বাড়তি বারুদ দিয়েছিল আক্রমের সঙ্গে দু’ঘণ্টা
হম্মদ সামির ইডেন-বিস্ফোরণের প্রেক্ষাপটে যে এক বৃষ্টিস্নাত ওয়ান ডে ম্যাচের বড়সড় ভূমিকা থেকে যাবে, কেউ জানত?
কলকাতা নাইট রাইডার্সের জার্সি পরে খেলতে নামুন না নামুন, মহম্মদ সামি নিয়ম করে টিম প্র্যাকটিসে একটা জিনিস করতেন। টিমের বোলিং পরামর্শদাতা ওয়াসিম আক্রমের সঙ্গে সঙ্গে থাকা। টুকটাক টিপস, নিজেকে আরও ধারালো করে তোলার অক্লান্ত চেষ্টা সবই চলছিল বেশ কিছু দিন ধরে। কিন্তু সেই ক্রিকেট-শিক্ষার জমি যে একটা বৃষ্টিতে পণ্ড ওয়ান ডে-কে কেন্দ্র করে আরও মজবুত হবে, পেস বোলিংয়ের পাঠ যে পূর্ণতা পাবে, বোঝা যায়নি।
স্থান: ভুবনেশ্বরে টিম ইন্ডিয়ার হোটেল।
কাল: ২৬ অক্টোবর বৃষ্টিতে সাড়ে বারোটা বাজা ভারত-অস্ট্রেলিয়া ওয়ান ডে-র দুপুর।
পাত্র: ওয়াসিম আক্রম ও মহম্মদ সামি।
সে দিন ওই ম্যাচে একটা বলও হয়নি, টিম ইন্ডিয়াও বেরোয়নি হোটেল ছেড়ে। যেখানে ‘সুলতান অব সুইং’-এর সঙ্গে ঝাড়া দু’ঘণ্টা নিজের বোলিং নিয়ে কথাবার্তা বলতে দেখা যায় সামিকে। বাংলার ক্রিকেটমহলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, সামি এর আগেও ভাল বল করতেন। রিভার্স, সিমে ফেলে কাট করানোর ক্ষমতা আগেও ছিল। কিন্তু অভিষেক টেস্টে ইডেনে যে ভয়াবহ বঙ্গ পেসারকে দেখা গেল, তার পিছনে আক্রমের ওই দু’ঘণ্টার সেশনের বড়সড় অবদান প্রায় নিশ্চিত।

সামির দাপটে তিন দিনে জয় টিম ধোনির। তবু পিচ নিয়ে ক্ষোভ গেল না। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
শোনা গেল, মারাত্মক রিভার্স সুইং, কাটে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাভূত করে সামি নিজেও প্রকারান্তরে ব্যাপারটা স্বীকার করে নিয়েছেন। ড্রেসিংরুমের বাইরে ম্যাচ শেষে এ দিন এমন এক ঘনিষ্ঠের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়, যিনি আক্রম-প্রসঙ্গটা জানতেন। ময়দানের সঙ্গে জড়িত ওই ভদ্রলোক সামিকে দেখামাত্র জিজ্ঞেস করেন, কী ওয়াসিম ভাই তোমাকে ওখানে সব দিয়ে দিল? সামি শুনে নাকি প্রথমে অবাক হলেও পরে হেসে ফেলেন। জিজ্ঞেস করে বসেন, আপকো ক্যায়সে পতা চলা?
কথাবার্তা বেশি দূর এগোয়নি। কারণ, ড্রেসিংরুম থেকে তখন ডাকাডাকি চলছে। মাঠ ছেড়ে আসামাত্র সচিন তেন্ডুলকর নিজে এসে আগুনে বঙ্গ পেসারের পিঠ চাপড়ে গিয়েছেন। বলে দিয়েছেন, গুড বোলিং। আমার শুভেচ্ছা তোমার সঙ্গে থাকল। কলকাতায় নিজের পুরনো এক ক্লাব কর্তাকে সামনে পেয়ে সামিকেও নাকি বলতে শোনা গিয়েছে, উইকেট ভাঙার শব্দটা কানে যেতে আমি চার্জড হয়ে গিয়েছিলাম। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ডারেন স্যামির মিডল স্টাম্প ছিটকে যাওয়ার পরপরই তাঁর নাকি ইচ্ছে হচ্ছিল, সব কিছু শেষ করে দিতে!
