জোরকদমে পুরভোটের প্রচার সব দলেরই
জনসংযোগে ভরসা ডাকনাম
ডাকনামে কী আসে যায়? যায় বৈকি!
না-হলে ব্যালট পেপারের নমুনা দেখে কেন মহকুমাশাসকের (সদর) দফতরের এক কর্মীকে তৃণমূল প্রার্থী আশিস চক্রবর্তী অনুরোধ করবেন, ‘ব্যালট পেপারে আমার নামের পাশে তো ডাকনামই নেই! ওটা তো রাখতেই হবে। দেখুন কী করা যায়!’
মেদিনীপুর শহরে পুরভোটের ময়দানে চেনা মুখ আশিস চক্রবর্তী। প্রথম ভোটে দাঁড়ান ’৯৩ সালে। কংগ্রেসের প্রতীকে। জয়ী হন। তখন তিনি যুব কংগ্রেসের কর্মী। ’৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস গড়লে তিনিও দল পাল্টে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে নাম লেখান। তারপর থেকেই তৃণমূলের প্রতীকে জিতছেন। শহরের ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে এ বার প্রার্থী হয়েছেন। তিনিই ব্যালট পেপারে নামের পাশে ডাকনাম রাখার জন্য অনুরোধ করছেন। আসলে, এই প্রার্থীকে আশিস চক্রবর্তী নামে যত লোকে না-চেনে, তার থেকেও বেশি লোকে চেনে নান্টি চক্রবর্তী নামে। কারণ, আশিসবাবুই যে নান্টি। প্রার্থী নিজেও এটা মানছেন। তাঁর কথায়, “ওই নামটা বেশি পরিচিত হয়ে গেছে।” আশিসবাবুর প্রধান প্রতিপক্ষ এলাকারই বিদায়ী কাউন্সিলর কংগ্রেসের মণিলাল দাস। মণিলালবাবুকেও লোকে মণিদা নামেই বেশি চেনে। শুধু এই এলাকা নয়, শহরের সর্বত্র একই ছবি। প্রার্থীদের নামের পাশে জ্বলজ্বল করছে তাঁদের ডাকনাম।
ভোট প্রচারে নামের পাশে ডাকনামও।—নিজস্ব চিত্র।
ব্যানার-ফেস্টুন হোক বা দেওয়াল লিখন। প্রার্থী শহরের পোড়খাওয়া রাজনীতিক হোন কিংবা রাজনীতির আঙিনায় নতুন। সকলেরই ভরসা সেই ডাকনামে। সিপিএমের শহর জোনাল কমিটির সম্পাদক কীর্তি দে বক্সীর কথাই ধরা যাক। কীর্তিবাবু এ বার প্রার্থী হয়েছেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। প্রথম ভোটে দাঁড়ান ’৮৮ সালে। কীর্তিবাবুর ডাকনাম টোটন। তিনি এই নামেই বেশি পরিচিত। তাই তাঁর সমর্থনে যে সব ব্যানার-ফেস্টুন টাঙানো হয়েছে, দেওয়াল লিখন হয়েছে, তার সবেতে নামের পাশে টোটন লেখা রয়েছে। জোনাল সম্পাদকের কথায়, “ডাকনামেই আমাকে বেশি লোকে চেনে। তাই নামের পাশে ডাকনামটা লিখতে হয়েছে।”
কেন ডাক নামের প্রতি এত নজর? সিপিএমের এক জোনাল নেতার ব্যাখ্যা, “আসলে নির্বাচন মানে তো দলকে মানুষের কাছে পৌঁছনো। প্রার্থীর পরিচিত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। লোকে যদি প্রার্থীকে চিনতেই না পারল, তাহলে ভোট দেবে কেন? টোটনদা যেখানে প্রার্থী হয়েছেন, সেখানে এমন অনেক এলাকা আছে, যেখানে কীর্তি দে বক্সী নামটা মানুষ শোনেনি, টোটন নামটাই শুনেছে। ফলে, টোটন নামটার সঙ্গে মানুষ বেশি পরিচিত।” এই ওয়ার্ডেই তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন জীতেন্দ্রনাথ দাস। এলাকার মানুষ তাঁকে জিতু নামে চেনে।
মেদিনীপুর শহরের ২৫টি ওয়ার্ডে এ বার প্রার্থীর সংখ্যা ১১৩। এঁদের অনেকেরই নামের থেকে ডাকনামটা ‘অন্য’রকম! কেমন? ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন প্রণব বসু। প্রণববাবু মেদিনীপুরের বিদায়ী পুরপ্রধান। অনেকে তাঁকে ইন্টু নামে চেনে। এই ওয়ার্ডেই বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন শুভজিৎ রায়। তাঁর পরিচিতি বান্টি নামে। ১২ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন পিন্টু মুখী। এলাকার মানুষ তাঁকে পটল নামে চেনে। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শুভ নামে বেশি পরিচিত। ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন শক্তিপদ দাস অধিকারী। তাঁর পরিচিতি হাবু নামে। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন হিমাংশু মাইতি। তাঁর পরিচিতি হিমু নামে। ১০ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন আশিস সেন। এলাকার মানুষ তাঁকে মুকুল নামে চেনে।
সব মিলিয়ে যেন নাম নয়, পুরভোটের ময়দানে বেশি পরিচিতি ডাকনামেরই। ডাকনামেই কত কী আসে যায়!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.