অবশেষে সরকারি উদ্যোগে দক্ষিণ দিনাজপুরে আলু বিক্রি শুরু হয়েছে। শনিবার দুপুর থেকে বালুরঘাটে জেলাশাসকের অফিস চত্বর থেকে ১৩ টাকা দরে আলু বিক্রি করা হয়। প্রতি ক্রেতাকে ১ কেজি করে আলু দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেই মতো এ দিনও সকলকে ১ কেজি করে আলু বিক্রি করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন বিকাল থেকেই বালুরঘাট শহরের ১৪টি রেশন দোকান থেকেও বাসিন্দাদের আলু বিক্রি করা হয়েছে। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, “জেলার ৪টি হিমঘরে ৪২ হাজার কুইন্টাল আলু মজুত রয়েছে। জেলায় প্রতিদিন প্রায় ৬০০ কুইণ্টাল হিমঘরে রয়েছে। তার মধ্যে ৫ হাজার কুইন্টাল বীজের জন্য রেখে বাকি ৩৮ হাজার কুইন্টাল বাজারে পাঠানো হলে আগামী দু’মাস জেলায় আলুর অভাব থাকবে না।”
বালুরঘাটের বিভিন্ন বাজার থেকে গত এক সপ্তাহ জুড়ে আলুর আকাল শুরু হয়েছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। যে কয়েকটি বাজারে আলু মিলেছে তাও চড়া দামে বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন ক্রেতারা। এ দিন সকালে বেলতলাপার্ক বাজারে পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকরা পরিদর্শনে গেলে তাঁদের সাধারণ ক্রেতাদের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়। দুপুর থেকে প্রশাসনের উদ্যোগে আলু বিক্রি শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সুদীপ বাগচী। যদিও বালুরঘাটে সব্জি আড়তদার সমিতির প্রতিনিধি প্রদীপ সাহা বলেন, “প্রশাসন রেশন ডিলারদের কেজিপ্রতি ১১টাকা দরে আলু সরবরাহ করে খুচরো ১৩ টাকা দামে বিক্রির ব্যবস্থা করেছে। আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হিমঘর থেকে সব আলু বের করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মাত্র ২০ দিনের মধ্যে সমস্ত আলু বিক্রির ব্যবস্থা না করলে সব আলু পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” |
জেলাশাসকের দফতর থেকে সরকারি উদ্যোগে আলু বিক্রি বালুরঘাটে। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
হিমঘরের আলু যাতে জেলার বাইরে চলে না যায় কড়া নজরদারি চলছে বলে পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন।
অন্য দিকে, ভিনরাজ্যে আলু পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার দাবি তুলেছেন কোচবিহারের ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, জেলার হিমঘরগুলিতে পর্যাপ্ত আলু মজুত রয়েছে। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে হিমঘর খালি করতে হলে অসম-সহ ভিনরাজ্যে আলু পাঠানোর ছাড়পত্র প্রয়োজন। না হলে প্রচুর আলু নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রাণা গোস্বামী বলেন, “জেলা তো বটেই রাজ্যের হিমঘরগুলিতে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আলু মজুত রয়েছে। খুচরো বাজারে দামের নিয়ন্ত্রণ তুলে দিয়ে সরকারি ভাবে পর্যাপ্ত আলু বিক্রির ব্যবস্থা করা হোক। অতিরিক্ত আলু প্রশাসনের নজরদারিতে বাইরের রাজ্যে বিক্রির বিষয়টি নিয়েও চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। না হলে প্রচুর আলু নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” জেলাশাসক মোহন গাঁধী বলেন, “ব্যবসায়ীদের দাবির বিষয়টি কৃষি বিপণন দফতরের নজরে আনা হয়েছে।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১২টি হিমঘরে প্রায় ৩০ হাজার টন আলু রয়েছে। প্রতিদিন জেলায় গড়ে ২০০ টন আলুর চাহিদা রয়েছে।
শনিবার বক্সিরহাট বাজারে ১৩ টাকা কেজি আলু বিক্রি করেছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। দলের বক্সিরহাট ব্লকের কার্যকরী সভাপতি স্বপন সাহা বলেন, “প্রথম দিনে ১৩ টাকা কেজি দরে ১০ কুইন্টাল আলু বিক্রি হয়েছে।” রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অতনুবন্ধু লাহিড়ী বলেন, “চলতি মাসের মধ্যে হিমঘর থেকে সব আলু বের করে নেওয়া অসম্ভব। হিমঘরের আলু শেষ হওয়ার আগেই নতুন আলু বাজারে চলে আসবে। সেক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ফের সঙ্কটে পড়তে হবে। প্রশাসনকে কোনও উদ্যোগ নিতেই হবে।”
জলপাইগুড়ি ও খড়িবাড়ির হিমঘর থেকে প্রায় ৩ হাজার ২০০ বস্তা আলু সংগ্রহ করে শিলিগুড়ি মহকুমার ১৪৬টি রেশন দোকান থেকে বিলি শুরু হয়েছে। প্রতি গ্রাহককে সর্বোচ্চ ৩ কেজি করে আলু বিক্রি করা হয়েছে। পাশাপাশি একাংশ রেশন দোকানের মালিকেরা অভিযোগ, হিমঘর থেকে বিলি করা বস্তা পিছু ৫০ কেজি করে আলু থাকার কথা থাকলেও, কিছু বস্তায় কম আলু ছিল। শনিবার শিলিগুড়ির বিধান মার্কেট, ক্ষুদিরামপল্লি বাজারে ৩০ টাকা কেজি দরেও আলু বিক্রি হয়েছে বলে অভিযোগ।
উত্তরবঙ্গ প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জগদীশ সরকার বলেন, “উত্তরবঙ্গের সব হিমঘর মিলে প্রায় ২৭ লক্ষ বস্তা আলু রয়েছে। প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে আলু থাকে। নভেম্বর মাসের মধ্যে সব আলু বের করে নিলে কোথায় রাখা হবে তা বুঝতে পারছি না। উত্তরবঙ্গে মাসে গড়পরতা ১ লক্ষ বস্তা আলু প্রয়োজন হয়। ভিনরাজ্যে আলু পাঠাতে না দিলে বেশিরভাগ আলু পচে যাবে।” |