ডাক্তারের দেখা নেই, মেঝেয় বসে রোগীরা |
নীলোৎপল রায়চৌধুরী • আসানসোল |
ঘড়িতে তখন সকাল ১১টা। বহির্বিভাগে সাধারণ চিকিৎসা ও হোমিওপ্যাথি ছাড়া কোনও বিভাগে তখনও কোনও ডাক্তার আসেননি। বাইরে ভিড় করেছেন রোগীরা। তাঁদের বসার জন্য আবার কোনও চেয়ার বা বেঞ্চ নেই। অনেকেই মাটিতে বসে অপেক্ষা করছেন।
বৃহস্পতিবার সকালের এই দৃশ্য আসানসোল হাসপাতালের। রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের অভিযোগ, এই পরিস্থিতি শুধু এ দিনের নয়, মাঝে-মধ্যেই দেখা যায় এমন দৃশ্য। শুধু চিকিৎসকের দেখা না মেলাতেই সমস্যার শেষ নয়, জেলা স্তরে উন্নীত এই হাসপাতালে সমস্যার শেষ নেই। রোগী দেখানোর জন্য টিকিট কাটার পর্যাপ্ত কাউন্টারের অভাব থেকে শুরু করে গাড়ি রাখার জায়গা, সমস্যার ইতি নেই এই হাসপাতালে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বহির্বিভাগে রোগী দেখাতে যে টিকিট কাটতে হয়, সে জন্য মোট পাঁচটি কাউন্টার তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে চালু রয়েছে মাত্র দু’টি। কম্পিউটারের অভাবে বাকি তিনটি কাউন্টার এখনও চালু করা যায়নি বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি। কিন্তু এর ফলে বিপাকে পড়তে হচ্ছে রোগীদের। পুলিশের দাবি, এর জন্য তাদের বেশি অসুবিধায় পড়তে হয়। কারণ, কোনও আসামীকে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গেলে সঙ্গে থাকেন দু’জন পুলিশকর্মী। এক জন টিকিট কাটার কাজে বেশ কিছুক্ষণ ব্যস্ত থাকলে আসামীর উপরে নজর রাখার জন্য থাকেন মাত্র এক জন পুলিশকর্মী। কোনও ক্ষেত্রে একাধিক আসামীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ। |
রোগী ও তাঁদের আত্মীয়দের অভিযোগ, বর্হিবিভাগে দু’টি শৌচাগার ব্যবহারের অযোগ্য। চিকিৎসার জন্য আসা মানুষজনের দাবি, তাঁদের প্রায় দু’শো মিটার দূরে মর্গের কাছে সুলভ শৌচালয় ব্যবহার করতে যেতে হয়। বয়স্ক মানুষজন বেশ অসুবিধায় পড়েন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, দিনে গড়ে ৭০০ মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন এখানে। কিন্তু অনুসন্ধান কেন্দ্র খোলে না।
হাসপাতালে দু’চাকার যানবাহনের জন্য পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও অন্য গাড়ির জন্য তা নেই। নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে গাড়ি রাখেন অনেকে। কখনও কখনও ভিড় ঠেলে রোগীকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে বেগ পেতে হয় বলে অভিযোগ। হাসপাতালের কর্মী সংগঠনের সদস্যদের দাবি, হাসপাতাল জেলা স্তরে উন্নীত হওয়ার ফলে রোগীর আনাগোনা অনেক বেড়ে গিয়েছে। জরুরি বিভাগে একটিই শয্যা। চিকিৎসকও এক জন। ফলে, বেশি রোগী একই সময়ে এলে চিকিৎসককে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
সমস্যা আরও রয়েছে। চর্ম এবং দাঁতের চিকিৎসক না থাকায় ওই দু’টি বিভাগ দীর্ঘ দিন বন্ধ। জননী সুরক্ষা যোজনার সুফল সবাই পান না বলেও দাবি অনেক প্রসূতির পরিবারের। হাসপাতালের কর্মীদের থেকে জানা যায় জানান, একটি অ্যাম্বুল্যান্স ঠিকায় চলে। প্রায় সময়ই ঠিকাদার সেটি অন্যত্র ভাড়ায় পাঠিয়ে দেন। অভিযোগ, অন্তঃসত্ত্বাদের সপ্তাহে ছ’দিন পরীক্ষা করানোর জন্য দফতর থাকলেও তিন দিনের বেশি সেটি খোলে না। ট্রমা সেন্টার নির্মাণের কাজ শেষ হয়নি। অথচ ৭০ লক্ষ টাকা দামের একটি অ্যাম্বুল্যান্স বছরখানেক আগেই আনা হয়েছে। সেটিকে রোদ-জল থেকে বাঁচাতে একটি প্লাস্টিকের আচ্ছাদন দেওয়া হয়েছিল, যার অর্ধেক ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। হাসপাতালের দক্ষিণ দিকের পাঁচিল ভেঙে পড়েছে। সেই জায়গা এখন মহিশীলা কলোনি যাতায়াতের রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করেন বাসিন্দারা। হাসপাতালে কোনও পুলিশ ক্যাম্প না রাখা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। হাসপাতালের কর্মচারী সংগঠনের সম্পাদক সুকান্ত দাশগুপ্ত জানান, তাঁরা বারবার এই সব সমাধানে নানা স্তরে স্মারকলিপি দিয়েছেন। কর্মীর অভাব না মিটলে কোনও সমস্যা মিটবে না বলে দাবি তাঁর।
হাসপাতালের সুপার নিখিল চন্দ্র দাস জানান, আসামী নিয়ে এসে সমস্যায় পড়ার বিষয়টি পুলিশকর্মীরা সপ্তাহখানেক আগে জানিয়েছেন। তিনি তাঁদের সংশ্লিষ্ট বিভাগে সরাসরি যোগাযোগ করে টিকিট সংগ্রহ করতে বলেছেন। সুপার আরও জানান, জেলা হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার জন্য পরিকাঠামোয় যা যা প্রয়োজন, সে সব করা হয়েছে। রোগীদের অপেক্ষা করার জন্য ভাল ব্যবস্থা থেকে কর্মীর অভাব মেটানো, শীঘ্রই সব হবে বলে আশ্বাস তাঁর। আসানসোলের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মনিকাঞ্চন সাহা বলেন, “ডাক্তারদের ঠিক সময়ে না আসা-সহ নানা সমস্যা মেটাতে পরিকল্পনা হয়েছে। দ্রুত সমাধান হবে।” |