়েছি। ও দিকে সেমেস্টার এক্জাম। ভাল করে মন দিয়ে শুনিনি। মেয়ের বাড়ির পদদিটাই না-জেনে চলে গিয়েছি কন্যাযাত্রী সেজে। ভাগ্য ভাল ছিল, আমি পিসতুতো ভাই হয়ে গিয়েছিলাম, খুড়তুতো ভাই হলে কেলোর কীর্তি হত,” বললেন গৌরব সামন্ত।
শুধু বর বা কনের নাম-ধাম-পদবি জানলেই কিন্তু হবে না। অনেক ক্ষেত্রে নাচতে জানতে পারাটাও অন্যতম শর্ত এঁদের কাছে। এখন প্রায় সব বিয়েবাড়িতেই ডিজের রমরমা, তার ওপর বাঙালিদের সঙ্গে ভিনপ্রদেশীদের বিয়ে হলে তো কথাই নেই। আর এই নাচ জানলে রেটও বেড়ে যায় চড়-চড় করে। স্বাভাবিক ধোপদুরস্ত কাপড় পরা, ইংরেজি বলা স্মার্ট দেখতে ছেলের রেট যেখানে তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা, ভাংড়া জানলেই কিন্তু টাকার অঙ্কটা সাতশ’ পর্যন্ত উঠতে পারে।
আর দিন দশেকের মধ্যেই বিয়ের মরসুম। তাই যদি মনে হয় বরযাত্রী কিছু কম পড়িয়াছে, হাঁক পাড়তে পারেন নিতাইদাদের।
|
ছদ্মবেশী |
• ইংরেজি বলা স্মার্ট দেখতে ছেলের রেট তিনশ’ থেকে চারশ’ টাকা
• ইংরেজি বলা স্মার্ট দেখতে মেয়েদের ক্ষেত্রে টাকার পরিমাণ দেড় থেকে দু’গুণ হয়
• ভাংড়া বা ওই রকম নাচ জানলে টাকার অঙ্কটা সাতশ’ থেকে হাজার পর্যন্ত উঠতে পারে
• বরণ করার পিসিমা বা কাকিমা প্যাকেজের মধ্যেই দিয়ে দেবে। আলাদা করে ভাড়া করতে হবে না |
|
|
|
|
|
|