সে বাড়িতে ছিল চিড়িয়াখানা। বাঘ, দু’টি সিংহী, দু’টি চিতা এবং কুমির পোষা ছিল বাড়িতেই। এ বাড়ির পোষা বাঘের কথা লিখেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও, ‘অর্ধেক জীবন’ ও ‘একা এবং কয়েকজন’ বইয়ে।
৬ যতীন্দ্রমোহন অ্যাভিনিউয়ে আটতলা ওই বাড়িটাই এ শহরের প্রথম বহুতল। তৈরি হয়েছিল ৭৩ বছর আগে।
সেই চল্লিশের দশকেও ওই বহুতলের বেসমেন্টে ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র। তৎকালীন ছোটলাট জন আর্থার হারবার্ট নিজে ওই বেসমেন্ট দেখতে এসেছিলেন।
তাঁর প্রশ্ন ছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগাম সংকেত পেয়েই কি গৃহকর্তা কমলাকান্ত হাজারি বাঙ্কার হিসাবে ব্যবহারের জন্য তৈরি করেছিলেন ওই বেসমেন্ট? |
বাড়িটি তৈরির কাজ শুরু হয় ১৯৩৭-এ। বছর তিনেক লেগেছিল নির্মাণকাজে। কমলাকান্তের নাতি, ওই বাড়ির অন্যতম শরিক কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ পার্থপ্রতিম হাজারি জানান, প্রতিটি তলের আয়তন কমবেশি ১৩৫০ বর্গফুট। নীচের দু’টি তলের একাংশে রয়েছে ভাড়া। উপরের একাংশ বিক্রি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, চল্লিশের দশকেই শহরের দ্বিতীয় বহুতলটি তৈরি হয় চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে, চাঁদনি চক স্টেশন-সংলগ্ন ‘টাওয়ার হাউস’।
একসময়ে বাড়িটির উপরে ছিল হাওয়াকল। হাজারি পরিবারের দাবি, এটাই সম্ভবত কলকাতার প্রথম ও শেষ বাড়ি যার মাথায় হাওয়াকল লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করে পাম্প চালানো হত। ভারতীয় ক্রিকেট দলের তৎকালিন অধিনায়ক বিজয় হাজারে কলকাতায় এলে থাকতেন এই বাড়িতে। সেই সূত্রে অন্য নামী ক্রিকেটারদের আনাগোনা ছিল সেখানে। নিয়মিত আসতেন শিশির ভাদুড়ি, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, শিশির বসু, নবদ্বীপ হালদার, কৃষ্ণচন্দ্র দে, রাইচাঁদ বড়াল, বিধানচন্দ্র রায়, অতুল্য ঘোষ প্রমুখ। কমলাকান্তবাবু ছিলেন প্রথম চিকিৎসক যাঁর চোখ মৃত্যুর পরে দান করা হয়েছিল। এই বাড়ির পরবর্তী প্রজন্মের বেশ ক’জন জড়িত আছেন চোখের চিকিৎসায়।
|
সব বাড়ি ছাড়িয়ে |
এ শহরে সর্বোচ্চ বাড়ির শিরোপা সাত বছর (১৯৬৯-১৯৭৬) ধরে রেখেছিল ‘টাটা সেন্টার’ (১৮ তলা, ২৬০ ফুট)। এর পরে টানা প্রায় ২২ বছর এই স্বীকৃতি ছিল ‘চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল’-এর (২৪ তলা, ২৯৯ ফুট)। আবাসিক ভবন হিসাবে সর্বোচ্চ বহুতলের স্বীকৃতি প্রথম পায় ‘হাইল্যান্ড পার্ক’ (‘পিক’ বাড়িটি ২৮ তলা, ২৮২ ফুট)। এর পরে ৩৬ তলার ‘সাউথ সিটি’, উচ্চতা ৩৮৪ ফুট। সম্প্রতি জওহরলাল নেহরু রোডে একটি ৫৪ তলা বাড়ির নকশা অনুমোদিত হয়েছে। |
সূত্র: পুরসভা। |
|