পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে আইনজীবীর বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকছিল কুখ্যাত এক দুষ্কৃতী। সপরিবার ওই যুবককে দেখে ঘুণাক্ষরেও সন্দেহ জাগেনি আইনজীবীর মনে। তবে পুলিশের চোখকে শেষমেশ ফাঁকি দিতে পারেনি সঞ্জয় ব্যাপারী ওরফে লিটন নামে ওই দুষ্কৃতী। ডানকুনি-লাগোয়া গোবরা থেকে তাকে শুক্রবার গ্রেফতার করেছে হুগলি পুলিশ।
একাধিক খুন, তোলাবাজির ঘটনায় অভিযুক্ত লিটন বহু দিন ধরেই হুগলি পুলিশের মোস্ট ওয়ান্টেডের তালিকায়। ডানকুনি শিল্পাঞ্চলের পুলিশকে রীতিমতো জেরবার করে তুলেছিল সে। ক’দিন আগে এক শিল্পপতির কাছ থেকে দু’কোটি টাকা তোলা চেয়েই তার কাল হল। বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় রাজ্যস্তরে। তোলাবাজির জেরে নির্মীয়মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবেন বলে জানিয়েছেন দেন গণেশপ্রসাদ অগ্রবাল নামে ওই শিল্পপতি। শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করেন তিনি। ঠারেঠোরে বুঝিয়ে আসেন, তোলাবাজি, হুমকির মদতদাতাদের মধ্যে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের একাংশেরও মদত থাকতে পারে। পার্থবাবু বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই দেখেন। পুলিশকে জানিয়ে দেন, রাজনীতির রঙ না দেখে আইন প্রয়োগ করতে। সেই মতোই কোমর বেঁধে নামে হুগলি জেলা পুলিশ। তল্লাশি শুরু হয় অন্য জেলাগুলিতেও। জেলা পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী বলেন, “লিটনকে জেরা করে পুলিশ তার সম্বন্ধে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছে। তার ভিত্তিতে তার অন্য সাগরেদদের খোঁজ করা হবে।” |
বিপদ বুঝে লিটন বেশ কয়েক বার ঠিকানা বদল করে গা-ঢাকা দেয়। কল্যাণীর ঠিকানা পুলিশ জেনে ফেলেছে বুঝতে পেরে সে সরে পড়ে যাদবপুরের কাছে সোদপুর এলাকায়। পরে ডানকুনির ওই আইনজীবীর বাড়িতে সপরিবার বাসা ভাড়া করে।
পুলিশ জানিয়েছে, লিটনের উত্থান হুগলির ‘ত্রাস’ রমেশের হাত ধরে। রমেশ জেলে থাকায় ইদানীং লিটন তার রাজ্যপাট সামালাচ্ছিল। বিরোধী গোষ্ঠীর দলবলকে দাবড়ে রাখা থেকে শুরু করে তোলা আদায় সব একা হাতেই সামালাতে হচ্ছিল তাকে। আদতে পোলবার ছেলে লিটন এক সময়ে শ্রীরামপুরের মল্লিক বাজার এলাকায় থাকত। তখন থেকেই দুষ্কর্মে হাত পাকাতে থাকে। ডানকুনি থানার ওসি পার্থসারথি পাল গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে লিটনের ডেরায় হানা দেন। তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, এ পর্যন্ত মোট ২৬টি মামলা ঝুলছে বছর তিরিশের এই যুবকের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে ছ’টি খুনের মামলা। এ ছাড়াও, তোলাবাজি-সহ বেশ কয়েকটি মামলায় ওয়ারেন্ট আছে লিটনের নামে। পুলিশ তার ডেরা থেকে ২৮ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে। এ ছাড়াও, একটি মোটরবাইক এবং ল্যাপটপ মিলেছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ১১টি মোবাইল ফোন। লিটনকে গ্রেফতার করে ডানকুনি শিল্পাঞ্চলে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম্যে অনেকটাই লাগাম পড়বে বলে আশা করছে পুলিশ। লিটন ধরা পড়ায় কিছুটা স্বস্তিতে গণেশবাবু। তিনি বলেন, “ওর দলবল রয়েছে ডানকুনিতে। আশা করছি তারাও ধরা পড়বে।” |