বন্ধ বাগান, কাজ খুঁজতে অন্য রাজ্যে শ্রমিকেরা
লাল রঙের সিটি অটোর ভিতরে ঠাসাঠাসি ভিড়। মাথায় ব্যাগের স্তূপের উপরেও চড়ে অনেকে। দরজা, জানলা এমনকী পিছনেও ঝুলছেন অনেকে। বাগানের রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে অটো চলে যেতেই অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাদের কেউ আঁচল দিয়ে চোখ মুছছেন। কেউ অস্পষ্ট হয়ে যাওয়া অটোর দিকে হাত নেড়েই চলেছেন।
ভিন্ রাজ্যে কাজ খুঁজতে যাওয়া স্বামী-ছেলেদের বিদায় দেওয়ার এই দৃশ্য জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রায়পুর চা বাগানে প্রায় রোজকার ঘটনা। ষষ্ঠীর দিন বাগান ছেড়ে চলে যান মালিকপক্ষ। তার পর থেকেই কাজের খোঁজে শ্রমিকরা বাগান ছাড়তে শুরু করেছেন বলে বাগান সূত্রেরই খবর। বৃহস্পতিবার বাগানের ভুঁইয়া লাইনে ২৮ জন শ্রমিক দল বেঁধে কাজের খোঁজে দিল্লি রওনা হন। বাগান সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার ১০ জন শ্রমিক কেরলে গিয়েছেন। এলাকার পঞ্চায়েত তথা বাগানের বাসিন্দা প্রধান হেমব্রম জানালেন, গত চার দিনে অন্তত ৮০ জন শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা কাজের খোঁজে অন্যত্র চলে গিয়েছেন।
মালিকপক্ষ চলে যাওয়ার পরে অস্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে এলাকার পঞ্চায়েত সদস্যকে সম্পাদক করে শ্রমিকরাই কমিটি গড়ে পাতা তুলে বিক্রি শুরু করেছেন। সেই আয় ভাগ করে নিচ্ছেন শ্রমিক ও বাগান কর্মীরা।

বৃহস্পতিবার বন্ধ রায়পুর চা বাগান ছেড়ে চলে গেলেন একদল শ্রমিক। —নিজস্ব চিত্র।
তা হলে বাগান ছাড়ার প্রবণতা কেন? শীতের শুখা মরসুম শুরু হয়ে যাওয়ায় চলতি মাসের শেষের দিক থেকেই চা-পাতা ওঠা বন্ধ হয়ে যাবে। সে কথা ভেবে আতঙ্কিত শ্রমিকেরা। প্রধানের কথায়, “বাগানে মালিক নেই। শীতের সময় পাতা তোলা বন্ধ হয়ে গেলে কী হবে সেটা ভেবেই অনেকে দুশ্চিন্তায়। শতাধিক বাসিন্দা ভিন্ রাজ্যে যাওয়ার জন্য পাকা কথা সেরে রেখেছেন।” এ দিন দিল্লি রওনা হওয়া বাগানের শ্রমিক ধনসিংহ ওঁরাওয়ের স্ত্রী সাবিত্রী দেবী বললেন, “প্রথমে খুব কান্নাকাটি করেছিলাম। কিন্তু না গেলে টাকা আসবে কোথা থেকে? তাই আর আপত্তি করিনি।”
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে চার বছর আগে রায়পুর চা বাগান ফের খুলে যায়। শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রায় দেড় মাসের মজুরি-বেতন এবং পুজোর বোনাস বকেয়া রেখে ১০ অক্টোবর রাতে বাগান ছেড়ে মালিকপক্ষ চলে যান। যদিও মালিকপক্ষের তরফে অবশ্য শ্রমিকদের একাংশের অসহযোগিতা এবং আর্থিক ক্ষতির অভিযোগ তোলা হয়েছে।
শ্রমিক কমিটির সদস্য সোনিয়া ভুমিচ বলেন, “বকেয়া না দিতে পেরেই মালিকপক্ষ চলে গিয়েছেন। দু সপ্তাহ গেলেই আর পাতা উঠবে না। তখন চলবে কী ভাবে? জেলাশাসকের দফতরে পুরো পরিস্থিতি জানিয়েছি। তবু এখনও কোনও আশ্বাস মেলেনি।” জলপাইগুড়ির সদর মহকুমাশাসক সীমা হালদার বলেন, “বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে. সমস্যা মেটানোর প্রক্রিয়া চলছে।”
জলপাইগুড়ির উপ শ্রম আধিকারিক সন্দীপ নন্দী জানান, গত মাসে বৈঠকে মালিকপক্ষকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা হাজির না হওয়ায় বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি। বাগানের পরিচালন সংস্থার অন্যতম কর্ণধার রাইমোহন সাহা পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, “চলতি বছরের শুরু থেকেই শ্রমিকদের একাংশের নিজেদের মধ্যে বিরোধের কারণে পরিচালনার কাজে সমস্যা তৈরি হয়। একাংশ শ্রমিক কাজ পুরো দিনের কাজ করত না। প্রায় ৩৯ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়। তবে আমরা দ্রুত অর্থ জোগাড় করে বাগান খোলার চেষ্টা করছি।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.