উদাস দিল্লি, ভোটের আগেও ছন্নছাড়া রাজ্য কংগ্রেস
লোকসভা নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, তখন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেসের নেতারা সনিয়া গাঁধীর কাছে আবেদন জানালেন, যাতে অবিলম্বে হাইকম্যান্ড তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনী রণকৌশল চূড়ান্ত করে। রাজ্য নেতাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক সি পি জোশীকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না! রাজস্থানের এই নেতাটি সেখানকার বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারের প্রধান কাণ্ডারী। তিনি আবার মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের ঘোরতর বিরোধী। দলের নেতাদের একাংশ বলছেন, জোশী এখন জয়পুরের গোষ্ঠী রাজনীতি নিয়েই ব্যস্ত। সে কারণে তিনি পশ্চিমবঙ্গে সময় দিতে পারছেন না। এই অবস্থায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রচণ্ড হতাশ। রাজ্য নেতাদের একাংশের বক্তব্য, কংগ্রেস একটি সর্বভারতীয় দল। সেখানে যদি এআইসিসি-র সঙ্গে রাজ্য নেতৃত্বের কোনও সমন্বয় না থাকে, তা হলে লোকসভা ভোটের আগে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে বাধ্য।
এর আগে যিনি পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন, সেই শাকিল আহমেদ নিয়মিত রাজ্যে যেতেন। রাজ্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও রাখতেন। এখন তিনি দিল্লির ভারপ্রাপ্ত। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নেতারা এখনও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। বহু দিন থেকেই প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি বদলের প্রস্তাব নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছিল দিল্লিতে। কারণ বিধানসভা নির্বাচনের দু’বছর পরেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক পরিসর দখল করে উঠতে পারেনি সিপিএম। উল্টে গত নির্বাচনগুলিতে তাদের ভোটের হার কমেছে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সামনে একটা সুযোগ ছিল, দীর্ঘমেয়াদি রণকৌশল নিয়ে এই রাজনৈতিক পরিসর দখল করা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বের দিশাহীনতাই স্পষ্ট। অধীর চৌধুরী রেল প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব এবং তাঁর নিজের জেলা সামলাতেই বেশি ব্যস্ত। আবার দীপা দাসমুন্সিকে বেগ দিতে তাঁর জেলায় প্রিয়রঞ্জন দাসমুন্সির ভাইকে দায়িত্ব দিয়েছে তৃণমূল। তাঁকে দীপার বিরুদ্ধে প্রার্থী করার পরিকল্পনাও নিচ্ছে তৃণমূল। অন্য দিকে মানস ভুইঁয়া, আব্দুল মান্নানের মতো বহু নেতাই সংগঠনের কাজকর্মে হতাশ। তাঁরাও সনিয়া গাঁধীর হস্তক্ষেপ চান। ছাত্র পরিষদ এবং যুব কংগ্রেস, এই দু’টি শাখা সংগঠনের অবস্থাও যথেষ্ট ছন্নছাড়া।
রাজ্য কংগ্রেসের এমন বেহাল দশা দেখে বেশ ক্ষুব্ধ কংগ্রেস হাইকম্যান্ডও। রাজ্য নেতাদের কাজকর্মে বেশ অসন্তুষ্ট তাঁরা। দিল্লির বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ এখন তাঁদের অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন মিটলে তাঁদের কাছে বেশি গুরুত্ব পাবে উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারে লোকসভা ভোটে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রস্তুতি। কারণ গোবলয়ে মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপির সঙ্গে লড়াইটা তাঁদের কাছে বড় পরীক্ষা। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে তাঁরা বেশি সময় ব্যয় করতে চান না। কংগ্রেসের মুখপাত্র দিগ্বিজয় সিংহের কথায়, “রাজ্য কংগ্রেসের একটা স্বাধীন ভূমিকা রয়েছে। ওখানকার নেতারা সকলেই যথেষ্ট পরিণত। দিল্লির মুখাপেক্ষী না হয়ে থেকে ওঁদের উচিত, নিজেদের মধ্যে সুষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তোলা এবং আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে এগোনো।”
রাহুল গাঁধীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছিলেন রাজ্য কংগ্রেস নেতারা। রাহুলও বলেছিলেন, মমতার মুখাপেক্ষী হয়ে না থেকে স্বাধীন ভাবে কাজ করুন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের নিয়ে কর্মশালাও করেছেন তিনি।
কিন্তু পরপর একাধিক ভোটে কংগ্রেসের খারাপ ফলাফলে তিনিও কিছুটা হতাশ। তা ছাড়া, রাহুল এখন নিজেও ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে। লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ যে দিল্লির অগ্রাধিকারে নেই, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন রাজ্য নেতারাও।
এই টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই সোমেন মিত্রের কংগ্রেসে ফেরার জল্পনা উস্কে দিয়েছে নানা প্রশ্ন। সোমেনবাবু নিজেই তাঁর পুরনো দলে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি এক সময় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিও ছিলেন। এখন দলে ফিরলে তাঁর কী ভূমিকা হবে, তাঁকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হবে, তাঁকে কোন আসন দেওয়া হবে, সে সব নিয়ে দলের অন্দরেই নানা প্রশ্ন উঠছে।
আর একটাও বিষয় নিয়ে ভাবিত রাজ্য কংগ্রেসের নেতারা। লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তে তৃণমূলের সঙ্গে কোনও আসন সমঝোতা বা বোঝাপড়া করবে না তো দিল্লি? এখনও পর্যন্ত মমতাও এ ধরনের সম্ভাবনা খারিজ করে দিচ্ছেন। তা ছাড়া, অধীর-দীপার মতো নেতারাও এই ধরনের সমঝোতার বিপক্ষে। কিন্তু এ ব্যাপারে দিল্লির কৌশলটা কী, সেটা এখনও রাজ্য নেতাদের কাছে স্পষ্ট নয়। লোকসভা নির্বাচনের পরে তৃণমূলের সমর্থন প্রয়োজন হতে পারে, এটা ধরে নিয়েই কি কেন্দ্রীয় নেতারা এখন চুপচাপ রয়েছেন? এমন সম্ভাবনাও উঁকি মারছে কংগ্রেসের অন্দরে। সব মিলিয়ে ভোটের কয়েক মাস আগেও সম্পূর্ণ দিশাহীন অবস্থায় রয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্ব।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.