দীর্ঘদিন ধরেই ভেবে আসছি সপরিবারে মরুপ্রদেশ যাব। একের পর এক চ্যালেঞ্জ টপকে শেষমেশ পুজোর সময় ইচ্ছেপূরণ হয়েই গেল।
প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল পুজোর সময় আসন সংরক্ষণ। সেই বাধা টপকে পঞ্চমীর দিন বেরিয়ে পড়লাম বারাণসীর দিকে। সেখান থেকে বিকেলে যোধপুর এক্সপ্রেসে পৌঁছলাম যোধপুর। যোধপুর ঢোকার মুখেই নজরে এল মেহরানগড় দূর্গ। সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ ট্রেনযাত্রার সমস্ত ক্লান্তি উধাও। হোটেলে ঢুকে একটু বিশ্রাম নিয়েই শহরটা ঘুরে দেখার ইচ্ছে হল। দেখলাম, আধুনিক জনবহুল শহরের সমস্ত নিদর্শন ও সমস্যা দুটোই আছে যোধপুরে। আর লক্ষ্য করলাম, প্রায় সমস্ত হোটেলের নামের সঙ্গে প্যালেস অথবা ইন্টারন্যাশনাল শব্দটি জুড়ে আছে।
পরদিন সকালে গেলাম উমেদ সিংহ প্যালেস। অতুলনীয় সুরুচিসম্পন্ন এই প্রাসাদটির সুরক্ষা ও পরিচর্যা তারিফ করার মতো। সংকীর্ন দরজাটিই ভিতরে ঢোকার বা বেরোনোর একমাত্র পথ। এছাড়া মিউজিয়ামের সংগ্রহশালাটিতেও শিল্পের ছোঁয়া রয়েছে। এরপরে গাড়ি গিয়ে থামল মহারাজা যশোবন্ত সিংহের সমাধিসৌধ যশবন্ত থাডায়। পাহাড়ের এক পাশে মেহেরানগড় দূর্গ অন্য প্রান্তে যশবন্ত থাডা। সমাধিসৌধের প্রবেশ পথে এক রাজস্থানী যুবক তাঁর বাদ্যযন্ত্রে ভারি মিষ্টি রাগ বাজাচ্ছিলেন। সেই সুরে স্থাপত্য যেন আরও মোহময় হয়ে উঠল। এখান থেকে মেহেরানগড় ফোর্ট যেতে একটু বেশিই সময় লাগল। কারণ দিনটা অষ্টমী। |
জয়পুরের অম্বর প্যালেস। ছবি লেখকের সৌজন্যে। |
দূর্গের ভিতর চামুণ্ডা দশর্নের জন্য স্থানীয় দর্শনার্থীদের ভিড় উপচে পড়ছিল সেদিন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মূল জায়গায় পৌঁছলাম। দূর্গের প্রতিটি জানালা, প্রবেশদ্বারে নিপুণ কারুকাজ। অসংখ্য ক্যামেরা নিরন্তর ছবি তুলে যাচ্ছে। দূর্গের উপর থেকে পুরো যোধপুর শহরটাই দেখা যায়। তবে সেদিনের ভিড় আর কোলাহল না থাকলে হয়তো দূর্গের নৈশব্দ্য আরও উপভোগ্য হত। সেখান থেকে মাণ্ডোর গার্ডেন হয়ে সন্ধ্যায় ফিরে এলাম হোটেলে। রাতে রওনা হলাম জয়সলমীরের উদ্দেশ্যে।
দেশি বিদেশী পর্যটকদের নিয়ে ভোর হতে না হতেই ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছল। তখনও সূর্যোদয় হয়নি। আবছা আলোয় সোনারকেল্লা সত্যিই তার নামের প্রতি সুবিচার করেছে। শহুরে আদব কায়দা এখনও এই শহরকে গ্রাস করেনি। কোনও শপিং মল বা আকাশচুম্বি বাড়ি নজরে পড়েনি জয়সলমীরে। বেশিরভাগ লোকজনও রাজস্থানী পোশাকই পড়ে আছেন। সকাল হতে বেরিয়ে পড়লাম গাডিসার লেকের দিকে। সেখান থেকে সোনারকেল্লা। কেল্লায় ঢোকার সময় পরিস্কার বাংলায় প্রশ্ন, “দাদা গাইড লাগবে?” কিন্তু নিজের মতো করে দেখার সাধ নিয়ে অনেকটা হেঁটে ঢুকলাম কেল্লার জৈন মন্দিরে। কোনও ঠেলাঠেলি নেই। নেই ভক্তি প্রদর্শনের বাড়াবাড়ি। চারিদিকে শান্তি। মিউজিয়ামটিও ভাল লাগল।
বিকেলে চললাম থর মরুভূমি দেখতে। আশা, উটের পিঠে চড়ে সূর্যাস্ত দেখব। গাড়ি শহর ছাড়াতেই দূর্গের মতো দেখতে কিছু হোটেল। সেগুলি পার হতেই রাস্তার দু’ধারে বিস্তীর্ণ প্রান্তর জুড়ে শুধু বালি আর রুক্ষতা। প্রায় এক কিলোমিটার উটের পিঠে চড়ে হাজির হলাম স্যাম বালিয়াড়ির সানসেট পয়েন্টে। কয়েক হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষের সঙ্গে উপভোগ করলাম সূর্যাস্ত। এ বার আবার ডেরায় ফেরার পালা।
সোনারকেল্লাকে সাক্ষী রেখে ‘রুফ টপ ডিনার’ জয়সলমীরের আরেক অন্যতম আকর্ষণ। বিকেল নাগাদ জয়সলমীর থেকে চললাম রাজধানী জয়পুরে। শহরের ঘুম ভাঙার আগেই হোটেলে পৌঁছলাম। চোখে পড়ল স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের মর্নিং ওয়াক, জগিং, বাড়ি ফেরার পথে পলিপ্যাকে দুধ নিয়ে যাওয়া। মনে পড়ে গেল ফেলে আসা নিজের শহরের কথা। তবে একটা জিনিস একেবারেই আলাদা। এখানে রাস্তার ধারে অসংখ্য ময়ূর ঘুরে বেড়ায়। প্রথম দিনই নাহারগড় দূর্গ, জয়গড় দূর্গ এবং অম্বর দূর্গ ঘুরলাম। এই তিনটি দূর্গ যেন আজও ঐতিহাসিক মরু শহরকে আগলে রেখেছে। এদের মধ্যে স্থাপত্যে, চিত্রকলায় অম্বর প্যালেসটি অসাধারণ। পরের দিন জলমহল, সিটি প্যালেস, হাওয়ামহল দেখে শেষ করলাম এ বারের মরুশহর ভ্রমণ। |
নিজেই লিখুন আনন্দবাজারে। অনধিক ৫০০ শব্দে।
খামে ‘রিটার্ন টিকিট’ লিখে পাঠিয়ে দিন:
আনন্দবাজার পত্রিকা, এ ১০, ডক্টরস কলোনি,
সিটি সেন্টার, দুর্গাপুর - ৭১৩২১৬।
অবশ্যই সঙ্গে দেবেন ছবি
(নিজেদের বাদে)।
ছবি মেল করতে চাইলে durgapuredit@abp.in
(লেখা নির্বাচনে সম্পাদকীয়
বিভাগের বিবেচনাই চূড়ান্ত) |
|