পরপর দু’টি দরজার তালা ভেঙে সরকারি আইনজীবীদের ঘরের নথি-পত্র তছনছ করার ঘটনা ঘটেছে উত্তর দিনাজপুর জেলা আদালতে। শনিবার ভোরে রায়গঞ্জের মোহনবাটি এলাকার জেলা আদালত চত্বরে এক দল দুস্কৃতী ঢুকে তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ। আদালত চত্বরের ভিতরে থাকা বেশ কয়েকটি চা-পানের স্টলে বিস্কুট-জরদা-সিগারেট, খাদ্য দ্রব্য চুরি, কালীমন্দিরের থেকে বাসন চুরির ঘটনার পাশাপাশি জেলা জজের গাড়ির ‘ওয়াইপারও’ দুষ্কৃতীরা ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ। যদিও ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ মনে করছে, আদালত চত্বরের বিভিন্ন দোকানে চুরির ঘটনা ‘লোক দেখানো’ হতে পারে, সরকারি আইনজীবীদের ঘরে ঢুকে মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথি চুরি বা নষ্ট করাই দুষ্কৃতীদের মূল উদ্দেশ্য কিনা তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
অন্য দিনের মতই শুক্রবার রাতেও জেলা আদালত চত্বরে তিন জন নৈশপ্রহরী ছিলেন। তাঁদের উপস্থিতির পরেও কী ভাবে ওই ঘটনা ঘটল তা নিয়েই ধন্দে পুলিশের তদন্তকারী অফিসারেরা। নৈশপ্রহরীদেরও জেরা করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। যদিও এক নৈশপ্রহরী অবশ্য দাবি করেছেন, দুষ্কৃতীরা পালানোর সময় তাঁর ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে যায়। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডেভিড ইভান লেপচা বলেন, “পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। নৈশপ্রহরীদের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল তা জানার চেষ্টা চলছে। সরকারি আইনজীবীদের ঘর থেকে কোনও নথি চুরি বা নষ্ট হয়েছে কি না, হলে সেগুলি কোন মামলার সেটিও খতিয়ে দেখা হবে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার ভোরে প্রায় ১০ ফুট উচ্চতার জেলা আদালতের মূল গেট টপকে ভিতরে ঢোকে দুস্কৃতীরা। এর পরে, আদালত ভবনের কোলাপসিবল এবং সরকারি আইনজীবীদের দফতরের দরজার তালা ভেঙে ঘরে ঢোকে। ঘরে থাকা পাঁচটি আলমারি খুলে ফাইল-পত্র, বই সহ অনান্য মামলার নথি বের করে, মেঝেতে ফেলে দেয়। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে দফতরে দুষ্কৃতীরা তাণ্ডব চালায় বলে পুলিশের সন্দেহ। সরকারি আইনজীবীদের ঘর থেকে বের হয়ে আদালত চত্বরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বলে অভিযোগ। আদালত চত্বরের ভিতরে থাকা পূর্ত দফতরের কল সেন্টারের দরজাও ভাঙার চেষ্টা করে দুষ্কৃতীরা।
জেলা আদালতের এক সরকারি আইনজীবী সুনীতা পাল বলেন, “কোনও মামলার নথি চুরি হয়েছে কিনা তা দেখা হচ্ছে। পুলিশকে তদন্তের দ্রুত কিনারা করতে বলেছি।” শনিবার সকালে পুরো ঘটনা জানিয়ে আদালতের নৈশপ্রহরী মণীন্দ্রনাথ গুপ্ত রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি বলেন, “রাতে নজরদারি করার করে কিছুক্ষণের জন্য ঘরে ঢুকেছিলাম। বাকি দু’জন আদালতের অন্যপ্রান্তে নজরদারিতে ছিলেন। সে সময়ে হয়ত দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢুকেছিল। তবে ওরা পালানোর সময় আমার ঘরটি বাইরে থেকে বন্ধ করে যায়।” |