|
|
|
|
রেলশহরে ছট মেলাল নানা ভাষা, নানা মত |
নিজস্ব সংবাদদাতা • খড়্গপুর |
রেলশহরে নানা ভাষা, নানা মতের মানুষের বাস। ‘বিবিধের মাঝে মিলন মহান’ এর সার্থকতা মেলে খড়্গপুরে। এমন এলাকায় ছটপুজো কেবল মাত্র বিহারী সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না, তা বলাইবাহুল্য। কবেই এই পার্বন ঢুকে পড়েছে তেরো পার্বনের কালেন্ডারে।
বিহারী সম্প্রদায়ের অন্যতম উৎসব ছটপুজো। বার্ষিক সূর্য-উপাসনার এই দিনে মেতে ওঠেন সব ধর্মের আবালবৃদ্ধবণিতা। ব্যতিক্রম নয় এ বারও। বাঙালীর দুর্গোৎসবের পরেই এই ছটপুজো উৎসবের মেজাজের সেই রেশ বজায় রেখে চলেছে। রেলনগরী খড়্গপুরে ১৮৯৮ সালে রেল কারখানার স্থাপনের পর থেকেই ভিন রাজ্যের বাসিন্দাদের কাজের সন্ধানে আসা-যাওয়া বেড়েছে। এর মধ্যে বিহারী সম্প্রদায়ের মানুষের সংখ্যাধিক্য থাকায় বেশ ধূমধাম করেই হয় এই পুজো। তবে বিহারী ছাড়াও এখানে রয়েছে তেলেগু, তামিল, গুজরাতি-সহ বহু জন জাতির মানুষ। তবে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে ছটপুজোয় যেন আলাদা আবেগ। শহরের খরিদা, মালঞ্চ, সুভাষপল্লি, আয়মা, নিমপুরা, ঝাপেটাপুর, গোলবাজার, ইন্দায় পুজোয় মেতেছেন শহরবাসী। দুর্গাপুজোর মতোই নতুন জামাকাপড় কেনাকাটার ভিড় জমে ছট পুজোতেও। |
|
কংসাবতীতে সূর্যপ্রণাম। |
বস্তুত, সূর্যদেবের আরাধনাই ছট্পুজো বলে পরিচিত। শুধু বিহারী নয়, বাঙালি, তেলেগু সম্প্রদায়ের কিছু মানুষও ছটপুজোর ব্রত পালন করেন। তিন প্রহর ধরে চলে পুজো। রয়েছে মানত প্রথা, গণ্ডিকাটার মতো চলও। অনেক বাঙালিও তা পালন করেন। শহরের পদ্মপুকুরের বাসিন্দা সৌমেন দাসের কথায়, “এই ছটপুজোও যেন আমাদেরই উৎসব। আমার অনেক পরিচিতদের বাড়িতেও এই পুজো হয়। এই শহরের এটাই মজা।” প্রসঙ্গত, প্রতিটি বিহারী পরিবারেই আচার পালনে ঠেকুয়া তৈরি করতে দেখা গিয়েছে। দেবতার কাছে উৎসর্গ করার সুপা (কুলো) সেজেছে কলা, নারকেল, ঠেকুয়া-সহযোগে। প্রতি বছরের ন্যায় শহরের ছোট ছোট পুকুর থেকে অদূরে কাঁসাই নদীর পাড়, সর্বত্রই পুজো দিতে আসেন মানুষ। তবে সবচেয়ে ভিড় চোখে পড়ে শহরের খরিদার মন্দিরতলা ঘাটে। চলে আতসবাজির প্রতিযোগিতা। |
|
খড়্গপুরে ছটপুজো। |
এ বারও সেই একই নিয়মে সূর্য দেবতার উপাসনায় জাঁকে ভাঁটা পড়েনি। বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম দফার উপাসনা সেরেছেন বাড়ির সদস্যরা। নিয়ম মেনেই উপোস করে শব্দহীন ঘরে পুজোর পরে রাতে প্রসাদ খাওয়ার পর শুক্রবার সারা দিন উপোস থেকে বিকেলে শোভাযাত্রায় যোগ দেওয়া। এমনটাই রীতি এই পুজোর। কোনও কোনও এলাকায় আবার তাসা-ব্যান্ডের ছন্দে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজিত হয়। শহরের মন্দিরতলা ঘাটে এ দিন বিকেলে প্রায় হাজার দশেক মানুষের সমাগম হয়। মন্দিরতলা ঘাটে পুজো দিতে যাওয়া খরিদার সঞ্জু ভকত, নিমপুরার মনোজকুমার রাজপালের কথায়, “যে ভাবে এই মিনি ইন্ডিয়ার সব স্তরের মানুষ একাত্ম হয়ে ছটপুজোয় সামিল হন তা সত্যিই মনে রাখার মতো।”
|
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
|
|
|
|
|