রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগে হাসপাতালে চড়াও হয়ে ভাঙচুর সহ তাণ্ডব চালানোর অভিযোগ উঠেছে রোগীর আত্মীয় সহ বাসিন্দাদের একাংশের বিরুদ্ধে। মালদহের চাঁচল মহকুমা হাসপাতালে বৃহস্পতিবার ভোরে ঘটনাটি ঘটে। হাসপাতালে তান্ডবের সময় আতঙ্কে হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যান নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী সহ অধিকাংশ রোগী। খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। পরে পুলিশের সামনেও হইচই ও বিক্ষোভ দেখাতে থাকে ক্ষুব্ধ জনতার একাংশ। এই ঘটনার জেরে দীর্ঘক্ষণ ধরে বাইরেই বসে থাকেন রোগীরা। শুধু তাই নয়, মাঝরাতে রোগীর মৃত্যুর পর থেকেই চাঁচল মহকুমা হাসপাতালে জরুরি বিভাগের পরিষেবা কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। সকালেও হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে কাউকে না পেয়ে একাধিক রোগীকে অন্যত্র ফিরে যেতে হয়। যদিও ওই ঘটনায় বিকেল পর্য়ন্ত কোনও তরফেই অভিযোগ জানানো হয়নি বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে। হাসপাতালের সুপার সুবর্ণ গোস্বামী এই দিন বলেন, “গাফিলতির অভিযোগ থাকলে তা লিখিত ভাবে কেউ জানাতেই পারেন। কিন্তু তা না করে এ ভাবে ভাঙচুর চালানো মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনার জেরে অন্তর্বিভাগের রোগীদেরকেও চরম সমস্যায় পড়তে হয়েছে।” মালদহের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপ মণ্ডলও ঘটনার কথা শুনেছেন। তিনি বলেন, “সহকারি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও হাসপাতাল সুপারের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে।” |
পুলিশ, হাসপাতাল ও মৃতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, মৃতের নাম বরুণ রায় (৩৫)। হাসপাতাল লাগোয়া রায়পাড়ার বাসিন্দা হলেও বিয়ের পর দীর্ঘদিন থেকেই তিনি ডুমরো এলাকায় শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করেন। পেশায় দিনমজুর বরুণবাবুর দুই ছেলে ও স্ত্রী রয়েছে। গত সোমবার পায়খানা ও প্রস্রাবের সমস্যা সহ পেটে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসক দুর্গাশঙ্কর রায়ের অধীনে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। বুধবার তার পেটের আলট্রা সোনোগ্রাফিও করা হয়। মৃতের পরিবারের অভিযোগ, তেমন কিছু হয়নি বলে চিকিৎসক জানিয়ে দেন। তারপর বুধবার রাতে তার পেটে প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়। কিন্তু দু ঘন্টা ধরে ছোটাছুটি করেও কোনও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। এর পর রাত একটায় বরুণবাবুর মত্যু হয়। মৃত্যুর ঘটনা চাউর হতেই ভোরে হাসাপাতালে চড়াও হয়ে ভাঙচুর শুরু করে উত্তেজিত জনতা। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বসার ঘরের দুদিকের কাচ, চেয়ার, টেবিল, প্রেসার মাপার যন্ত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। রোগীকে কেন রেফার করা হল না সেই প্রশ্ন তোলা হয়।
বরুণবাবুর পাশের শয্যায় ৩ বছরের অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে রয়েছেন রিঙ্কি বিবি। তিনি বলেন, “রাতে বরুণবাবু যন্ত্রণায় ছটফট করলেও কোনও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। পরে হামলা শুরু হয়। ভয় পেয়ে ছেলেকে নিয়ে পালিয়ে যাই।” মৃতের স্ত্রীর অভিযোগ, চিকিৎসক দুর্গাশঙ্করবাবু বলেছিলেন, ওঁর কিছুই হয়নি। তা হলে স্বামী মারা গেলেন কেন? রাতে যন্ত্রণা শুরু হওয়ার পরেরও কারও দেখা মেলেনি। কারা ভাঙচুর করেছে জানি না।”
যদিও চিকিৎসক দুর্গাশঙ্কর রায় এ দিন গাফিলতির অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি ওই রাতে চাঁচল হাসপাতালেই ছিলাম না। আমাকে খরবা হাসপাতালে নাইট ডিউটিতে পাঠানো হয়েছিল। তা ছাড়া ওই রোগীর অবস্থা খারাপ ছিল না বলেই তাঁকে রেফার করা হয়নি। তবে কেন ওই রোগীর মৃত্যু হল তা নিয়ে আমিও ধোঁয়াশায়।” |