বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি কাণ্ডে অভিযুক্ত শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকারের বিপুল সম্পত্তির সঙ্গে আয়ের অসঙ্গতির অভিযোগে পুলিশ মামলা করেছিল। বৃহস্পতিবার আদালতে ওই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মৃগাঙ্কবাবুকে জেল হেফাজতেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। তা মঞ্জুরও হয়েছে। বর্তমানে এসজেডিএ’র বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতির কয়েকটি মামলায় ওই বাস্তুকার জেল হেফাজতে রয়েছেন। তাঁর আয়ের সঙ্গে সম্পত্তির অসঙ্গতি নিয়ে শিলিগুড়ি থানায় করা ওই মামলায় পুলিশ মৃগাঙ্কবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিতে চায়। ওই মামলায় এখনও পুলিশ মৃগাঙ্কবাবুকে গ্রেফতার করেনি।
পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “ওই আধিকারিকের আয়ের সঙ্গে তাঁর সম্পত্তির হিসেবের অসঙ্গতি রয়েছে। তা নিয়ে পুলিশের তরফে একটি আলাদা মামলা করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই তাঁর দুটি ফ্ল্যাট-সহ বিভিন্ন সম্পত্তির হদিস মিলেছে। তদন্তের স্বার্থে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। সে জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে। আদালত তা মঞ্জুর করেছে।”
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি-সহ বাগডোগরা, মালবাজার, ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর প্রকল্পে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতি নিয়ে এসজেডিএ-র তরফে প্রধাননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ এসজেডিএ’র ৩ বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পাল এবং প্রবীণ কুমারকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতার করা হয় বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থার কর্মকর্তা-সহ আরও ৬ জনকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে মৃগাঙ্কবাবুর সঙ্গে তাঁদের আর্থিক লেনদেনের বিভিন্ন তথ্য পায় পুলিশ। শরৎ বসু রোডে মৃগাঙ্কবাবুর একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে দুই দফায় তল্লাশি চালায় তারা। বহুমূল্য মার্বেল, স্নানের জন্য ‘জাকুজি’ ব্যবস্থা-সহ বহু মূল্যের সমগ্রী দিয়ে যে ভাবে ঘর সাজানো হয়েছে, তা ওই বাস্তুকারের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতি পূর্ণ নয় বলেই পুলিশ মনে করছে। একটি বিলাস বহুল নতুন গাড়িও রয়েছে তাঁর। স্ত্রী এবং নিজের নামে অন্তত ২২টি বিমা রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থায় মোটা টাকার ‘বন্ড’ কেনা রয়েছে। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোটা টাকা রয়েছে। এ সব ব্যায়ের সঙ্গে তাঁর আয়ের সামঞ্জস্য নেই। এ সব জানার পরেই পুলিশের তরফে আলাদা করে একটি মামলা দায়ের করা হয়। তা ছাড়া স্ত্রী এবং নিজের নামে একাধিক জায়গায় জমি কিনতেও অগ্রিম টাকা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ঠিকাদারদের একাংশ এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করেছেন বলেও পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে।
সরকারি আইনজীবী সুদীপ বসুনিয়া জানিয়েছেন, এ দিন পুলিশের তরফে মৃগাঙ্কবাবুকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবেদন করলে তা মঞ্জুর হয়েছে। মৃগাঙ্কবাবুর আইনজীবী পার্থ চৌধুরী জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এসজেডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃগাঙ্কবাবু এসজেডিএ’র অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। পরে তিনি এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র পদে উন্নীত হন। এসজেডিএ’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য জোড়াপানি নদী সংস্কারের কাজ নিয়ে যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন সেই কাজেও মৃগাঙ্কবাবুর বিরুদ্ধে প্রশ্ন ওঠে। এর পরে তাঁর পদাবনতি করা হয়।
অন্য দিকে শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজে অভিযুক্ত ঠিকাদার দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ৯০ দিনের বেশি জেল হেফাজতে ওই মামলায় তিনি এ দিন জামিন পান। কোনও মামলায় অভিযুক্ত জেল হেফাজতে থাকার ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশ চার্জশিট দিতে না পারলে নিয়ম মতো তিনি জামিন পান। এসজেডিএ’র বিভিন্ন প্রকল্পে দুর্নীতির মামলায় জেল হেফাজতে রয়েছেন ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার শঙ্কর পাল। এই পরিস্থিতিতে অন্য অভিযোগে তাকে গ্রেফতার দেখাতে হলে যে সমস্ত মামলায় তিনি জেল হেফাজতে রয়েছেন তার মধ্যে সে কোনও একটি উল্লেখ করতে হয়। অথচ যে মামলায় তিনি ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছেন তা উল্লেখ করে অন্য অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার দেখানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শঙ্করবাবুর আইনজীবী। সরকারি পক্ষ্রে আইনজীবী ওই ভুল সংশোধনের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। |