২০০৬ সালে রতন টাটা ন্যানো-র সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গে আরও একটি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিলেন। প্রস্তাবিত সেই প্রকল্পটি ছিল টাটা মোটরসেরই শাখা সংস্থা টেলকন-এর নির্মাণ শিল্পের যন্ত্র তৈরির কারখানা। এখন যার নতুন নাম টাটা-হিতাচি কনস্ট্রাকশন মেশিনারি কোম্পানি। সিঙ্গুরে ন্যানো প্রকল্প আটকে গেলেও দিনের আলো দেখে খড়্গপুরের কাছে রূপনারায়ণপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে টাটা-হিতাচির কারখানা। এখানে ইতিমধ্যেই ৫৫০ কোটি টাকা লগ্নির পরে আগামী দু’বছরে আরও প্রায় ২০০ কোটি ঢালার পরিকল্পনা করছে সংস্থা।
দেশে আরও দু’টি কারখানা থাকলেও (জামশেদপুর ও ধারওয়ার) খড়্গপুরের এই কারখানাটিকেই আগামী দিনে দেশ-বিদেশের বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য বাজি ধরেছে সংস্থা্। এটিই হবে তাদের পণ্য রফতানির মূল কেন্দ্র (এক্সপোর্ট হাব)। আপাতত এই যৌথ সংস্থায় টাটাদের অংশীদারি ৪০%।
কারখানার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। তাঁর কথায়, “এটি ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পে দুই দিকপাল শিল্প গোষ্ঠী (টাটা ও হিতাচি) ও দু’টি দেশের (ভারত ও জাপান) যৌথ উদ্যোগের ফল।” শুক্রবার নির্মাণ শিল্পের নতুন দু’টি যন্ত্র উদ্বোধন করতে টাটা-হিতাচি কারখানায় এসেছিলেন শিল্পমন্ত্রী। |
শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে কারখানায় জাপানের কনসাল জেনারেল ও সংস্থার কর্তারা। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল। |
সিঙ্গুর বিতর্কের পরে টাটার কোনও সংস্থার কারখানায় এটাই শিল্পমন্ত্রীর প্রথম পদার্পণ বলে কোনও কোনও মহল মন্তব্য করলেও, এর অন্য কোনও ব্যাখ্যা দিতে নারাজ শিল্পমন্ত্রী। তিনি বলেন, “আগেই বলেছি, আমরা কোনও সংস্থার বিরোধী নই। তা ছাড়া সিঙ্গুরের জমি নির্বাচনের দায় বাম সরকারের।” তিনি টাটা সেন্টারেও নানা অনুষ্ঠানে গিয়েছেন বলে দাবি করেন। পাশাপাশি বিজয়া সম্মিলনীতে যেমন টাটার বিভিন্ন সংস্থার কর্তাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, তেমনই তাঁদের অনেকেই তাতে সাড়া দিয়েছেন, মনে করিয়ে দেন শিল্পমন্ত্রী।
শিল্পমন্ত্রী কারখানা পরিদর্শনে আসায় খুশি সংস্থার এমডি রানা সিংহ বলেন, ‘‘এখানে আসতে আড়াই বছর ধরে ওঁকে অনুরোধ করছি। ব্যস্ততার জন্য হয়ে ওঠেনি। এখানেই অবশ্য অন্য কারখানা উদ্বোধনে তিনি এসেছেন।”
রানা সিংহ জানান, পণ্যের গুণমানের বিচারে গোটা বিশ্বে হিতাচির লগ্নি মানচিত্রে ইতিমধ্যেই সেরা কারখানাগুলির অন্যতম খড়্গপুরের কারখানাটি। খরচ কমাতে যন্ত্রাংশ আমদানির বদলে এখানেই তা তৈরির জন্য গবেষণা কেন্দ্র তৈরি করছেন তাঁরা। সেই সব মিলিয়েই লগ্নি হবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট এলাকার আর্থিক উন্নয়নে এই কারখানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে, দাবি শিল্পমন্ত্রী ও রানাবাবুর। কর্মীদের উদ্দেশে শিল্পমন্ত্রী বলেন, “ভাল কাজ করলে সংস্থা ও রাজ্য উভয়েরই উন্নয়ন হবে।”
বাম আমলে শিল্পোন্নয়ন নিগমের কাছ থেকে ২৫০ একর জমি পেয়েছিল টাটা-হিতাচি। সহযোগী সংস্থার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল আরও ৯০ একর। পরবর্তী কালে এটিকে কেন্দ্র করেই রূপনারায়ণপুরে এই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুক গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেয় নিগম, যেখানে টিআইএল-সহ আরও কিছু সংস্থা্ জমি নিয়ে লগ্নি করেছে। |