|
|
|
|
সুতাহাটা |
স্কুলের হিসাব চাওয়ায় বেতন বন্ধ, অভিযোগ তিন শিক্ষকের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া |
তথ্য জানার অধিকার আইনে প্রধান শিক্ষকের কাছে স্কুলের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়েছিলেন। সেই রাগে অক্টোবর মাস থেকে স্কুলের পরিচালন কমিটি বেতন বন্ধ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ জানালেন পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটা থানা এলাকার পূর্ব শ্রীকৃষ্ণপুর বাসুলিয়া ত্রৈলোক্যনাথ বিদ্যাপীঠের দুই শিক্ষক ও এক শিক্ষিকা।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পদার্থবিদ্যার শিক্ষক মানসকুমার সামন্ত, ইংরেজির ভঞ্জন অধিকারী ও ভূগোলের শুক্লা গজেন্দ্র মহাপাত্র ডানপন্থী সংগঠনের তরফে পরিচালন সমিতির শিক্ষক প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচিত। অন্য দিকে, পরিচালন সমিতিতে ক্ষমতাসীন বামেরা। গত ১ জুলাই ওই তিন শিক্ষক বিদ্যালয়ের আয়-ব্যয়ের হিসাব চেয়ে আইন অনুযায়ী আবেদন করেন। অভিযোগ, তারপর থেকেই প্রধান শিক্ষক দীপক সামন্ত তাঁদের হুমকি দিচ্ছেন, ভয় দেখাচ্ছেন ও অশ্লীল ব্যবহার করছেন। শিক্ষক মানসকুমার সামন্তের অভিযোগ, “প্রধান শিক্ষক পরিচালন সমিতির উপ-সমিতিকে কোনও গুরুত্ব দেন না। স্কুলের আয়-ব্যয়েরও কোনও হিসাব দেন না। শুধু বিভিন্ন সময়ে তাঁর নিজের তৈরি করা নথিতে স্বাক্ষর করে দেওয়ার জন্য নানা ভাবে চাপ দেন।” প্রধান শিক্ষকের তৈরি করা নথিতে কারচুপি আছে সন্দেহ হওয়ায় হিসাব চান ওই তিন শিক্ষক। শিক্ষকদের অভিযোগ, বারবার আবেদন করার পরেও প্রধান শিক্ষক তথ্য না দেওয়ায় তাঁরা বিষয়টি জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে জানান। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক তথ্য দেওয়ার জন্য প্রধান শিক্ষককে লিখিত নির্দেশ দিলেও কাজ হয়নি। অভিযোগ, এরপরেই প্রধান শিক্ষক দীপক সামন্তের যাবতীয় রাগ গিয়ে পড়ে ওই তিন শিক্ষক-শিক্ষিকার উপর। শিক্ষিকা শুক্লাদেবী বলেন, “অক্টোবর মাসের বেতন না ঢোকায় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি বাকি শিক্ষকদের টাকা ঢুকেছে। শুধুমাত্র আমাদের তিন জনেরই বেতন ঢোকেনি। প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তথ্য জানার ওই আবেদন বন্ধ না করলে মাইনে পাব না।” এরপরই শিক্ষকরা গোটা বিষয়টি জানান, জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, পরিচালন সমিতির সম্পাদক ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। মানসবাবুর মা ক্যানসার রোগে আক্রান্ত। বৃহস্পতিবার তিনি মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য মুম্বই রওনা হয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “প্রধান শিক্ষক সবই জানেন। ন্যূনতম মানবিকতা থাকলে দীপকবাবু এটা করতেন না।
যদিও অভিযোগ উড়িয়ে প্রধান শিক্ষক দীপক সামন্ত বলেন, “২০০৬ সাল থেকে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের ছুটি সংক্রান্ত তথ্য না দেওয়া নিয়ে নানা জটিলতা রয়েছে। পরিচালন সমিতি তা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে। অন্য শিক্ষকরা সহযোগিতা করলেও ওই তিন শিক্ষক ছুটির আবেদনপত্র না দেওয়ায় তাঁদের ছুটি মঞ্জুর করা যায়নি। ছুটি মঞ্জুর না হওয়াতেই বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে।” পরিচালন সমিতির সম্পাদক শেখ সামাদও বলেন, “ছুটি নেওয়ার কারণেই পরিচালন সমিতি ওই তিন শিক্ষকের বেতন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
যদিও ওই তিন শিক্ষকের দাবি, তাঁরা নিয়মমাফিক ছুটি নিয়েছেন এবং সেই ছুটির আবেদন পত্রও দিয়েছেন। তাঁদের চাপে রাখতেই প্রধান শিক্ষক কৌশলে এমনটা করছেন।
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষা সমিতির জেলা সভাপতি অনুপ ভট্টাচার্য বলেন, “ওই শিক্ষকদের বেতনের ব্যবস্থা করতে ডিআইকে বলা হয়েছে।” এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক মুজিবর রহমান বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, প্রধান শিক্ষক দীপকবাবু শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ-র সুতাহাটা ১ জোনাল কমিটির সদস্য।
জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) পূরবী নন্দী বলেন, “ওই শিক্ষকরা যাতে বেতন পান, তা দেখব। ঠিক কী হয়েছে খতিয়ে দেখতে হবে।” |
|
|
|
|
|