যা ইচ্ছে হয়েছে, সামি সেটাই করেছেন। ভারতীয় পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্ধর্ষ অভিষেক তাঁরই ঘটল। এর আগে কোনও ভারতীয় পেসার অভিষেকে ন’উইকেট নিয়ে টেস্ট জীবন শুরু করতে পারেননি। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে, এমন মহাকীর্তি গড়েও তার ন্যূনতম আন্দাজ এ দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত ছিল না সামির! নিজেও জানতেন না, কেউ তাঁকে বলেওনি যে ভারতীয় ক্রিকেটে এমন রেকর্ডের এখন থেকে তিনি মালিক, যা আজকের পর থেকে আপাতত শুধু বাংলার।
বোর্ডের বিধিনিষেধে সামির এ দিন কথাবার্তা বলা সম্ভব ছিল না। তার উপর তিনি টিমের জুনিয়র, তাই আরওই নয়। কিন্তু সহসপুরে টিভিতে বসে ম্যাচ দেখা পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেছেন। গত রাতেও বাবা তৌসিফ আহমেদকে এক বার বলে ফেলেছেন, “চেষ্টা করব ম্যাচে দশ উইকেট নিতে।” দশ হয়নি, নয় হয়েছে। এবং তাঁর বাবা উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ফোনে বলে ফেলছেন, “সচিন তেন্ডুলকরকে কলকাতায় এর চেয়ে ভাল উপহার আর কেউ দিতে পারত বলুন? ঘরের মাঠে এ ভাবে শুরু করল!”
অভিষেকে সেরা
• ভারতীয় পেসারদের মধ্যে অভিষেক টেস্টে সর্বাধিক উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়লেন মহম্মদ সামি (৯-১১৮)। ভাঙলেন মুনাফ পটেল (৭-৯৭, ২০০৬) এবং আবিদ আলির (৭-১১৬, ১৯৬৭) রেকর্ড।
• বিশ্ব ক্রিকেটে পেসারদের মধ্যে অভিষেক টেস্টে সেরা উইকেট শিকারিদের তালিকায় সামি ১৪ নম্বরে। তালিকায় শীর্ষে অস্ট্রেলিয়ার বব ম্যাসি (১৬-১৩৭, ১৯৭২)।
সামির সাফল্যের কারণ নিখুঁত লাইন আর লেংথ।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি
সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল পেসারদের উপযোগী পিচ না হলেও সামি বলটা ঠিক জায়গায় রাখতে পেরেছে।
সুনীল গাওস্কর
সহসপুরে আজ তৌসিফের বাড়িতে নাকি ঢুকে পড়েছিল গোটা গ্রাম। কী করা যাবে, সব বাড়িতে তো টিভি নেই। দেদার বাজি ফেটেছে, চলেছে ঢালাও মিষ্টিমুখ।
কলকাতায় আজ ভিড় করছে অজস্র স্মৃতি। ভিড় করছে নানা মন্তব্য।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, “একটা সেশনে সামি যে ভাবে একটা টিমকে শেষ করে দিল, ভাবা যায় না। রোহিতের সঙ্গে ওকেও যুগ্ম ভাবে ম্যান অব দ্য ম্যাচ দেওয়া যেত।”
সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মনে পড়ছে তিন বছর আগের এক নির্বাচনী বৈঠক। যেখানে বাংলা টিমে সামিকে ঢোকাতে গিয়ে তীব্র গালিগালাজ সহ্য করতে হয়েছিল তৎকালীন নির্বাচক কমিটির প্রধানকে। কারণ সামি ছিলেন ভিনরাজ্যের।
ময়দানের মনে পড়ছে সদ্যপ্রয়াত মুনাব্বর আলিকে। বাংলার বহু ক্রিকেটার তুলে আনার পিছনে যাঁর অবদান অপরিসীম। সামিকে যিনি প্রথম ময়দান চিনিয়েছিলেন, সাত বছর আগে ঢুকিয়েছিলেন ডালহৌসি ক্লাবে।
ডালহৌসি থেকে টাউন। টাউন থেকে মোহনবাগান। মোহনবাগান থেকে বাংলা। বাংলা থেকে আজ সামি ভারতের।
জন্মসূত্রে যে তিনি আদতে উত্তরপ্রদেশের, সে সব আজ কোথায় হারিয়ে গেল!
আরও কিছু এক্সক্লুসিভ ছবি




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.