সংস্কারের অভাবে ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ ব্লকের নওদা গ্রাম পঞ্চায়েতের মালন এলাকার একটি প্রাচীন বাংলো। প্রায় দেড়শো বছর আগে ইংরেজ আমলে এলাকায় দুটি বাংলো গড়ে ওঠে। সংস্কারের অভাবে চার বছর আগে তারমধ্যে একটি বাংলো ইতিমধ্যেই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা অপর ওই বাংলোটির দেওয়ালের ইঁট প্রতিদিনই খসে পড়ছে। সম্প্রতি, দুষ্কৃতীরা রাতের অন্ধকারে ওই বাংলোর চারদিকের গায়ে থাকা কাঠের তৈরি ৫টি দরজা ও ৭টি জানালা খুলে নিয়ে পালিয়েছে বলে অভিযোগ। রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের বাস্তুকার শিবতোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগতভাবে কেউ ওই বাংলোটির ছবি, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও বিবরণ-সহ সংস্কারের আবেদন পাঠালে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে একাধিকবার জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদ কর্তৃ পক্ষের কাছে বাংলোটির সংস্কারের দাবি জানানো হয়েছে। তাঁদের আশঙ্কা, সংস্কার কাজ শুরু না হলে যে কোনও সময়ে বাংলোটি হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়বে। জেলার প্রবীণ ইতিহাসবিদ বৃন্দাবন ঘোষ কলকাতায় রাজ্য হেরিটেজ কমিশনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে প্রাচীন ঐতিহ্য বজায় রেখে দ্রুত বাংলোটি সংস্কারের দাবি জানান। জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |
উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তথা কংগ্রেস নেতা মোক্তার আলি সর্দার জানান, প্রাচীন ঐতিহ্য বজায় রেখে আমাদের পক্ষে ওই বাংলোটি সংস্কার করা সম্ভব ছিল না। তিনি বলেন, “সংস্কারের জন্য আমরা হেরিটেজ কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমরা জেলা পরিষদের ক্ষমতা হারানোয় সেই প্রক্রিয়া আটকে যায়।” জেলা পরিষদের বর্তমান সিপিএমের সভাধিপতি লাডলি চৌধুরী জানান, বাংলোটির সংস্কারের ব্যাপারে তিনি উদ্যোগী হবেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ১৮৬৫ সালে মালন এলাকায় ইংরেজদের উদ্যোগে প্রায় দুই বিঘা জমির ওপর টিনের চালা দেওয়া ইঁটের তৈরি প্রায় ১৫ ফুট উঁচু দুটি বাংলো গড়ে ওঠে। দুটি বাংলোরই ৫টি করে ঘর, কাঠের তৈরি ৫টি করে দরজা ও ৭টি করে জানালা ছিল। প্রশাসনিক কাজ দেখতে যাওয়া ইংরেজ আধিকারিকদের থাকার জন্য বাংলোগুলি তৈরি করা হয়েছিল। খাজনা আদায়কারীরা থাকতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মালন এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চিহ্নিত হওয়ায় বিএসএফের জওয়ানরা বাংলোগুলিতে ক্যাম্প করে থাকতে শুরু করেন। স্থায়ী ক্যাম্প তৈরি হওয়ায় ১৯৯০ সালে বিএসএফ বাংলোগুলি ছেড়ে দেয়। সংস্কারের অভাবে ২০০৯ সালে একটি বাংলো ভেঙে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা দিলওয়ার হোসেন, বিমল বর্মন কিংবা মহম্মদ রবিউল্লা ও নরুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের কাছে একাধিকবার পুরনো ঐতিহ্য বজায় রেখে বাংলোটির সংস্কার করার দাবি জানালেও কোনও লাভ হয়নি। অবিলম্বে সংস্কারের কাজ শুরু না করলে বাংলোটি ভেঙে পড়বে। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী রুমনা খাতুন ও ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র বিপ্লব বর্মন এ দিন বলে, “কিছুদিন ধরে মাঝেমধ্যেই বাংলোর দেওয়ালের ইট খসে পড়ছে। তাই বড় কোনও দুর্ঘটনার ভয়ে আমরা বাংলো চত্বরে খেলাধূলাএ কমিয়ে দিয়েছি।” ইতিহাসবিদ বৃন্দাবনবাবুর দাবি, তিনি ইংরেজ আমলে তৈরি পরিত্যক্ত ওই বাংলোটির ছবি, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও বিবরণ সহ হেরিটেজ কমিশনের কাছে সংস্কারের আবেদন পাঠিয়েছেন। |