তেরো থেকে ষোলোর মধ্যে ঘুরছে আলুর দর |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
ক্রমশই স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। ১৩ টাকায় সব জায়গায় না পাওয়া গেলে ১৫-১৬তে জ্যোতি আলু মিলছে দুই মেদিনীপুরেই।
আলু জট কাটাতে বৃহস্পতিবারই ব্যবসায়ী সংগঠন ও হিমঘর অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বৈঠক করেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। শুক্রবার থেকে মেদিনীপুর শহরে সরকার নির্ধারিত মূল্যে অর্থাৎ ১৩ টাকা কেজি দরেই আলু পাওয়া গিয়েছে। তবে প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে এখনও আলুর সঙ্কট রয়েছে। গোপীবল্লভপুর, সবং, মোহনপুর-সহ কয়েকটি ব্লকে এখনও সর্বত্র পর্যাপ্ত আলু পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষি কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষের অবশ্য দাবি, “সব ব্লকেই ২-৩ লরি করে আলু পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। হয়তো কোনও কারণে তা পৌঁছতে দেরি হতে পারে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব। যদি কোনও ব্লকে এখনও আলুর সঙ্কট থাকে তা হলে দ্রুত সেখানে পাঠানোর জন্য পদক্ষেপ করা হবে।” |
|
হলদিয়ার মাখনবাবুর বাজারে তেরো টাকা দরে আলু কিনতে লাইন । |
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় আলুর চাষ হয়। জেলায় ৮০টিরও বেশি হিমঘর রয়েছে। যার মধ্যে ৭৬টি হিমঘর পুরোদমে চলছে। গত বছর এই জেলাতেই সাড়ে ৭৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল। ৭৬টি হিমঘর মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ১১ লক্ষ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এমন জেলাতেও হঠাৎ করে আলুর সঙ্কট দেখা দেয়। অভিযোগ, কিছু ব্যবসায়ী অতিরিক্ত মুনাফার লোভেই কৃত্রিমভাবে এই সঙ্কট তৈরি করেছিল। সঙ্কট মেটাতে পুলিশ ও প্রশাসনও তড়িঘড়ি মাঠে নেমে পড়ে। প্রথমে সব রাস্তায় নজরদারি শুরু করা হয়। যাতে বেআইনি ভাবে কোনও ব্যবসায়ী অন্য রাজ্যে আলু পাঠাতে না পারে। আলুর গাড়ি দেখলেই তা আটক করে ফেরতও পাঠানো হয়। বাজারে বেশি দামে আলু বিক্রি করার অভিযোগে ধরপাকড়ও করা হয়। কেউ অতিরিক্ত আলু মজুত রেখেছে দেখলে তা আটক করা হয়। তারই সঙ্গে সরকারি ভাবে কাউন্টারও খোলা হয়। যেখান থেকে ১৩ টাকা কেজি দরে খুচরো আলুও বিক্রি করা হয়। প্রশাসন যত কঠোর হতে শুরু করে ব্যবসায়ীরাও ততই অন্য পন্থা নিতে থাকে। ব্যবসায়ীরা আলু লুকিয়ে রাখতে শুরু করে। বাজারে গিয়েও ক্রেতারা আলুর খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়ালেও আলুর দেখা মেলেনি। কেউ কেউ লুকিয়ে অবশ্য আলু বিক্রি করেছেন। তবে দাম নিয়েছিলেন ১৭-২০ টাকা কেজি। পরিস্থিতি অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে দেখে জেলায় আলু নিয়ে বৈঠক করেন পুলিশের এডিজি (অপরাধ দমন শাখা)। সীমান্ত এলাকায় কড়া নজরদারির সিদ্ধান্ত নেয় তারা। জেলাশাসক ও জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহ জেলা আলু ব্যবসায়ী সমিতি ও হিমঘর মালিক সংগঠনের সঙ্গেও বৈঠক করেন। জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে ব্যবসায়ী ও হিমঘর মালিকদের সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, শুক্রবার থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে প্রশাসন কঠোর হাতে মোকাবিলায় নামবে। শুক্রবার সন্ধে থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রশাসনের সঙ্গেই উভয় সংগঠনের নেতারাও ময়দানে নেমে পড়ে। ফলে শহরাঞ্চলে পরিস্থিতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। কিছু ব্লকে এখনও যে সমস্যা রয়েছে তাও দ্রুত মিটে যাবে বলেই কৃষি কমাধ্যক্ষ জানিয়েছেন। |
|
এগরায় আলুর আড়তে মহকুমা ভিজিল্যান্স দল। |
পূর্ব মেদিনীপুরে আলু আসে মূলত পাশের জেলা থেকেই। গত কয়েকদিনে পশ্চিম মেদিনীপুরে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পুলিশ-প্রশাসন যতটা সক্রিয় হয়েছিল, পূর্ব মেদিনীপুর ততটা ছিল না। ফলে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাসদরে বৃহস্পতিবারও ১৮ কাটা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে। কাঁথি-এগরার দিকে দামটা আরও বেশি ছিল। তবে, শুক্রবার থেকে তমলুকে জ্যোতি আলুর দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ দিন সন্ধ্যায় ১৬ টাকা দরে জ্যোতি আলু পাওয়া গিয়েছে তমলুক-সহ আশপাশের বাজারে। শুক্রবার প্রশাসনের উদ্যোগে দিঘায় সরকারি মূল্যে আলু বিক্রি হয় তিন জায়গায়। আজ মীরগোদা-সহ রামনগরেও সরকারি দরে আলু বিক্রি করা হবে বলে জানিয়েছেন রামনগর -১ এর বিডিও তমোজিৎ চক্রবর্তী। এ দিকে বৃহস্পতিবার রাতে রামনগর থানার বালিসাইতে আলু বোঝাই একটি লরি স্থানীয় বাসিন্দারা ধরে ফেলে রামনগর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেন। লরিটি ওড়িশায় যাচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
|
—নিজস্ব চিত্র। |
|