বহু জীবনদায়ী ওষুধ অমিল,
সঙ্কটে সদর হাসপাতাল
দীর্ঘদিন ধরে মিলছে না হাসপাতালের জন্য কয়েকটি প্রয়োজনীয় ওষুধ। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট জায়গায় বারবার তদ্বির করেও সমস্যার সমাধান হয়নি বলেই অভিযোগ। অথচ জেলার সদর হাসপাতালের এই সমস্যার খবর জানা নেই খোদ বীরভূমের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছেই। উল্টো দিকে, সমস্যা মেটাতে সিএমওএইচকেই কড়া ভাবে নিদের্শ দিয়েছেন জেলার রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তবে দাবি আর পাল্টা দাবির মাঝে পড়ে আসল সমস্যার সমাধান কবে হবে, তার কোনও উত্তর মিলছে না।
এ দিকে আবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের রিজার্ভ স্টোর এ ব্যাপারে হাত উপরে করে দিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, জেলা ওষুধ সরবরাহ কেন্দ্র বা ‘ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ স্টোর’ (ডিআরএস) থেকে ওষুধ পাওয়ার জন্য আগে থেকে ‘ইনডেন’ বা ওষুধের চাহিদা পাঠাতে হয়। সিউড়ি সদর হাসপাতাল গত এপ্রিল মাসে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জীবনদায়ী ওষুধের চাহিদা জানিয়ে সেখানে চিঠি দিলেও তা এখনও এসে পৌঁছয়নি। কিন্তু ওই ওষুধগুলি এখন পাওয়া যাবে না বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীদের একাংশের দাবি, মাসখানেক আগে ওই স্টোরের জন্য বহু ওষুধ প্রয়োজনের অতিরিক্ত কেনা হয়েছিল। তাই ওই স্টোর এখন নতুন করে কোনও ওষুধ কিনতে পারছে না। তাঁদের ওই দাবিকে সমর্থন করেছেন চন্দ্রনাথবাবুও।
প্রসঙ্গত, গত সেপ্টেম্বরেই বীরভূমের ডিআরএস-এর জন্য কেনা ওষুধের ক্ষেত্রে ঘোরতর অনিয়মের চিত্রটি উঠে এসেছিল। একটি বিশেষ ইঞ্জেকশন যা সংখ্যায় দু’ হাজারটি থাকলেই সিউড়ি হাসপাতালের প্রয়োজন মেটে, কেনা হয়েছিল প্রায় ১২ গুন বেশি। আবার অন্য একটি ওষুধের একটিও প্রয়োজন না থাকলেও হাসপাতালকে পাঠানো হয়েছিল ৩০ হাজার। একাধিক ওষুধ কেনার ক্ষেত্রে একই কাণ্ড দেখা গিয়েছিল। আরও অভিযোগ, ওই বিপুল পরিমাণ অতিরিক্ত ওষুধের বেশির ভাগই ছিল মেয়াদ পেরনোর মুখে। শুধু সিউড়িই নয়, জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অতিরিক্ত পরিমাণ ওষুধ কিনে সরবরাহ করা হয়েছে বলে দাবি করেছিল বীরভূম জেলা র্ফামাসিস্ট অ্যাসোসিয়েশনও। গোটা ঘটনায় লক্ষ লক্ষ টাকার দুর্নীতির আশঙ্কাও তাঁরা করছিলেন। জেলার সিএমওএইচ কার্তিক মণ্ডল অভিযোগ খতিয়ে দেখার কথা বললেও তার পরিপ্রক্ষিতে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি। স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্তদের একটা বড় অংশেরই দাবি, বর্তমানে বেশ কিছু ওষুধ অমিলের ক্ষেত্রে ডিআরএস-এর জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত ওষুধ কেনাই দায়ী।
সিউড়ি সদর হাসপাতাল সূত্রে খবর, হাসপাতালে এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ অনেক দিন ধরেই মজুদ নেই। ওই রকম কিছু ওষুধের একটি ব্যাথার ইঞ্জেকশন ‘ডাইক্লোফেলাক সোডিয়াম’। ৫ হাজার চাওয়া হয়েছিল, একটিও পাওয়া যায়নি। তেমনই হৃদরোগে আক্রান্তদের ‘ম্যানিটল স্যালাইন’ চাওয়া হয়েছিল ১২৫০টি। একটিও মেলেনি। আবার অ্যান্টিবায়েটিক ইঞ্জেকশন ‘সেফ্টরিঅ্যাকজোন’-এর চাহিদা ২৫০০০ হলেও পাওয়া গিয়েছে মাত্র ৫০০। যা মজুদে রাখার দু’ সপ্তাহের মধ্যেই নিঃশেষ হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে বহুবার জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোনও উপায় হয়নি বলেই অভিযোগ। যদিও কার্তিকবাবু সাফ জানাচ্ছেন, “আমার কাছে এ নিয়ে কোনও খবর নেই। সিউড়ি সদর হাসপাতাল আমাদের কখনই ওষুধের ব্যাপারে কিছু জানায় না।” কিন্তু উল্টো সুর গাইছেন সদর হাসপাতারের সুপার অসিত বিশ্বাস। তাঁর আবার দাবি, “ওষুধ অমিলের কথা জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে আগেই জানানো হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক কিছু হয়নি। যার জেরে হাসপাতালে মজুদ না থাকায় গরিব মানুষ বাধ্য হয়ে বাইরে থেকে ওই সব গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ কিনছেন।” ওই সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে সিউড়ি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর আত্মীয়, খয়রাশোলের বাসিন্দা জাহির শেখ বললেন, “চিকিৎসক যে ওষুধগুলি চেয়েছিলেন, তার একটা বড় অংশই হাসপাতালে পাইনি। আমাদের বাইরের দোকান থেকে অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয়েছে।” একই অভিজ্ঞতা হয়েছে মহম্মদবাজারের পূর্ণিমা মেটেরও।
বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত ক্ষুব্ধ জেলা রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি পদে সদ্য যোগ দেওয়া মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তিনি বলেন, “সিউড়ি সদর হাসপাতাল-সহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ওষুধ নেই। এ ব্যাপারে জেলার সিএমওএইচকে সতর্ক করা হয়েছে।” মন্ত্রীর ক্ষোভ, “অপ্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ কিনতেই জেলার ওষুধ দফতরের ভাণ্ডার শেষ। কার্তিকবাবুকে স্পষ্ট করে বলেছি, এ সব শুনে আমার লাভ নেই। হাসপাতালগুলির জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধের কী ভাবে বন্দোবস্থ করবেন, সেটা আপনার ব্যাপার।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.