শিশুমৃত্যুর জেরে ধুন্ধুমার হল আসানসোল জেলা হাসপাতালে। গাফিলতিতেই মৃত্যু হয়েছে, এই দাবিতে ওই শিশুর বাড়ির লোকজন এক চিকিৎসক ও তিন কর্মীকে মারধর করে বলে অভিযোগ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। শিশুটির বাড়ির লোকজনের পাল্টা দাবি, তাঁদেরই মারধর করেছে হাসপাতালের কর্মীরা। দু’পক্ষই পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
আসানসোলের নেতাজি সুভাষ বসু রোডের বাসিন্দা ফৈয়জ আনোয়ার খান জানান, তাঁর দশ মাসের ছেলে সর্দি-কাশি-জ্বরে ভুগছিল। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ তাকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান তাঁরা। ভর্তি করানোর জন্য তাঁরা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক কল্পনা মুখোপাধ্যায় শিশুটি মৃত বলে জানান। ফৈয়জের অভিযোগ, “আমি ছেলের বুক ও নাকে হাত দিয়ে দেখি শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে। তার জন্য স্যালাইন ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানাই। কিন্তু ডাক্তার কোনও কথাই শুনতে চাননি। আধ ঘণ্টার মধ্যে আমার ছেলের মৃত্যু হয়।” |
শিশুটির কাকা ইমরান খান জানান, তাঁরা চিকিৎসায় গাফিলতির প্রতিবাদ জানাতে যান। কিন্তু ওই ডাক্তারের কথা মতো হাসপাতালের তিন জন কর্মী তাঁর দাদা ফৈয়াজকে মারধর করে বলে অভিযোগ। বাঁচাতে গেলে তাঁকে ও শিশুটির মাকেও মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ ইমরানের।
চিকিৎসক কল্পনাদেবী অবশ্য মারধরের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর পাল্টা দাবি, হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়েছিল। তা শিশুটির বাড়ির লোকজনকে জানাতে প্রথমে তাঁরা তর্ক জুড়ে দেন, তার পরে তাঁকে মারতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। উল্টে দেওয়া হয় চেয়ার-টেবিলও। কল্পনাদেবীর কথায়, “আমাকে বাঁচাতে গেলে চতুর্থ শ্রেণির দুই কর্মী সনৎ ঘোষ, প্রদীপপ্রসাদ রায় এবং কম্পিউটারের কর্মী সাহেব রায়কেও মারধর করা হয়। অমি কোনও রকমে জরুরি বিভাগের বাইরে বেরিয়ে সুপারকে ফোনে এই খবর জানাই। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ পৌঁছলে আমরা আতঙ্কমুক্ত হই।” হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের দাবি, বহু বার হাসপাতালে একটি পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দাবি জানানো হয়েছে। সেই দাবি মেটানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কাজের কাজ হয়নি। হাসপাতালে একটি পুলিশ ক্যাম্প থাকলে এই ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার সম্ভবনা কমে বলে তাঁদের দাবি।
হাসপাতাল সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “প্রিয়জনের মৃত্যু সকলের কাছেই বেদনার। কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে একটি পরিবার হাসপাতালে এমন কাণ্ড ঘটাবে, ভাবা যায় না।” তিনি পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ করেছেন। হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দাবি প্রসঙ্গে সুপার বলেন, “এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ হয়েছে। আশা করি, শীঘ্রই ক্যাম্প বসবে।” আসানসোল দক্ষিণ থানার তরফে জানানো হয়েছে, মৃত শিশুর বাবা এবং হাসপাতালের সুপার, দু’জনই অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্ত শুরু হয়েছে। |