দেদার বদলির অনুমোদন মেলায় শিলিগুড়ি মহকুমার অন্তত ৪টি প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাতাসির টোপর সিংহ জোত প্রাথমিক স্কুল এবং আন্ধারুজোত প্রাথমিক স্কুলে ৩ জন করে শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের সকলেরই বদলির অনুমোদন মিলেছে। ২ জন করে শিক্ষক ওই দুটি স্কুল থেকে অন্য স্কুলে চলেও গিয়েছেন। এক জন করে টিচার ইনচার্জ রয়ে গিয়েছেন। চেয়ারম্যানের বদলির অনুমোদন পত্র তাঁদের কাছে-ও রয়েছে। সেই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে ওই সার্কেলের আধিকারিকদের। পরিস্থিতির কথা ভেবে আপাতত তিনি টিচার ইনচার্জদের বদলির নির্দেশ কার্যকর করেননি। মঙ্গলবার পর্যন্ত পুজোর ছুটি ছিল স্কুলগুলিতে। বুধবার কিছু স্কুল খোলে। বৃহস্পতিবার থেকে খুলেছে অন্যগুলি। তবে এ দিন পর্যন্ত সকলের বদলির নির্দেশ কার্যকর হয়নি।
প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের আধিকারিকরা প্রাথমিক ভাবে জানতে পেরেছেন, নেতাজি বয়েজ প্রাথমিক স্কুলে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে অন্তত ৩৭ জন শিক্ষক এই স্কুলে বদলির অনুমতি পত্র পেয়েছেন। তবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাঁদের ৪ জন বদলি হয়ে স্কুলে যোগ দিয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের এক আধিকারিক বলেন, “তাঁদের আশঙ্কা যে হারে বদলির অনুমতি দেওয়া হয়েছে তাতে অনেক স্কুলই শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়বে। আবার দেখা যাবে শহরের কোনও স্কুলে সেখানে ৫ জন শিক্ষক দরকার সেখানে ১০ জন হয়ে গিয়েছে।” অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সমর চক্রবর্তী জানিয়েছে, বদলির অনুমোদন কার্যকর করার ক্ষেত্রে কোনও স্কুল যাতে ফাঁকা না হয় তা দেখা দরকার। কোথায় কতজন বদলি হচ্ছে বিভিন্ন সার্কেল থেকে রিপোর্ট পেলে সেই অনুসারে সব দেখে শুনেই অনুমোদন কার্যকর করতে হবে।
সংসদ সূত্রেই জানা গিয়েছে, বদলির নির্দেশ কার্যকর হলে দেখা যাবে বিধাননগর সার্কেল, বাতাসি সার্কেলের কয়েকটি স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক কেউ থাকবেন না। বিধাননগর সার্কেলের অভিরামজোত প্রাথমিক স্কুলে ৩ জন শিক্ষকের মধ্যে ২ জন স্থায়ী শিক্ষক। এক জন আংশিক সময়ের শিক্ষক। স্থায়ী শিক্ষকদের এক জন টিচার ইন চার্জ। স্থায়ী দুই শিক্ষকই বদলির অনুমোদন পেয়েছেন। একই পরিস্থিতি ননুজোত প্রাথমিক স্কুলের। তাদের দুই জন স্থায়ী শিক্ষক। দু জনেই বদলির অনুমোদন পেয়েছেন। তারা চলে গেলে আংশিক সময়ের এক জন মাত্র শিক্ষক থাকবেন স্কুল চালানোর জন্য।
বদলির নির্দেশ কার্যকর হলে কোন প্রাথমিক স্কুলে কত জন শিক্ষক-শিক্ষিকা থাকবেন সেই হিসাব এখনও মেলাতে পারছেন না প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের আধিকারিকরা। কেন না বদলি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনও তালিকা করা হয়নি। শিক্ষক, শিক্ষিকারা ব্যক্তি বিশেষে প্রত্যেকেই আলাদা ভাবে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে বদলির অনুমতি নিয়েছেন। সংসদেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, শিলিগুড়ির ৪০০টি প্রাথমিক স্কুল ৬টি সার্কেলে ভাগ করা। সেগুলিতে প্রায় ১৫০০ শিক্ষকও রয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০০ জনেরও বেশি জনকে বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্কুলগুলির পরিস্থিতি নিয়ে আগামী সোমবারের মধ্যে সার্কেলের দায়িত্বে থাকা আধিকারিকরা রিপোর্ট দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বদলির অনুমতি পেলেও এখনও অনেক শিক্ষক, শিক্ষিকা বদলির নির্দেশ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সার্কেলের আধিকারিকের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাঁরা অনেকেই পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন।
পড়ুয়া অনুপাতে স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকা ভাগ করতে সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সেই কাজ করা হয়নি। ২৫ অক্টোবর একটি শিক্ষক সংগঠনের ১৫ জনকে বদলির অনুমোদন দেওয়া নিয়ে অন্য সংগঠনের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সরব হন। তাঁরা চেয়ারম্যানের দফতরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখান। তাদের সঙ্গে আলোচনার সময় অপর শিক্ষক সংগঠনের নেতা সদস্যরা বাধা দিলে গোলমাল হয়। ভাঙচুর করা হয় সংসদের দফতরে। ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত শিলিগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান পদে ছিলেন সমরবাবু। অভিযোগ, বিপাকে পড়ে শেষ দিন গভীর রাত পর্যন্ত নিজের বাড়িতে বসে চেয়ারম্যান দেদার বদলির অনুমতি দেন। সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ বোর্ডের দুই জন সদস্যও ছিলেন। সব দেখে শুনে সেই কাজ গুছিয়ে করে উঠতে না পারার জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেছেন। |