কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন হাওড়ার ঊর্মিলা দে। কিন্তু সন্তান-সহ বাড়ি ফেরার পরেও পেটের ব্যথা কমছিল না তাঁর। বরং সেলাইয়ের জায়গা থেকে ক্রমাগত রক্ত এবং পুঁজ বেরোচ্ছিল। অভিযোগ, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তারদের বহু বার বলার পরেও কোনও ফল হয়নি। শেষে স্থানীয় এক চিকিৎসককে দেখান ওই সদ্যপ্রসূতির পরিবার।
সেই চিকিৎসকই বৃহস্পতিবার ঊর্মিলার পেট থেকে বার করেন এক বান্ডিল গজ।
ওই গজ বার করার অস্ত্রোপচারটি করা হয়েছে বেলুড়ের একটি নার্সিংহোমে। ওই নার্সিংহোম সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একটি কন্যাসন্তান হয় বেলুড় ভোটবাগানের বাসিন্দা বছর সাতাশের উর্মিলার। ওই মাসেরই ১২ তারিখ তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। তার পরে গত বুধবার তাঁর পেটে অস্ত্রোপচার করে গজ বার করেন স্থানীয় চিকিৎসক আর এস মালাকার। সিজারিয়ান পদ্ধতিতে প্রসবের পরে প্রসূতির পেটে গজ-ব্যান্ডেজ থেকে যাওয়ার ঘটনা সম্প্রতি ঘটে কৃষ্ণনগর সদর হাসপাতালে। সেখানে কামারুন্নেসা বিবি নামে এক প্রসূতির পেটে গজ-ব্যান্ডেজ থেকে যাওয়ায় তাঁরও একই অবস্থা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করে তাঁর পেট থেকে গজ-ব্যান্ডেজ বার করা হয়।
ঊর্মিলা বলেন, “প্রসবের সময়ে যে জায়গায় অস্ত্রোপচার হয়েছিল, বাড়ি ফেরার পর থেকে সেখানে প্রথমে হাল্কা যন্ত্রণা শুরু হয়। কয়েক সপ্তাহ পরে যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। পরে দেখা যায় পুঁজ, রক্ত বেরোচ্ছে।” তাঁর স্বামী উত্তম দে-র অভিযোগ, তিনি বারবার মেডিক্যাল কলেজের বহির্বিভাগে যান চিকিৎসার জন্য। কিন্তু চিকিৎসকেরা গুরুত্ব না দিয়ে কয়েকটি মলম লিখে ছেড়ে দেন। উত্তমবাবু বলেন, “আমি স্ত্রীকে নিয়ে শেষ বার মেডিক্যালে যাই ২৫ অক্টোবর। তখনও চিকিৎসকেরা কিছু করেননি। এর পরে বেলুড়ের চিকিৎসক আর এস মালাকারকে দেখাই। তিনিই বুধবার অস্ত্রোপচার করে গজ বার করেন।”
উত্তমবাবু জানান, তাঁর স্ত্রী এখন ভালো আছেন।
ওই চিকিৎসক বৃহস্পতিবার বলেন, “মনে হয় অস্ত্রোপচারের পরে সেলাইয়ের সময়ে গজটা থেকে গিয়েছিল। এমন ভুল কী ভাবে একটা মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তার করলেন, বুঝতে পারছি না।”
উত্তমবাবুরা গোটা ঘটনাটি মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছেন। তাঁদের দাবি, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজের সুপার দিব্যেন্দু গৌতম বলেন, “কোনও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। তবে বিষয়টি গুরুতর। প্রমাণ পেলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” |