অন্তত শেয়ার বাজারে অভিষেকের দিনে ম্যাচ নিয়ে গেল টুইটার।
বাড়তি লাভের হাতছানিতে সাড়া না-দিয়ে তুলনায় কম দামে শেয়ার ছাড়া। প্রথম দিনেই সেই শেয়ারের দরে চোখ ধাঁধানো উত্থান (৭৩%)। আর দিনের শেষে তার হাত ধরে প্রায় ২৫০০ কোটি ডলারের সংস্থা হয়ে ওঠা। এ ভাবে হিসাব কষে ম্যাচ পকেটে পোরার জন্য প্রস্তুতিতে ফাঁক রাখেনি টুইটার। যে কোনও মূল্যে এড়াতে চেয়েছে ‘ফেসবুক-ভাগ্য’। তার জন্য ছেঁটে ফেলেছে সামান্যতম ঝুঁকিও।
ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার থেকে স্টক এক্সচেঞ্জ বাছাই, সব ক্ষেত্রে সচেতন ভাবেই থেকেছে মার্ক জুকেরবার্গের সংস্থার উল্টো মেরুতে। ভবিষ্যতে সংস্থার শেয়ার দর কতটা চাঙ্গা থাকবে তার উত্তর দেবে সময়ই। কিন্তু বাজার বিশেষজ্ঞরা প্রায় এক বাক্যে বলছেন, অন্তত প্রথম লক্ষ্য পূরণে ১০০% সফল টুইটার। আর যা-ই হোক, ফেসবুকের মতো বিপুল প্রত্যাশার ফানুসকে প্রথম দিনেই চুপসে যেতে দেয়নি তারা।
ভারতীয় সময় অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাতে বাজারে প্রথম শেয়ার ছাড়ে (আইপিও) টুইটার। দাম চড়ার ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় শেয়ার হিসেবে চিহ্নিত হলেও শুরুতে দর ২৬ ডলারের বেশি রাখেনি তারা। আগে থেকে জোরালো করেনি প্রচারের ঢক্কানিনাদও। কিন্তু বাজার খুলতেই সাড়া জাগিয়েছে শেয়ার। এক সময়ে দাম পেরিয়েছে ৫০ ডলারের গণ্ডি। দিনের শেষে থিতু হয়েছে ৪৪.৯০ ডলারে। অর্থাৎ স্রেফ এক দিনের লেনদেনে দাম বেড়েছে ৭৩%! |
আর এই ঘটনাই মনে করিয়েছে ফেসবুককে। একেই পৃথিবী জুড়ে সাড়া ফেলা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট হিসাবে এক নিঃশ্বাসে উচ্চারিত হয় ফেসবুক-টুইটারের নাম। তার উপর গত বছরই বিপুল সাড়া জাগিয়ে বাজারে প্রথম বার শেয়ার ছেড়েছিল ফেসবুক। অনেক আগে থেকে ‘হাইপ’ তৈরি হয়েছিল তাকে ঘিরে। শুরুতে যে কারণে শেয়ার দরও বেশি (৩৮ ডলার) রেখেছিল সংস্থা। কিন্তু লেনদেন শুরুর পর সেই প্রত্যাশিত চাহিদার হদিস মেলেনি। দিনের শেষে শেয়ার বন্ধ হয়েছিল প্রায় একই দামে। পরের দু’সপ্তাহে প্রায় লাগাতার পড়ে দাম। এক সময়ে নামে ১৮ ডলারে। এখন অবশ্য তা ঘুরে দাঁড়িয়ে ফের ৪৫ ডলার ছুঁইছুঁই।
অনেকেরই প্রশ্ন ছিল একই রকম ‘অভিশপ্ত শুরু’ টুইটারের জন্যও অপেক্ষা করছে কি না। হয়তো সেই আশঙ্কা নিজেরাও আঁচ করেছিল তারা। তাই আইপিও-র দিনে ফেসবুক না-হওয়াকেই লক্ষ্য করে এগিয়েছে সংস্থা। ফেসবুক যদি বিপুল প্রচারের পথে হেঁটে থাকে, তবে টুইটারের প্রস্তুতি ছিল নিঃশব্দ। ফেসবুক আইপিও সামলাতে ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক মর্গ্যান স্ট্যানলির উপর ভরসা রাখলে, টুইটার আস্থা রেখেছে গোল্ডম্যান স্যাক্স-এ। মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা নথিভুক্তির মক্কা ন্যাসডাককেও সযত্নে এড়িয়ে গিয়েছে তারা। মাইক্রোসফট, অ্যাপল, গুগ্ল থেকে ফেসবুক সিলিকন ভ্যালির বহু বড় নামই প্রথম শেয়ার ছেড়েছে ন্যাসডাকে। কিন্তু টুইটার দেখেছিল মাঝেমাঝেই প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দিচ্ছে সেখানে। আইপিও-র দিনেও ফেসবুককে ডুবিয়েছিল ওই ত্রুটি। তাই নিজেদের জন্য তারা বেছেছে নিউ ইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জকে।
আইপিও-র দিনে টুইটারের অনেকেই রাতারাতি কোটিপতি বনে গিয়েছেন। বিপুল মুনাফার মুখে ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুহেল রিজ্ভি-র লগ্নি সংস্থাও। টুইটারের ১৫.৬% শেয়ার রয়েছে যাদের ঝুলিতে। প্রথম দিন লেনদেনের পর শুধু তারই দাম দাঁড়িয়েছে ৩৮০ কোটি ডলার।
সংশয় তবুও থাকছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই শেয়ার দর যেখানে তাতে ২০১৮-র মধ্যে বছরে আয় হতে হবে ৬০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি। টুইটার সেখানে এখনও ষাটে। ফলে প্রত্যাশার চাপ কাঁধে নিয়ে পথ চলা এই সবে শুরু হল বলে মনে করছেন তাঁরা। |