প্রথমে তিন জন, পরে বেশি রাতে আরও দু’জন। প্রথম সারির পাঁচ নেতাকে গ্রেফতারের পরেই বাংলাদেশে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি-র অধিকাংশ নেতা গা-ঢাকা দিয়েছেন। নেত্রী খালেদা জিয়ার বাড়ি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। কাউকে বাড়ির মধ্যে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এর মধ্যেই বিএনপি-জামাতে ইসলামি জোট রবিবার থেকে যে ৭২ ঘণ্টার হরতালের ডাক দিয়েছিল, তা বাড়িয়ে ৮৪ ঘণ্টা করে হয়েছে। অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই হরতাল চলবে। সরকারও জানিয়েছে, হরতালের নামে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রচেষ্টা তারা কঠোর হাতে মোকাবিলা করবে।
শনিবার থেকেই রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় গাড়ি ভাঙচুর, আগুন লাগানো ও বোমাবাজির ঘটনা ঘটেছে। ধৃত পাঁচ নেতাকে ঢাকার একটি আদালতে তোলার পরে ১০ দিন নিজেদের হেফাজত চায় পুলিশ। গাড়ি ভাঙচুর, আগ্নিসংযোগ ও পুলিশের উপর হামলার কয়েকটি পুরনো মামলায় তাঁদের আসামি করা হয়েছে।
বিচারক বৃহস্পতিবার শুনানির দিন ধার্য করেছেন।
কাল রাতে ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলের অনুষ্ঠান সেরে বেরোনোর সময়ে বিএনপি-র স্থায়ী কমিটির তিন সদস্য মওদুদ আহমেদ, এম কে আনোয়ার ও রফিকুল ইসলাম মিঞাকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তার পরে গভীর রাতে বিরোধী নেত্রীর বাড়ি থেকে বেরোনো মাত্র আটক করা হয় খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস ও উপদেষ্টা আব্দুল আওয়াল মিন্টুকে। আরও অনেক নেতার বাড়িতে পুলিশ হানা দিয়েছিল, কিন্তু তাঁরা গা-ঢাকা দেওয়ায় ধরা পড়েননি।
সকালেই বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে হরতালের মেয়াদ আরও ১২ ঘণ্টা বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, একতরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যেই আওয়ামি লিগ ধরপাকড় শুরু করেছে। অন্য দিকে আওয়ামি লিগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ দাবি করেছেন, হরতালের নামে নাশকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদেরই ধরপাকড় করা হচ্ছে। বিরোধীরা যদি ভেবে থাকেন, একের পর এক হরতাল ডেকে দেশের জনজীবন বিপর্যন্ত করে রাখবেন, তবে তা প্রতিহত করার দায়িত্বও সরকারের রয়েছে। তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, মানুষ খুন, লুঠপাট, অগ্নিসংযোগে যারা উস্কানি দিচ্ছে, পুলিশ তাদেরই আটক করতে বাধ্য হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার ডাক উপেক্ষা করে তৃতীয় দফায় হরতাল ডাকার পরে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বিএনপি-র আসল লক্ষ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করা।
সরকার ও বিরোধী পক্ষের অনড় অবস্থানে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। জানুয়ারিতে আদৌ নির্বাচন হবে কিনা, তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন আজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আলোচনায় বসার বদলে দু’পক্ষ যে ভাবে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি করেছে, তা যথেষ্ট হতাশাজনক। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের পক্ষে।’
|