|
|
|
|
তামাক ছুঁলে চাকরি দেবে না রাজস্থান
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য কি পারতেন? বলা শক্ত। মহাকরণে বসে নিজেই কত সিগারেট খেয়েছেন। অশোক গহলৌত কিন্তু পারলেন। ‘আপনি আচরি ধর্ম’ শিখতে বাধ্য করলেন পরকেও। রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাজস্থান সরকার জানিয়ে দিল, সরকারি চাকরি পেতে হলে আগে মুচলেকা দিতে হবে প্রার্থীদের সিগারেট তো খাবই না, খৈনি বা গুটখাও ছোঁব না! এই অঙ্গীকার না করলে আর যা-ই হোক সরকারি চাকরিটি হবে না মরুপ্রদেশে।
রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী এখন ভোট প্রচারে ব্যস্ত। গহলৌতের ছোটবেলার এক বন্ধুকে পাওয়া গেল এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য। নাম লেখা যাবে না এই শর্তে তিনি বললেন, “অশোক তো ছোট থেকেই বিড়ি-সিগারেটের ধারেকাছে ঘেঁষেনি। স্কুলে পড়ার সময় বন্ধুরা লুকিয়ে-চুরিয়ে যখন সিগারেট খেতাম, অশোক থাকত শত হাত দূরে। টিফিনের পয়সা জমিয়ে ম্যাজিক দেখানোর সরঞ্জাম কিনত। বলতে পারেন ওটাই ছিল ওঁর ছোটবেলার একমাত্র নেশা।” এহেন গহলৌতের পক্ষে নতুন প্রজন্মকে সিগারেট-গুটখা থেকে দূরে রাখার জন্য কঠোর
সিদ্ধান্ত নেওয়া যে সহজ ছিল, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে তাঁর এই সিদ্ধান্ত কিছু প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে। যদিও উদ্দেশ্যটা যে ভাল, সে ব্যাপারে দ্বিমত নন কেউ।
সুপারিশটি আদতে তামাকজাত দ্রব্য সেবন নিয়ন্ত্রণে রাজস্থান সরকারের গড়া একটি সমন্বয় কমিটির। কমিটির বক্তব্য ছিল, এমন মুচলেকার ব্যবস্থা করা গেলে ছেলেমেয়েরা ছোট থেকেই সংযত থাকবে। রাজ্যে ক্যানসারের প্রকোপও তাতে কমতে পারে। এই সুপারিশ গ্রহণ করে রাজ্যের কর্মিবর্গ দফতর। অচিরে সায় দেন মুখ্যমন্ত্রীও। রাজস্থানের কর্মিবর্গ দফতরের প্রধান সচিব সুদর্শন শেঠির কথায়, “অল্পবয়সীরা অনেকেই সিগারেট ধরছেন স্রেফ ফ্যাশন স্টেটমেন্টের জন্য। সরকারের এই পদক্ষেপ তাঁদেরও বার্তা দেবে বলে আশা করি। মা-বাবারাও নিশ্চয়ই ছেলেমেয়েদের বোঝাবেন, সিগারেট-গুটখা খেলে কিন্তু আর সরকারি চাকরি হবে না।”
কিন্তু প্রশ্ন হল, মুচলেকা দিয়ে চাকরি পেয়ে পরে যদি কেউ তা না মানেন? তা ছাড়া, আগে থেকে যাঁরা চাকরি করছেন, তাঁরা সিগারেট-গুটখা খেলেই বা কি ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার? জবাবে সমন্বয় কমিটির অফিসার ডাঃ সুনীল সিংহ জানান, “জরিমানার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। তবে ভোটের পর এ ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। ক্রমশ সরকারি দফতরে সিগারেট-গুটখা খাওয়াই বন্ধ করে দেওয়া হবে।” গুটখার ব্যবহার ইতিমধ্যেই বেশ কিছু রাজ্যে নিষিদ্ধ হয়েছে। সরকারি স্থলে ধূমপানেও রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু এ সব মানা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে সরকারি নজরদারি নেই বললেই চলে। তবু গহলৌত সরকারের সিদ্ধান্তে আপ্লুত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্তারা। তাঁদের বক্তব্য, এ দেশে শুধু নয়, বিশ্বের কোথাও তামাকজাত দ্রব্য সেবন বন্ধে এমন সরকারি নিয়ন্ত্রণের নজির নেই।
বিশিষ্ট অঙ্কোলজিস্ট ডাঃ রাকেশ গুপ্ত অবশ্য বললেন, এটা সাধু সিদ্ধান্ত। তবে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয় সরকারকেই এ ব্যাপারে আরও মাথা ঘামাতে হবে।” কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, প্রকাশ্যে ধূমপানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার পর সিগারেট উৎপাদন কিছুটা কমেছে ঠিকই, তবে গোটা বিশ্বে তামাকজাত দ্রব্য সেবনে ভারত এখনও পয়লা নম্বরে। ধূমপানের বাইরে গুটখা, জর্দা, খৈনির মতো তামাকজাত দ্রব্যের নেশাতেও সব দেশকে পিছনে ফেলে দিয়েছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে গহলৌত সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ বলেন, “রাজস্থান মডেল বাকি রাজ্যগুলিরও অনুসরণ করা উচিত। কেননা, দেখা যাচ্ছে ৯০ শতাংশ ক্যান্সার হচ্ছে ‘স্মোকলেস’ তামাকের জন্য। বর্তমানে দেশের প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি মানুষ কোনও না কোনও ভাবে তামাকের নেশার কবলে।”
নবীন প্রজন্মকে বাঁচাতে গহলৌতের এই সিদ্ধান্ত কিন্তু চাপে ফেলে দিয়েছে অনেক মন্ত্রী এবং রাজস্থানের সরকার ও বিরোধী পক্ষের নেতানেত্রীকে। এঁদের কারও সিগারেটের নেশা। কারও আবার তামাক-সহ পানমশলা ছাড়া চলে না! এমনকী, রাজস্থানের প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বর্তমানে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীও জর্দা দেওয়া পানমশলা খান। এঁরা সকলেই এখন প্রশ্নের মুখে পড়ছেন। রাজনৈতিক ভাবেও চাপে পড়েছে বিরোধী পক্ষ। রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের এই সিদ্ধান্ত আসন্ন ভোটে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এমন আশঙ্কার মুখেও বিজেপি
মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকরের কটাক্ষ, “পাঁচ বছর কোনও কাজই করেনি গহলৌত সরকার। তবু ভোটের আগে কিছু করলেন!”
তা করলেন বটে। এবং নজির রাখলেন গহলৌত। প্রশ্ন হল, রাজস্থান আগে যা করে দেখাল, বাংলা কি পরে হলেও তা করবে? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি অনুসরণ করবেন গহলৌতকে? ও হ্যাঁ, বুদ্ধদেববাবু কিন্তু ইদানীং সিগারেট ছেড়ে দিয়েছেন। |
|
|
|
|
|