প্রায় এক দশক আগে প্রকল্প চালু করেছে কেন্দ্র। কিন্তু এখনও সেই মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি দুর্গাপুরের তিনটি স্কুল। জায়গার সমস্যার জন্যই বিশাল সংখ্যক পড়ুয়ার জন্য রান্নার ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছে স্কুল কর্তৃপক্ষগুলি।
২০০১ থেকে স্কুলে মিড-ডে মিলের ব্যবস্থা করতে বলে কেন্দ্র। কিন্তু জায়গার অভাব-সহ নানা সমস্যার জন্য অনেক স্কুলই প্রথম দিকে রান্না শুরু করতে রাজি হয়নি। পরে আদালতের নির্দেশে উঠেপড়ে লাগে স্কুলগুলি। কিন্তু দুর্গাপুরের বেনাচিতির নেতাজি হাইস্কুল, রামকৃষ্ণ পল্লি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ ও ভারতী হিন্দি হাইস্কুলে এখনও এই প্রকল্প চালু হয়নি।
সমস্যা কোথায়? খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনটি স্কুলেই প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা হয়। সকালে প্রাথমিক এবং পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক। বেনাচিতি হিন্দি ভারতী স্কুলে প্রথম শ্রেণি থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হয় সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা। সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ৪টে পর্যন্ত হয় সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস। এই স্কুলে মিড-ডে মিল রান্না করতে হবে প্রায় আড়াই হাজার পড়ুয়ার জন্য। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, এ জন্য যতটা জায়গা ও জল প্রয়োজন, তা নেই।
বেনাচিতি নেতাজি হাইস্কুলে সকাল ও দুপুরের বিভাগ মিলিয়ে মিড-ডে মিল রান্না করতে হবে প্রায় ২৬০০ জনের জন্য। এখানেও জায়গা নেই, জল নেই বলে অভিযোগ। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, এমনিতেই পানীয় জলের অভাবে অনেক সময়ে স্কুল ছুটি দিতে হয়। প্রধান শিক্ষক সুধীরকুমার সুমনের দাবি, সাইকেল স্ট্যান্ড ছাড়া স্কুলে এক চিলতে বাড়তি জায়গা নেই। সাইকেল স্ট্যান্ড তুলে দিলে দূর দূর থেকে আসা ছাত্রেরা সাইকেল রাখতে বেশ সমস্যায় পড়বে। তিনি বলেন, “সব পড়ুয়া স্কুলে এলেই আমাদের হিমসিম দশা হয়। এর পরে রান্না করব কোথায়?”
প্রায় একই সমস্যার কথা জানান রামকৃষ্ণ পল্লি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ স্কুল কর্তৃপক্ষও। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে এখানে প্রাথমিকের ক্লাস শুরু হয়। চলে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত। তার পরে মাধ্যমিক ও উচচ মাধ্যমিকের ক্লাস শুরু হয় ১০টা ৪০ মিনিট থেকে। অর্থাৎ মাঝে মাত্র মিনিট দশেকের বিরতি। এই অল্প সময়ে মিড-ডে মিল খাওয়ানো সম্ভব নয়, জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া রয়েছে রান্নার জায়গার সমস্যা। স্কুলের এক শিক্ষকের বক্তব্য, “প্রায় দেড় হাজার পড়ুয়ার জন্য রান্না করা কার্যত অসম্ভব। খুব ছোট জায়গায় রান্নার ব্যবস্থা যদি করাও যায়, তা কি খুব স্বাস্থ্যসম্মত হবে?”
সম্প্রতি দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক কস্তুরী সেনগুপ্ত স্কুল কর্তৃপক্ষগুলিকে বৈঠকে ডাকেন। সেখানে স্কুলের তরফে এই সমস্ত সমস্যার কথা জানানো হয়। তিনটি স্কুলই কাছাকাছি এলাকায় হওয়ায় সমস্যা মেটাতে করতে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে ‘কমিউনিটি কিচেন’ গড়ার প্রস্তাবও দেওয়া হয়। তবে মহকুমাশাসক বলেন, “কমিউনিটি কিচেন তৈরি করা সময়সাপেক্ষ ও দীর্ঘ মেয়াদি। কিন্তু তত দিন অপেক্ষা করে থাকা যাবে না। আপাতত সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যেই স্কুলে রান্না শুরু করতে বলা হয়েছে।” |