রাজনৈতিক ঝুঁকি সত্ত্বেও পৃথক তেলঙ্গানা গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনমোহন সিংহ সরকার। যার পরিণামে এখনও উত্তপ্ত সীমান্ধ্র। কিন্তু কেন্দ্র যে পশ্চিমবঙ্গ ভাগ চায় না, ফের সেই বার্তা দিতে কাল দার্জিলিং যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।
সরকারি ভাবে দার্জিলিঙের সেন্ট জোসেফ স্কুলের ১২৫তম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। কিন্তু সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতির দু’দিনের দার্জিলিং ও গ্যাংটক সফরে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতাদের সঙ্গেও তাঁর বৈঠক হতে পারে। প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করার জন্য ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ের কাছে সময় চেয়েছেন মোর্চা নেতারা। মোর্চা সূত্রে দাবি, আগামি কাল বিকেলে দার্জিলিং রাজভবনে প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করবেন মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ। পাহাড়ের পরিস্থিতি, জিটিএ-র কাজকর্ম নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলবেন তিনি। মোর্চার এক নেতা জানিয়েছেন, পাহাড়ে এখন শান্তি থাকায় কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহার, সাম্প্রতিক আন্দোলনে বিভিন্ন মামলায় ধৃত মোর্চা নেতাদের বিষয়টিও প্রণববাবুকে জানাতে পারেন গুরুঙ্গ। প্রকাশ্যে মোর্চা মুখপাত্র রমেশ আলে অবশ্য শুধু জানিয়েছেন, “আমাদের সভাপতিকে রাজভবনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।” কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের মতে, রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণববাবুর প্রথম দার্জিলিং সফর সব দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ। দীর্ঘদিন পরে কোনও রাষ্ট্রপতি সেখানে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর মাসে রাষ্ট্রপতির কলকাতা সফরের সময়ে তাঁকে দার্জিলিং যেতে অনুরোধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।
মাত্র দু’সপ্তাহ আগে পাহাড়ে সফর করে ফিরেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোর্চা প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ যাত্রায় তাঁর বৈঠক সফল হয়েছিল। কারণ, তার পরেই রোশন গিরি, হরকাবাহাদুর ছেত্রীর মতো মোর্চা নেতারা মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করেন, তাঁরা পাহাড়ে আর বন্ধ করবেন না। এমনকী মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গও প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে জানিয়ে দেন, গোর্খাল্যান্ডের জন্য আন্দোলন যেমন চলছে চলবে। কিন্তু দার্জিলিঙে বন্ধ আর হবে না।
এ বার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মোর্চা নেতাদের আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, পাহাড়ে বন্ধ চলাকালীন দিল্লি এসে বিমল গুরুঙ্গ এক বার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেছিলেন। প্রণববাবুর গত গ্যাংটক সফরের সময়েও তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলেন মোর্চা নেতারা। প্রণববাবু তাঁদের বন্ধ প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসতে বলেন। গুরুঙ্গকে তিনি বলেন, অবরোধের রাজনীতি পাহাড়ের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কংগ্রেস নেতাদের মতে, রাষ্ট্রপতি রাজনীতির উর্ধ্বে ঠিকই। কিন্তু পাহাড়ে শান্তি বজায় রেখে উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ তিনি দিতেই পারেন। আজ রাষ্ট্রপতি ভবনে গিয়ে প্রণববাবুর সঙ্গে দেখা করেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। রাষ্ট্রপতি ভবন সূত্রে খবর, পাহাড়ের বর্তমান পরিস্থিতি সবিস্তার প্রণববাবুকে জানান রাজ্যপাল। কার্শিয়াং এলাকায় সাম্প্রতিক রাজনৈতিক হিংসার ঘটনাও ব্যাখ্যা করেন।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার মতে, দার্জিলিঙের মানুষকে উন্নয়ন ও শান্তির বার্তা দিতে স্কুলের অনুষ্ঠানই রাষ্ট্রপতির কাছে উপযুক্ত মঞ্চ।
সেই বার্তায় নিহিত থাকবে পশ্চিমবঙ্গের অখণ্ডতার কথাও। ওই নেতার মতে, প্রণববাবুর রাজনৈতিক সত্তা গোর্খাল্যান্ডের বিপক্ষে। রাষ্ট্রপতি হিসেবে পাহাড়ে তিনি কী বলেন সেটাই এখন দেখার।
|